জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: হুমকির মুখে মানুষের জীবন-জীবিকা
ভূমিক্ষয় বাড়ছে, কমছে ফসল
যুগান্তর ডেস্ক
০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারা পৃথিবীতে উপরিভাগের মাটি স্তরে ক্ষয় শুরু হয়েছে। প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ জায়গার মাটি ক্ষয় হচ্ছে। এভাবে ফিবছর মাটি ক্ষয়ে যাচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টন।
এরই মধ্যে পৃথিবীর প্রায় ৩৩ শতাংশ মাটির স্বাস্থ্যের অবনয়ন ঘটেছে ও আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে ৯০ শতাংশ মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে খাদ্য উৎপাদনের গুণগত মান ও পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ব গণমাধ্যমে। ইউএন নিউজ, আলজাজিরা।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, কোনো জায়গায় দুই-তিন সেমি. মাটি তৈরি হতে প্রায় ১ হাজার বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কয়েকবারের অতি বৃষ্টিপাতেই সেই মাটি ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। এজন্য মাটির ক্ষয় রোধে বাড়তি সচেতনতার সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রভাবশালী বিজ্ঞান জার্নাল, ‘নেচার’ জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান মাটি ক্ষয়প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যময় মাটির জন্য সব থেকে বড় হুমকি।
পৃথিবীতে মাটি ক্ষয়জনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করায় ২০১৫ সালে জাতিসংঘের মহাউন্নয়ন পরিকল্পনা ‘এজেন্ডা-২০৩০’ বা এসডিজির ১৫ নম্বর অভীষ্টের সঙ্গে মরুকরণ প্রক্রিয়ার মোকাবেলা, ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মাটি ক্ষয় বলতে সাধারণত মাটির ওপরের উর্বর অংশ সরে যাওয়া বোঝায়। পানি, বাতাস ও ভূমিকর্ষণ- এই তিন কারণে মাটির উর্বর উপরিভাগ সরে যায় ও মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়াটি ভূ-প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরগতিতে সম্পন্ন হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষের কারণেই এই প্রক্রিয়া দ্রুততর গতিতে সংঘটিত হয়ে থাকে।
বর্তমানে মানুষের নানা রকম কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে বনভূমি উজাড়, তৃণভূমি ধ্বংস, ঢালযুক্ত জমি চাষ, মাত্রাতিরিক্ত পশুচারণ, ভূমি সমতলকরণ, চাষাবাদে যন্ত্রের অধিক ব্যবহার ইত্যাদির কারণে মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়া বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এর প্রধান কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন।
কারণ অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি দুই-ই জলবায়ু পরিবর্তনেই সৃষ্টি। কৃষি উৎপাদন, পানির গুণমান ও পরিবেশের ওপর মাটি ক্ষয়ের নেতিবাচক ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
মাটি ক্ষয়ের কারণে কৃষি জমিতে আর্দ্রতা ঘাটতি, পানি নিষ্কাশনক্ষমতা হ্রাস, গভীরে শিকড় পৌঁছতে না পারা ও পানির অনুপ্রবেশ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এর ফলে জমির পুষ্টিগুণও লোপ পায়। আসলে ভূ-উপরিস্থিত মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে ও সেখান থেকে গাছ তার বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি সংগ্রহ করে। জৈব পদার্থ থাকার কারণেই মাটির ছিদ্রতা তৈরি হয় ও এই ছিদ্রের সাহায্যে গাছের শিকড় মাটির গভীরে সহজে প্রবেশ করতে পারে।
ছিদ্রতার কারণেই মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে মাটির ছিদ্রতা কমে যায় ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অপসারিত মাটি কণা পানির মধ্যে গিয়ে স্তর তৈরি করে ও মজুদ পানি ভাণ্ডারে দূষণ ঘটায়।
এর ফলে জলজপ্রাণীর জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মাটি ক্ষয়ের কারণে জলপথে বাধা তৈরি হয় ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী মাটির সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রথম ১০টি হুমকির মধ্যে মাটি ক্ষয় অন্যতম। এই প্রতিবেদনে আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই তিনটি মহাদেশে কোনো কোনো জায়গায় প্রতি হেক্টর জমিতে বছরে ৮ থেকে ৫০ টন কিংবা তারও বেশি মাটি ক্ষয় হচ্ছে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: হুমকির মুখে মানুষের জীবন-জীবিকা
ভূমিক্ষয় বাড়ছে, কমছে ফসল
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারা পৃথিবীতে উপরিভাগের মাটি স্তরে ক্ষয় শুরু হয়েছে। প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ জায়গার মাটি ক্ষয় হচ্ছে। এভাবে ফিবছর মাটি ক্ষয়ে যাচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টন।
এরই মধ্যে পৃথিবীর প্রায় ৩৩ শতাংশ মাটির স্বাস্থ্যের অবনয়ন ঘটেছে ও আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে ৯০ শতাংশ মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে খাদ্য উৎপাদনের গুণগত মান ও পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ব গণমাধ্যমে। ইউএন নিউজ, আলজাজিরা।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, কোনো জায়গায় দুই-তিন সেমি. মাটি তৈরি হতে প্রায় ১ হাজার বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কয়েকবারের অতি বৃষ্টিপাতেই সেই মাটি ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। এজন্য মাটির ক্ষয় রোধে বাড়তি সচেতনতার সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রভাবশালী বিজ্ঞান জার্নাল, ‘নেচার’ জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান মাটি ক্ষয়প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যময় মাটির জন্য সব থেকে বড় হুমকি।
পৃথিবীতে মাটি ক্ষয়জনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করায় ২০১৫ সালে জাতিসংঘের মহাউন্নয়ন পরিকল্পনা ‘এজেন্ডা-২০৩০’ বা এসডিজির ১৫ নম্বর অভীষ্টের সঙ্গে মরুকরণ প্রক্রিয়ার মোকাবেলা, ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মাটি ক্ষয় বলতে সাধারণত মাটির ওপরের উর্বর অংশ সরে যাওয়া বোঝায়। পানি, বাতাস ও ভূমিকর্ষণ- এই তিন কারণে মাটির উর্বর উপরিভাগ সরে যায় ও মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়াটি ভূ-প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরগতিতে সম্পন্ন হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষের কারণেই এই প্রক্রিয়া দ্রুততর গতিতে সংঘটিত হয়ে থাকে।
বর্তমানে মানুষের নানা রকম কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে বনভূমি উজাড়, তৃণভূমি ধ্বংস, ঢালযুক্ত জমি চাষ, মাত্রাতিরিক্ত পশুচারণ, ভূমি সমতলকরণ, চাষাবাদে যন্ত্রের অধিক ব্যবহার ইত্যাদির কারণে মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়া বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এর প্রধান কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন।
কারণ অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি দুই-ই জলবায়ু পরিবর্তনেই সৃষ্টি। কৃষি উৎপাদন, পানির গুণমান ও পরিবেশের ওপর মাটি ক্ষয়ের নেতিবাচক ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
মাটি ক্ষয়ের কারণে কৃষি জমিতে আর্দ্রতা ঘাটতি, পানি নিষ্কাশনক্ষমতা হ্রাস, গভীরে শিকড় পৌঁছতে না পারা ও পানির অনুপ্রবেশ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এর ফলে জমির পুষ্টিগুণও লোপ পায়। আসলে ভূ-উপরিস্থিত মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে ও সেখান থেকে গাছ তার বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি সংগ্রহ করে। জৈব পদার্থ থাকার কারণেই মাটির ছিদ্রতা তৈরি হয় ও এই ছিদ্রের সাহায্যে গাছের শিকড় মাটির গভীরে সহজে প্রবেশ করতে পারে।
ছিদ্রতার কারণেই মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে মাটির ছিদ্রতা কমে যায় ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অপসারিত মাটি কণা পানির মধ্যে গিয়ে স্তর তৈরি করে ও মজুদ পানি ভাণ্ডারে দূষণ ঘটায়।
এর ফলে জলজপ্রাণীর জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মাটি ক্ষয়ের কারণে জলপথে বাধা তৈরি হয় ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী মাটির সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রথম ১০টি হুমকির মধ্যে মাটি ক্ষয় অন্যতম। এই প্রতিবেদনে আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই তিনটি মহাদেশে কোনো কোনো জায়গায় প্রতি হেক্টর জমিতে বছরে ৮ থেকে ৫০ টন কিংবা তারও বেশি মাটি ক্ষয় হচ্ছে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে।