বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে

 ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ 
০৩ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) জন্য যে বাজেট প্রস্তাবনা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা এমন এক সময় প্রণয়ন করা হয়েছে, যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। নানা ধরনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি এখনো তিন বছর ধরে চলা করোনা অতিমারির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে ২০২২ সালের সূচনালগ্নে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

এ যুদ্ধ যে এতটা দীর্ঘমেয়াদি হবে তা অনেকেই অনুধাবন করতে পারেননি। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব হয়েছে অতি ভয়ংকর। এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। পালটা ব্যবস্থা হিসাবে রাশিয়া ইউরোপীয় দেশগুলোতে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয় অথবা কমিয়ে দেয়।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হয়। যুদ্ধরত দেশ দুটির কোনোটিই তাদের উৎপাদিত খাদ্যপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করতে পারেনি। বিশেষ করে ইউক্রেন। রাশিয়া ও ইউক্রেন মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ৩০ শতাংশ খাদ্যের জোগান দিয়ে থাকে। আর রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের এক-দশমাংশের জোগান দেয়। রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো তেলের উত্তোলন কমিয়ে দেয়।

ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। একপর্যায়ে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ১৩৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। এখন অবশ্য তা ৭০ ডলারে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রায় চলে যায়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়, যা ছিল দেশটির ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।

এ মুহূর্তে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়ে দিয়ে বাজারে অর্থ সরবরাহ কমানোর উদ্যোগ নেয়। এতে দেশগুলোতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিল্প উৎপাদন কমে যায়। কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও পড়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতেই বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। যদিও উন্নত দেশগুলো নিজস্ব কৌশল প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। আগস্টে আমাদের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা এপ্রিলে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, তার পেছনে বৈশ্বিক কারণই মূলত দায়ী।

মূল্যস্ফীতির বৈশ্বিক কারণগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা হয়তো তেমন কিছু করতে পারব না। তবে অভ্যন্তরীণভাবে কিছু ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও সক্রিয় হতে হবে। আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। এটি অর্জন করতে হলে এখন থেকেই বিভিন্ন বাস্তবসম্মত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যারা সুযোগ পেলেই পণ্যমূল্য বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু বর্তমানে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়েছে, এই সুযোগে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে স্থানীয় একশ্রেণির ব্যবসায়ী বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে নিজেদের আখের গোছানোর চেষ্টায় রত রয়েছেন। তারা কৃত্রিমভাবে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের ঘাটতি সৃষ্টি করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং স্থানীয় বাজারে একশ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। কাজেই স্থানীয় অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। অন্যথায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নানা সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। করোনাকালে বিশ্ব অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল, তখনো বাংলাদেশ সম্মানজনক হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব অনুসারে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে আনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে সাড়ে ৬ শতাংশের কাছাকাছি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে তা ঠিক আছে। আমি মনে করি, লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে, যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অভ্যন্তরীণভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত পণ্য রপ্তানি আয়ের গতি গত কয়েক মাসে কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহও মন্থর হয়ে পড়েছে। এখানে সরকারের কিছু করণীয় আছে। ব্যবসায়ীদেরও করণীয় আছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে রপ্তানিকারকদের সহায়তা দেওয়া হতো এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) আওতায়। এ ফান্ডের আকার ছিল ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু ইডিএফের আকার পৌনে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কমিয়ে আনা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সৃষ্ট রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার কিছুটা কমানো হলেও এর বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে, যার নামকরণ করা হয়েছে প্রি-ফাইন্যান্সিং ফান্ড। ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদ হারে এ ফান্ড থেকে রপ্তানিকারকদের অর্থ দেওয়া হবে।

কাজেই বৈদেশিক মুদ্রায় রপ্তানিকারকদের দেওয়া তহবিলের পরিমাণ কমানো হলেও স্থানীয় মুদ্রায় তাদের নতুন ফান্ড থেকে অর্থের জোগান দেওয়া হবে। রপ্তানি যাতে কমে না যায় বরং বাড়ে, সে ব্যাপারে সরকার সজাগ রয়েছে। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়াতে। এজন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে রপ্তানি আরও বাড়ানো যায়। আন্তর্জাতিক চাহিদার দিকে নজর রেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে তার মূল্য নির্ধারণ করে আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রেতারা।

কাজেই অনেক সময় প্রচুর পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেও তুলনামূলক কম মূল্য পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের বড় ধরনের একটি সমস্যা রয়েছে, যা হলো পণ্য রপ্তানিকালে একশ্রেণির ব্যবসায়ী আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ বিদেশে রেখে দিচ্ছেন। আবার আমদানিকালে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বেশি অর্থ নিয়ে বিদেশে পাচার করছেন। এ কারণে যতটা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসার কথা তা আসছে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারেও সরকার সতর্ক রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বাংলাদেশ সাংঘাতিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে কোনো জটিল সমস্যায় পতিত হবে। গত মে-তে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে দেওয়া রিজার্ভ অর্থ বাদ দিলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ থেকে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রাপ্ত তথ্যমতে, আমাদের মাসিক আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ হচ্ছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অর্থাৎ বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কোনো দেশের ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলেই তা স্বস্তিদায়ক। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আমাদের উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের চেষ্টা করতে হবে কীভাবে আগামীতে রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে। একইসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

তবে আমাদের শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বাড়াতে হবে, যাতে শিল্পের উৎপাদন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ-প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে গেছে। মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানি ৫৬ শতাংশ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ৩১ শতাংশ কমেছে।

কাঁচামাল আমদানিও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এটি কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যাবে না। কারণ শিল্পের গতি যদি ঠিক না থাকে, তাহলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে না। দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই আমাদের যে কোনো মূল্যেই হোক শিল্প-কারখানার উৎপাদন ঠিক রাখতে হবে। দেশে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান সরকার যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে চলেছে, তা অব্যাহত রাখার জন্যও দ্রুত ও সুষম শিল্পায়ন প্রয়োজন।

ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। তবে আমাদের দেখতে হবে, ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের অর্থ যাতে শিল্প খাতে ব্যয় করা হয়। এ ঋণের অর্থ যেন অন্য কোনো খাতে প্রবাহিত করা না হয়। ঋণের অর্থ কেউ যাতে বিদেশে পাচার করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করতে হবে। আমাদের দেশে কোনো কোনো ব্যবসায়ীকে দেখা যায় বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে এক সময় বিদেশে চলে যান। এটা যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

একইসঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে অর্থ উপার্জন করছে, তা যাতে সঠিকভাবে বৈধ চ্যানেলে দেশে আসে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানা ধরনের নগদ আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে; কিন্তু তারপরও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এটি কেন হচ্ছে আমি জানি না। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো যেতে পারে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের উপার্জিত অর্থ যাতে বৈধ পথে দেশে প্রেরণ করে, তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেলে সেটি আমাদের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

কারণ, আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও খুবই কম। এটি বাড়ানো জরুরি। প্রস্তাবিত বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রহিত করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কারণ, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে তা প্রকারান্তরে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রহিত করায় তা দুর্নীতি রোধে সহায়ক হবে। আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হচ্ছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কৃষি খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে তামাকজাত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন পর্যায়ে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উপকারভোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি ইতিবাচক। অনুলিখন : এমএ খালেক

 

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : অর্থনীতিবিদ; চেয়ারম্যান, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

ঘটনাপ্রবাহ : বাজেট ২০২৩-২৪