চেতনায় বুদ্বুদ
গাজীপুরের নির্বাচন : ছোট্ট একটু বিশ্লেষণ
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট হয়ে গেল। স্থানীয় সরকারের ভোট হলেও এ ভোট বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে হালের সিটি নির্বাচনগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মূলত তিনটি কারণে। এক. কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটু সমালোচনায় পড়েছিল। অতএব, আবার নির্বাচন কমিশন একই কায়দায় কোনো ধরনের সমালোচনায় পড়ে যায় কিনা তা জনগণ সাগ্রহে দেখতে চেয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন কতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন করিয়ে দিতে পারে তা বড় বিবেচনায় ছিল।
গাইবান্ধায় উপনির্বাচনে কমিশন পুরো নির্বাচন বাতিল করে যে রেকর্ড করেছিল, তেমন কাঠিন্য সিটি নির্বাচনগুলোতে ধরে রাখতে পারে কিনা এটাও দেখার বিষয় ছিল। যদিও একসঙ্গে পুরো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা কমিশন হারাতে যাচ্ছে। দুই. বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী জনপ্রিয়তা মূল্যায়নের অবস্থা নিরূপণের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল এ নির্বাচনে।
মোট কত ভোট কাস্ট হয়, বিএনপি সমর্থকরা ভোট বর্জন করলেও আওয়ামী সমর্থক সব ভোটার ভোট দিতে যায় কিনা, অর্থাৎ নির্বাচনে ভোট প্রদানে যে একটা বড় অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে ভোটারদের, এটার কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা এ সিটি নির্বাচনে লক্ষ করা যাবে। তিন. মেয়র পদের মূল দুই প্রার্থীই মূলত আওয়ামী লীগের, আজমত উল্লা সরাসরি আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কায়, আর জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও সাবেক মেয়র আওয়ামী নেতা জাহাঙ্গীরের মা। এমন অবস্থায় দল হিসাবে আওয়ামী লীগ বেশি জনপ্রিয়, না বিদ্রোহী হলেও জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয় তা দেখার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এ নির্বাচনে। ব্যক্তির স্বাধীনতা আর দলীয় অধীনতা নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি ২৩ মে মঙ্গলবারের কলামে যুগান্তরে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচন সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলাম যে, আমাদের দেখতে হবে এখানে ব্যক্তি জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয়, না আওয়ামী লীগ। আরও উল্লেখ করেছিলাম যে, অবশ্যই আওয়ামী লীগের বদৌলতেই জাহাঙ্গীর জাতে উঠেছিলেন।
সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠানের পর আমরা দেখলাম যে, নির্বাচন কমিশন এবার উতরে গেল। কোনো ধরনের অপ্রিয় কাণ্ড ছাড়াই ভোট সম্পন্ন করতে পেরেছে কমিশন। নির্বাচনে ভোট প্রদানে ভোটারদের আগ্রহও একটু বেড়েছে দেখা গেল। আর ব্যক্তি জাহাঙ্গীর দৃশ্যত আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেলেন। এ তিনটি বিষয়ই আমরা একটু বিশ্লেষণ করে দেখতে চাই। নির্বাচনের পর হরেক রকম ব্যাখ্যা-আলোচনা-সমালোচনা প্রশংসার ঝড় তো বইছেই। মার্কিন ভিসানীতির প্রভাবও রয়েছে-এমন কথাও বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, নির্বাচন কমিশন গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই একটা বক্তব্যে প্রাধান্য দিয়েছে যে তারা ভোট সুষ্ঠু করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আমরা জানি, ভোট অনুষ্ঠানে মূল ভূমিকা থাকে জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনীতিকসহ তাদের সমর্থকদের। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে গাজীপুরের নির্বাচনে প্রচারের সময় কিছু আচরণ ভঙ্গ হলেও ভোটের সময় কোনো রাজনৈতিক পান্ডামি-মাস্তানি-গুন্ডামি এবার আমরা লক্ষ করলাম না। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকারও আলাদা একটা প্রভাব পড়েছে এ ভোটে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেহেতু সরকার পরিবর্তিত হয় না, সেহেতু বিএনপির ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে সরকার বা আওয়ামী লীগও এবার জেলা প্রশাসনে কোনো চাপ প্রয়োগ করেছে বলে মনে হয় না। ফলে নির্বাচন কমিশন স্বস্তিতেই নির্বাচনটা সেরে নিতে পেরেছে।
প্রথমবারের মতো পুরো ভোট ইভিএমে করে বিলম্বের জন্য সমালোচিত হলেও নতুনদের ইভিএমে আগ্রহী করেছে মনে হয়। তবে ইভিএমের ভোট প্রকাশেও অহেতুক বিলম্বের কারণে সন্দেহ জেগেছিল যে, জায়েদা খাতুনের এগিয়ে থাকা পরে পিছিয়ে যায় কিনা। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাতে আওয়ামী জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মূল সুযোগ কিন্তু প্রথমেই হাতছাড়া হয়ে গেছে, কারণ দেশে ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিই এখন বিবেচ্য। বাকি আধুলি, সিকি বা খুচরা পয়সার দলগুলো ভোটের হিসাবে ধর্তব্যে পড়ে না। কিন্তু বিএনপিবিহীন মোট ভোট কাস্টে আওয়ামী জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগটা কিছুটা হলেও নষ্ট হয়ে গেছে এজন্য যে, মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই তো আওয়ামী লীগের। জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র হলেও তিনি তো আওয়ামী পরিবারের। আবার প্রার্থী কাগজে কলমে মা জায়েদা খাতুন হলেও ভোট তো হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত আজমত উল্লা আর আওয়ামী-বিদ্রোহী স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীরের মধ্যে। ফলে আওয়ামী জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, আজমত উল্লা খানের ২,২২,৭৩৭ এবং জায়েদা খাতুনের ২,৩৮,৯৩৪ ভোটের সবই আওয়ামী ভোট-কিন্তু এটা একটা সহজ সমীকরণ হতে পারে মাত্র।
প্রকৃত পক্ষে অবস্থাটা এমন যে, আজমত উল্লার সব ভোটই আওয়ামী লীগের ভোট, জাহাঙ্গীরের তথা জায়েদা খাতুনের সব ভোট শুধু আওয়ামী লীগের নয়, এখানে বিএনপির ভোটও রয়েছে। এটা চাউর আছে যে, আওয়ামী প্রার্থী আজমত উল্লাকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে অজনপ্রিয় প্রমাণের জন্য বিএনপি সমর্থকরা জাহাঙ্গীরকে পছন্দ করেছেন। এমন শোনা কথা একেবারে অবিশ্বাস্য নয়। তারপরও মোট কাস্ট ভোটের শতকরা হিসাবে বিএনপির সমর্থিত কিছু ভোট বাদ গেলেও আওয়ামী লীগ এখনো জনপ্রিয়। আজমত উল্লার হারে আওয়ামী নেতাদের বেশ ভূমিকা রয়েছে মর্মে স্থানীয়ভাবে শোনা যায়। কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেছেন, মেহের আফরোজ চুমকি, রাসেল এবং মোজাম্মেল সাহেবরা আজমত উল্লার জন্য যতটা সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন ছিল ততটা হননি। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও জাহাঙ্গীরের প্রতি নরম মন অনেকের ছিল। জাহাঙ্গীরের প্রচারের এবং আগের কাজেও অনেকে খুশি ছিলেন।
আজমতের এলাকা টঙ্গী ছাড়া বাকি বড় এলাকায় জাহাঙ্গীর বেশ জনপ্রিয় ছিলেন এবং তার এলাকায় ভোটারও অনেক বেশি ছিল। তবে একজন ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটা বড় মারাত্মক মন্তব্য করেছেন, সরকার এবং আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের টোপে ফেলার জন্য কৌশলে নাকি আজমতকে ‘বলি’ দিয়েছে। অন্য একজন বলেছেন, দিন শেষে জাহাঙ্গীর তো আওয়ামী লীগেরই। অতএব, আজমত উল্লা হেরে গেলেও আওয়ামী লীগের কিছু আসে যায় না। বরং লাভই বেশি এজন্য যে, আওয়ামী লীগ বলতে পারছে যে তারা নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো বাধা দেয় না। এমন প্রচারণা আওয়ামী লীগ এখন চালাচ্ছেও। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আজমত জয়লাভ করলে আওয়ামী লীগ ভিন্ন সুরে কথা বলত এবং ঢোল পেটাত যে, আওয়ামী প্রার্থীর সঙ্গে কেউ টেকে না, জনগণ দল হিসাবে আওয়ামী লীগকেই চায়। জাহাঙ্গীর এবং আজমত-দুজনই আওয়ামী লীগের হওয়ায় আওয়ামী লীগ সুবিধামতো কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেল, যেমনটি তারা মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বলছেন। মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে আমাদের বড় দুদলের তোষণনীতি দেখে শুধু হাসি পায়।
এবার আসা যাক ব্যক্তি জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয়, না আওয়ামী লীগ। গাজীপুরের এ ভোটে জায়েদা খাতুন তো কোনো ফ্যাক্টর নন, ফ্যাক্টর হয়েছেন জাহাঙ্গীর। মায়ের জন্য যা করার সবই তো করেছেন জাহাঙ্গীর, মানুষও ভোট দিয়েছে জাহাঙ্গীরকেই। অতএব, প্রথম বিবেচনায় এমনটি বলা যেতে পায়ে যে, ব্যক্তি হিসাবে জাহাঙ্গীর দল হিসাবে আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি জনপ্রিয়। এটা বলার কারণ বা ভিত্তি একটাই-আজমত আওয়ামী লীগের মনোনীত, আর জায়েদা খাতুন অর্থাৎ জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র, এমনকি জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত। ফলে লড়াইটা হলো আওয়ামী লীগ আর জাহাঙ্গীরের মধ্যে। প্রকৃত অর্থে এ কথা পুরো সঠিক নয়।
এমনকি পুরো গ্রহণযোগ্যও নয়। জাহাঙ্গীর যদি আওয়ামী লীগের না হতেন, আগের মেয়াদে আওয়ামী মনোনয়নে মেয়র না হতেন, কিংবা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর অন্য কোনো দলে যোগ দিতেন-তখন বোঝা যেত জাহাঙ্গীর ব্যক্তি হিসাবে কত জনপ্রিয়। জাহাঙ্গীর এবার যে কারণে মেয়র পদে ভোট করতে পারেননি, তা সেরে নিয়ে তিনি জাতীয় নির্বাচনে সংসদ-সদস্য পদে নির্বাচন করুন-হয় স্বতন্ত্র হিসাবে, নয় আওয়ামী লীগ বাদে অন্য দলে গিয়ে। তখন হয়তো দেখা যাবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে তিনি হারাতে পারেন কি না। যদি পারেন তবেই বোঝা যাবে যে, ব্যক্তি হিসাবে তিনি সত্যিই জনপ্রিয় বেশি। আপাতত আওয়ামী লীগ থেকে ব্যক্তি জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয় বলা শতভাগ কেন পঞ্চাশ : পঞ্চাশও বলা যাবে না, এতে ফ্যালাসি রয়ে গেছে।
এখন আমাদের দেখার বিষয়, জয়ের পর শোডাউন করে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করে আসার পর জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ বাতিল হয় কি না, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে পারে কি না। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তাদের নীতিতে কতটা নীতিবান থাকবে তার ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে নাকি কিছু নেই। এমনকি রাজনীতিতে শেষ কথা নেই-এ কথাটিও শেষ কথা নয়। রাজনীতিটা অন্তত আমাদের দেশে হচ্ছে-যখন যেমন, তখন তেমন; যখন যাকে দরকার, তখন তাকেই দরকার; এখানে আপসের বেলায় নীতি নেই। গাজীপুরের নির্বাচনের আরেকটা বিষয় বড় আলোচ্য। সিটি নির্বাচনে প্রদত্ত (কাস্ট) ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশের কম পেলে জামানত হারাতে হয়।
এ বিবেচনায় জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন (১৬,৩৬২ ভোট), ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান (৪৫,৩৫২ ভোট), গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (১৬,৯৭৬ (ভোট), জাকের পার্টির রাজু আহমেদ (৭,২০৬ ভোট), স্বতন্ত্র সরকার শাহনুর ইসলাম (২৩, ২৬৫ ভোট) এবং স্বতন্ত্র হারুন অর রশিদ (২,৪২৬ ভোট)-এ ৬ জনই, অর্থাৎ মেয়র পদে মোট ৮ জন প্রার্থীর ৬ জনই জামানত হারাচ্ছেন। এ ৬ জনের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্র্থীই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন দেখা যায়। জাতীয় নির্বাচনেও ইসলামী আন্দোলনের লেগে থাকা নজরে পড়ে বটে। প্রসঙ্গত আরেকটা বিষয় আলোচনায় রয়েছে যে, ভোটের আগের দিন ঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি ও ভোটের দিন তিন দলের অর্থাৎ বড় তিন দলের প্রতিনিধিদের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় বৈঠকও নাকি নির্বাচনকে সহি রাখতে ভূমিকা রেখেছে। জানি না, আমাদের কতজন আমেরিকার ভিসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ নিয়ে যৌক্তিক কারণেই, আমার কোনো চিন্তাই নেই ব্যক্তিগতভাবে, চিন্তা শুধু একটা যে, শেষ পর্যন্ত আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কী একটা চাপেটাঘাত করল! তারপরও আমরা খুশিতে ডগমগ হয়ে যে যেমন পারি সুবিধাজনক ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের পাতে ঝোল টানায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। বড় খারাপ লাগল, যখন জানলাম, গাজীপুরের মেয়র নির্বাচনে একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও নাকি ছিলেন, যিনি নাকি একজন আমলাও। আপত্তিটা আমলাতে নয়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাতে।
বদিউর রহমান : সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
গাজীপুরের নির্বাচন : ছোট্ট একটু বিশ্লেষণ
চেতনায় বুদ্বুদ
বদিউর রহমান
০৬ জুন ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট হয়ে গেল। স্থানীয় সরকারের ভোট হলেও এ ভোট বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে হালের সিটি নির্বাচনগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মূলত তিনটি কারণে। এক. কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটু সমালোচনায় পড়েছিল। অতএব, আবার নির্বাচন কমিশন একই কায়দায় কোনো ধরনের সমালোচনায় পড়ে যায় কিনা তা জনগণ সাগ্রহে দেখতে চেয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন কতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন করিয়ে দিতে পারে তা বড় বিবেচনায় ছিল।
গাইবান্ধায় উপনির্বাচনে কমিশন পুরো নির্বাচন বাতিল করে যে রেকর্ড করেছিল, তেমন কাঠিন্য সিটি নির্বাচনগুলোতে ধরে রাখতে পারে কিনা এটাও দেখার বিষয় ছিল। যদিও একসঙ্গে পুরো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা কমিশন হারাতে যাচ্ছে। দুই. বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী জনপ্রিয়তা মূল্যায়নের অবস্থা নিরূপণের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল এ নির্বাচনে।
মোট কত ভোট কাস্ট হয়, বিএনপি সমর্থকরা ভোট বর্জন করলেও আওয়ামী সমর্থক সব ভোটার ভোট দিতে যায় কিনা, অর্থাৎ নির্বাচনে ভোট প্রদানে যে একটা বড় অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে ভোটারদের, এটার কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা এ সিটি নির্বাচনে লক্ষ করা যাবে। তিন. মেয়র পদের মূল দুই প্রার্থীই মূলত আওয়ামী লীগের, আজমত উল্লা সরাসরি আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কায়, আর জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও সাবেক মেয়র আওয়ামী নেতা জাহাঙ্গীরের মা। এমন অবস্থায় দল হিসাবে আওয়ামী লীগ বেশি জনপ্রিয়, না বিদ্রোহী হলেও জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয় তা দেখার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এ নির্বাচনে। ব্যক্তির স্বাধীনতা আর দলীয় অধীনতা নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি ২৩ মে মঙ্গলবারের কলামে যুগান্তরে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচন সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলাম যে, আমাদের দেখতে হবে এখানে ব্যক্তি জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয়, না আওয়ামী লীগ। আরও উল্লেখ করেছিলাম যে, অবশ্যই আওয়ামী লীগের বদৌলতেই জাহাঙ্গীর জাতে উঠেছিলেন।
সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠানের পর আমরা দেখলাম যে, নির্বাচন কমিশন এবার উতরে গেল। কোনো ধরনের অপ্রিয় কাণ্ড ছাড়াই ভোট সম্পন্ন করতে পেরেছে কমিশন। নির্বাচনে ভোট প্রদানে ভোটারদের আগ্রহও একটু বেড়েছে দেখা গেল। আর ব্যক্তি জাহাঙ্গীর দৃশ্যত আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেলেন। এ তিনটি বিষয়ই আমরা একটু বিশ্লেষণ করে দেখতে চাই। নির্বাচনের পর হরেক রকম ব্যাখ্যা-আলোচনা-সমালোচনা প্রশংসার ঝড় তো বইছেই। মার্কিন ভিসানীতির প্রভাবও রয়েছে-এমন কথাও বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, নির্বাচন কমিশন গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই একটা বক্তব্যে প্রাধান্য দিয়েছে যে তারা ভোট সুষ্ঠু করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আমরা জানি, ভোট অনুষ্ঠানে মূল ভূমিকা থাকে জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনীতিকসহ তাদের সমর্থকদের। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে গাজীপুরের নির্বাচনে প্রচারের সময় কিছু আচরণ ভঙ্গ হলেও ভোটের সময় কোনো রাজনৈতিক পান্ডামি-মাস্তানি-গুন্ডামি এবার আমরা লক্ষ করলাম না। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকারও আলাদা একটা প্রভাব পড়েছে এ ভোটে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেহেতু সরকার পরিবর্তিত হয় না, সেহেতু বিএনপির ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে সরকার বা আওয়ামী লীগও এবার জেলা প্রশাসনে কোনো চাপ প্রয়োগ করেছে বলে মনে হয় না। ফলে নির্বাচন কমিশন স্বস্তিতেই নির্বাচনটা সেরে নিতে পেরেছে।
প্রথমবারের মতো পুরো ভোট ইভিএমে করে বিলম্বের জন্য সমালোচিত হলেও নতুনদের ইভিএমে আগ্রহী করেছে মনে হয়। তবে ইভিএমের ভোট প্রকাশেও অহেতুক বিলম্বের কারণে সন্দেহ জেগেছিল যে, জায়েদা খাতুনের এগিয়ে থাকা পরে পিছিয়ে যায় কিনা। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাতে আওয়ামী জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মূল সুযোগ কিন্তু প্রথমেই হাতছাড়া হয়ে গেছে, কারণ দেশে ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিই এখন বিবেচ্য। বাকি আধুলি, সিকি বা খুচরা পয়সার দলগুলো ভোটের হিসাবে ধর্তব্যে পড়ে না। কিন্তু বিএনপিবিহীন মোট ভোট কাস্টে আওয়ামী জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগটা কিছুটা হলেও নষ্ট হয়ে গেছে এজন্য যে, মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই তো আওয়ামী লীগের। জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র হলেও তিনি তো আওয়ামী পরিবারের। আবার প্রার্থী কাগজে কলমে মা জায়েদা খাতুন হলেও ভোট তো হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত আজমত উল্লা আর আওয়ামী-বিদ্রোহী স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীরের মধ্যে। ফলে আওয়ামী জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, আজমত উল্লা খানের ২,২২,৭৩৭ এবং জায়েদা খাতুনের ২,৩৮,৯৩৪ ভোটের সবই আওয়ামী ভোট-কিন্তু এটা একটা সহজ সমীকরণ হতে পারে মাত্র।
প্রকৃত পক্ষে অবস্থাটা এমন যে, আজমত উল্লার সব ভোটই আওয়ামী লীগের ভোট, জাহাঙ্গীরের তথা জায়েদা খাতুনের সব ভোট শুধু আওয়ামী লীগের নয়, এখানে বিএনপির ভোটও রয়েছে। এটা চাউর আছে যে, আওয়ামী প্রার্থী আজমত উল্লাকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে অজনপ্রিয় প্রমাণের জন্য বিএনপি সমর্থকরা জাহাঙ্গীরকে পছন্দ করেছেন। এমন শোনা কথা একেবারে অবিশ্বাস্য নয়। তারপরও মোট কাস্ট ভোটের শতকরা হিসাবে বিএনপির সমর্থিত কিছু ভোট বাদ গেলেও আওয়ামী লীগ এখনো জনপ্রিয়। আজমত উল্লার হারে আওয়ামী নেতাদের বেশ ভূমিকা রয়েছে মর্মে স্থানীয়ভাবে শোনা যায়। কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেছেন, মেহের আফরোজ চুমকি, রাসেল এবং মোজাম্মেল সাহেবরা আজমত উল্লার জন্য যতটা সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন ছিল ততটা হননি। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও জাহাঙ্গীরের প্রতি নরম মন অনেকের ছিল। জাহাঙ্গীরের প্রচারের এবং আগের কাজেও অনেকে খুশি ছিলেন।
আজমতের এলাকা টঙ্গী ছাড়া বাকি বড় এলাকায় জাহাঙ্গীর বেশ জনপ্রিয় ছিলেন এবং তার এলাকায় ভোটারও অনেক বেশি ছিল। তবে একজন ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটা বড় মারাত্মক মন্তব্য করেছেন, সরকার এবং আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের টোপে ফেলার জন্য কৌশলে নাকি আজমতকে ‘বলি’ দিয়েছে। অন্য একজন বলেছেন, দিন শেষে জাহাঙ্গীর তো আওয়ামী লীগেরই। অতএব, আজমত উল্লা হেরে গেলেও আওয়ামী লীগের কিছু আসে যায় না। বরং লাভই বেশি এজন্য যে, আওয়ামী লীগ বলতে পারছে যে তারা নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো বাধা দেয় না। এমন প্রচারণা আওয়ামী লীগ এখন চালাচ্ছেও। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আজমত জয়লাভ করলে আওয়ামী লীগ ভিন্ন সুরে কথা বলত এবং ঢোল পেটাত যে, আওয়ামী প্রার্থীর সঙ্গে কেউ টেকে না, জনগণ দল হিসাবে আওয়ামী লীগকেই চায়। জাহাঙ্গীর এবং আজমত-দুজনই আওয়ামী লীগের হওয়ায় আওয়ামী লীগ সুবিধামতো কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেল, যেমনটি তারা মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বলছেন। মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে আমাদের বড় দুদলের তোষণনীতি দেখে শুধু হাসি পায়।
এবার আসা যাক ব্যক্তি জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয়, না আওয়ামী লীগ। গাজীপুরের এ ভোটে জায়েদা খাতুন তো কোনো ফ্যাক্টর নন, ফ্যাক্টর হয়েছেন জাহাঙ্গীর। মায়ের জন্য যা করার সবই তো করেছেন জাহাঙ্গীর, মানুষও ভোট দিয়েছে জাহাঙ্গীরকেই। অতএব, প্রথম বিবেচনায় এমনটি বলা যেতে পায়ে যে, ব্যক্তি হিসাবে জাহাঙ্গীর দল হিসাবে আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি জনপ্রিয়। এটা বলার কারণ বা ভিত্তি একটাই-আজমত আওয়ামী লীগের মনোনীত, আর জায়েদা খাতুন অর্থাৎ জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র, এমনকি জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত। ফলে লড়াইটা হলো আওয়ামী লীগ আর জাহাঙ্গীরের মধ্যে। প্রকৃত অর্থে এ কথা পুরো সঠিক নয়।
এমনকি পুরো গ্রহণযোগ্যও নয়। জাহাঙ্গীর যদি আওয়ামী লীগের না হতেন, আগের মেয়াদে আওয়ামী মনোনয়নে মেয়র না হতেন, কিংবা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর অন্য কোনো দলে যোগ দিতেন-তখন বোঝা যেত জাহাঙ্গীর ব্যক্তি হিসাবে কত জনপ্রিয়। জাহাঙ্গীর এবার যে কারণে মেয়র পদে ভোট করতে পারেননি, তা সেরে নিয়ে তিনি জাতীয় নির্বাচনে সংসদ-সদস্য পদে নির্বাচন করুন-হয় স্বতন্ত্র হিসাবে, নয় আওয়ামী লীগ বাদে অন্য দলে গিয়ে। তখন হয়তো দেখা যাবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে তিনি হারাতে পারেন কি না। যদি পারেন তবেই বোঝা যাবে যে, ব্যক্তি হিসাবে তিনি সত্যিই জনপ্রিয় বেশি। আপাতত আওয়ামী লীগ থেকে ব্যক্তি জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয় বলা শতভাগ কেন পঞ্চাশ : পঞ্চাশও বলা যাবে না, এতে ফ্যালাসি রয়ে গেছে।
এখন আমাদের দেখার বিষয়, জয়ের পর শোডাউন করে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করে আসার পর জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ বাতিল হয় কি না, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে পারে কি না। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তাদের নীতিতে কতটা নীতিবান থাকবে তার ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে নাকি কিছু নেই। এমনকি রাজনীতিতে শেষ কথা নেই-এ কথাটিও শেষ কথা নয়। রাজনীতিটা অন্তত আমাদের দেশে হচ্ছে-যখন যেমন, তখন তেমন; যখন যাকে দরকার, তখন তাকেই দরকার; এখানে আপসের বেলায় নীতি নেই। গাজীপুরের নির্বাচনের আরেকটা বিষয় বড় আলোচ্য। সিটি নির্বাচনে প্রদত্ত (কাস্ট) ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশের কম পেলে জামানত হারাতে হয়।
এ বিবেচনায় জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন (১৬,৩৬২ ভোট), ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান (৪৫,৩৫২ ভোট), গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (১৬,৯৭৬ (ভোট), জাকের পার্টির রাজু আহমেদ (৭,২০৬ ভোট), স্বতন্ত্র সরকার শাহনুর ইসলাম (২৩, ২৬৫ ভোট) এবং স্বতন্ত্র হারুন অর রশিদ (২,৪২৬ ভোট)-এ ৬ জনই, অর্থাৎ মেয়র পদে মোট ৮ জন প্রার্থীর ৬ জনই জামানত হারাচ্ছেন। এ ৬ জনের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্র্থীই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন দেখা যায়। জাতীয় নির্বাচনেও ইসলামী আন্দোলনের লেগে থাকা নজরে পড়ে বটে। প্রসঙ্গত আরেকটা বিষয় আলোচনায় রয়েছে যে, ভোটের আগের দিন ঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি ও ভোটের দিন তিন দলের অর্থাৎ বড় তিন দলের প্রতিনিধিদের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় বৈঠকও নাকি নির্বাচনকে সহি রাখতে ভূমিকা রেখেছে। জানি না, আমাদের কতজন আমেরিকার ভিসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ নিয়ে যৌক্তিক কারণেই, আমার কোনো চিন্তাই নেই ব্যক্তিগতভাবে, চিন্তা শুধু একটা যে, শেষ পর্যন্ত আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কী একটা চাপেটাঘাত করল! তারপরও আমরা খুশিতে ডগমগ হয়ে যে যেমন পারি সুবিধাজনক ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের পাতে ঝোল টানায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। বড় খারাপ লাগল, যখন জানলাম, গাজীপুরের মেয়র নির্বাচনে একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও নাকি ছিলেন, যিনি নাকি একজন আমলাও। আপত্তিটা আমলাতে নয়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাতে।
বদিউর রহমান : সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023