মিয়ানমারের চীন নীতিতে বদল আনতে পারেন সু চি
যুগান্তর ডেস্ক
২৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মিয়ানমারের চীন নীতিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চলতি মাসের সাধারণ নির্বাচনের সময় এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বেইজিংয়ের প্রভাব কমাতে তাদের চীন নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারেন দেশটির নেত্রী ও দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত ক্ষমতাসীন সরকারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, চীনের বিআরআই প্রকল্পে কিছু সংস্কার আসতে পারে এবং নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের কারণে চীনের সামগ্রিক প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা করা হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে চীন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তানের পর এই দেশটিকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বেইজিং। লগ্নি বিস্তারে অন্যেরা যেখানে যেতে রাজি নয়, সেখানেই পা রাখতে প্রবল আগ্রহ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির। চীন-মিয়ানমার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মিয়ানমার সফর আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এমনিতে মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক মধুর নয়। চীনা লগ্নিতে যে ঋণের ফাঁদে দেশ বিকিয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কা রয়েছে মিয়ানমারেরও। তাদের বিদেশি ঋণ যত, তার ৪০ শতাংশই চীনের কাছে। সেই আশঙ্কা থেকেই মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব খর্ব করতে মিয়ানমারকে কাছে টানছে ভারত। দেশটিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন। রাখাইনে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করছে বেইজিং। যাকে টেক্কা দিতে, আগামী বছরই ভারতীয় অর্থায়নে শুরু হচ্ছে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাখাইনের সিত্তি বন্দর প্রকল্পের কাজ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন-ভারত দ্বন্দ্বে মাঝখান থেকে মিয়ানমার তার অবস্থান আরও পোক্ত করে নিচ্ছে।
ইকোনমিক টাইমস বলেছে, চীন নীতির ব্যাপারে সু চির বেসামরিক সরকারের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে সামরিক বাহিনীও। প্রকল্পগুলোতে বেইজিংয়ের বরাদ্দ কমানোর পাশাপাশি সু চি ও সেনাবাহিনী মিয়ামারের শান্তি প্রক্রিয়ায় চীনের ভূমিকার ব্যাপারেও পুনর্বিবেচনা করছে। প্রতিবেদন মতে, মিয়ানমারের শান রাজ্যে চীনাদের সংখ্যা বাড়ছে। এই রাজ্যটি চীনের ইউনান প্রদেশের সীমান্তবর্তী। সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, চীনের প্রভাবেই সেখানে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না মিয়ানমার। মান্ডালায় চীনের প্রভাব এখন মিয়ানমারের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। এ ছাড়া সু চি নেতৃত্বাধীন এনএলডিতেও চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। মিয়ানমারের এক সূত্র জানায়, শান ও রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ওপর চীনের সমর্থন খুব ভালো করেই জানেন সু চি। সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে চীনের অর্থায়নের কারণেও অসন্তুষ্ট মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেলরা। এই গোষ্ঠী ভারতীয় প্রকল্প কালাদান মাল্টিমডেলও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।
মান্ডালেতে চীনা ও স্থানীয় বার্মিজদের মধ্যেও মাঝে মাঝে ক্ষোভ বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, মিয়ানমারের বুদ্ধিজীবীদের ধারণা মিয়ানামারে ভূখণ্ড বিস্তার করছে চীন এবং খুব শিগগিরই এটা নিয়ে সংঘাত শুরু হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মিয়ানমারের চীন নীতিতে বদল আনতে পারেন সু চি
মিয়ানমারের চীন নীতিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চলতি মাসের সাধারণ নির্বাচনের সময় এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বেইজিংয়ের প্রভাব কমাতে তাদের চীন নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারেন দেশটির নেত্রী ও দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত ক্ষমতাসীন সরকারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, চীনের বিআরআই প্রকল্পে কিছু সংস্কার আসতে পারে এবং নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের কারণে চীনের সামগ্রিক প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা করা হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে চীন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তানের পর এই দেশটিকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বেইজিং। লগ্নি বিস্তারে অন্যেরা যেখানে যেতে রাজি নয়, সেখানেই পা রাখতে প্রবল আগ্রহ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির। চীন-মিয়ানমার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মিয়ানমার সফর আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এমনিতে মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক মধুর নয়। চীনা লগ্নিতে যে ঋণের ফাঁদে দেশ বিকিয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কা রয়েছে মিয়ানমারেরও। তাদের বিদেশি ঋণ যত, তার ৪০ শতাংশই চীনের কাছে। সেই আশঙ্কা থেকেই মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব খর্ব করতে মিয়ানমারকে কাছে টানছে ভারত। দেশটিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন। রাখাইনে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করছে বেইজিং। যাকে টেক্কা দিতে, আগামী বছরই ভারতীয় অর্থায়নে শুরু হচ্ছে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাখাইনের সিত্তি বন্দর প্রকল্পের কাজ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন-ভারত দ্বন্দ্বে মাঝখান থেকে মিয়ানমার তার অবস্থান আরও পোক্ত করে নিচ্ছে।
ইকোনমিক টাইমস বলেছে, চীন নীতির ব্যাপারে সু চির বেসামরিক সরকারের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে সামরিক বাহিনীও। প্রকল্পগুলোতে বেইজিংয়ের বরাদ্দ কমানোর পাশাপাশি সু চি ও সেনাবাহিনী মিয়ামারের শান্তি প্রক্রিয়ায় চীনের ভূমিকার ব্যাপারেও পুনর্বিবেচনা করছে। প্রতিবেদন মতে, মিয়ানমারের শান রাজ্যে চীনাদের সংখ্যা বাড়ছে। এই রাজ্যটি চীনের ইউনান প্রদেশের সীমান্তবর্তী। সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, চীনের প্রভাবেই সেখানে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না মিয়ানমার। মান্ডালায় চীনের প্রভাব এখন মিয়ানমারের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। এ ছাড়া সু চি নেতৃত্বাধীন এনএলডিতেও চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। মিয়ানমারের এক সূত্র জানায়, শান ও রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ওপর চীনের সমর্থন খুব ভালো করেই জানেন সু চি। সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে চীনের অর্থায়নের কারণেও অসন্তুষ্ট মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেলরা। এই গোষ্ঠী ভারতীয় প্রকল্প কালাদান মাল্টিমডেলও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।
মান্ডালেতে চীনা ও স্থানীয় বার্মিজদের মধ্যেও মাঝে মাঝে ক্ষোভ বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, মিয়ানমারের বুদ্ধিজীবীদের ধারণা মিয়ানামারে ভূখণ্ড বিস্তার করছে চীন এবং খুব শিগগিরই এটা নিয়ে সংঘাত শুরু হবে।