একালের শাহজাহান
প্রিয় পত্নীকে তাজমহলের আদলে বাড়ি দিলেন স্বামী
যুগান্তর ডেস্ক
৩০ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এ যেন আরেক শাহজাহান আর তার ভালোবাসার গল্প। ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক প্রেমিক স্বামী আনন্দ প্রকাশ (৫২)। ভালোবেসে স্ত্রীকে জগদ্বিখ্যাত প্রেমের প্রতীক তাজমহলের আদলে তৈরি বাড়ি উপহার দিয়েছেন তিনি। নতুন এই তাজমহলের খবর ইতোমধ্যে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, গোটা ভারতেই এখন তার নতুন পরিচিতি-‘একালের শাহজাহান’। প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক এই বাড়িটি দেখতে আসছেন।
১৬৩২ সালে মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুরে বিদ্রোহ দমনে গিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। এখানেই চতুর্দশ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের। মমতাজকে প্রথমে এই বুরহানপুরেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শাহজাহান প্রথমে মধ্যপ্রদেশের তাপ্তি নদীর তীরেই তাজমহল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। পরে সিদ্ধান্ত বদলে দিল্লির অদূরে আগ্রায় তাজমহল বানান তিনি। কিন্তু বুরহানপুরে না হয়ে তাজমহল কেন আগ্রায় নির্মাণ করা হলো-বহুদিন থেকেই মনে এমন প্রশ্ন ছিল শিক্ষাবিদ আনন্দ প্রকাশের।
আনন্দর কথায়, মমতাজের মৃত্যু হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুরেই। অথচ তার স্মৃতিতে তাজমহল বানানো হয়েছে দিল্লির আগ্রায়। শাহজাহান কেন বুরহানপুরে তাজমহল না বানিয়ে আগ্রায় চলে গেলেন-এই প্রশ্ন তাকে অবাক করে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তাজমহলের প্রতিকৃতি বানাবেন বুরহানপুরে। যেই কথা, সেই কাজ। নিজের বাড়িটিকেই তাজমহলের আদলে তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। আর সেই বাড়ি উপহার দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সি স্ত্রী মঞ্জুষাকে।
তাজমহল তৈরিতে প্রায় ১৫ বছর সময় লাগে। কিন্তু এই বাড়িটি তৈরিতে সময় লেগেছে মাত্র তিন বছর। শাহজাহান তার স্ত্রীর স্মৃতিসৌধ বানানোর উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশের শ্রমিক, শিল্পী ও কারিগরদের সাহায্য নিয়েছিলেন। তাজমহলে প্রতিকৃতি তৈরি করতে আনন্দও ইন্দোর এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষ শিল্পীদের সহায়তা নিয়েছেন। তাজমহল তৈরিতে যেখান থেকে পাথর আনা হয়, সেই মাকরানা থেকেই পাথর সংগ্রহ করেছেন আনন্দও। অভিনব এই বাড়িটি তৈরি করতে তার খরচ হয়েছে দেড় কোটি রুপি।
বাড়িটির নির্মাণে যুক্ত স্থাপত্যবিদ প্রবীণ চৌকশ বলেন, বাড়িটি ৯০ বর্গমিটার প্রশস্ত। তবে এর মূল কাঠামো ৬০ বর্গমিটার, উচ্চতা ২৯ ফুট। বাড়িটির দুটি তলায় দুটি শোওয়ার ঘর। আছে রান্নাঘর, গ্রন্থাগার ও যোগাসনের ঘর। আর শুধু তাই নয়, বাড়িটির অন্দরমহল ও বাইরের আলোকসজ্জা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে আসল তাজমহলের মতো অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে। তবে তাজমহল দেখে শুধু আনন্দই অনুপ্রাণিত হননি। একই প্রেরণায় ৫৮ বছর বয়সি স্ত্রী তাজাম্মুল বেগমের স্মৃতিতে তাজমহলের আকৃতি বানিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের ৭৭ বছর বয়সি ফয়জুল হাসান কাদেরি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
একালের শাহজাহান
প্রিয় পত্নীকে তাজমহলের আদলে বাড়ি দিলেন স্বামী
এ যেন আরেক শাহজাহান আর তার ভালোবাসার গল্প। ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক প্রেমিক স্বামী আনন্দ প্রকাশ (৫২)। ভালোবেসে স্ত্রীকে জগদ্বিখ্যাত প্রেমের প্রতীক তাজমহলের আদলে তৈরি বাড়ি উপহার দিয়েছেন তিনি। নতুন এই তাজমহলের খবর ইতোমধ্যে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, গোটা ভারতেই এখন তার নতুন পরিচিতি-‘একালের শাহজাহান’। প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক এই বাড়িটি দেখতে আসছেন।
১৬৩২ সালে মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুরে বিদ্রোহ দমনে গিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। এখানেই চতুর্দশ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের। মমতাজকে প্রথমে এই বুরহানপুরেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শাহজাহান প্রথমে মধ্যপ্রদেশের তাপ্তি নদীর তীরেই তাজমহল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। পরে সিদ্ধান্ত বদলে দিল্লির অদূরে আগ্রায় তাজমহল বানান তিনি। কিন্তু বুরহানপুরে না হয়ে তাজমহল কেন আগ্রায় নির্মাণ করা হলো-বহুদিন থেকেই মনে এমন প্রশ্ন ছিল শিক্ষাবিদ আনন্দ প্রকাশের।
আনন্দর কথায়, মমতাজের মৃত্যু হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুরেই। অথচ তার স্মৃতিতে তাজমহল বানানো হয়েছে দিল্লির আগ্রায়। শাহজাহান কেন বুরহানপুরে তাজমহল না বানিয়ে আগ্রায় চলে গেলেন-এই প্রশ্ন তাকে অবাক করে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তাজমহলের প্রতিকৃতি বানাবেন বুরহানপুরে। যেই কথা, সেই কাজ। নিজের বাড়িটিকেই তাজমহলের আদলে তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। আর সেই বাড়ি উপহার দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সি স্ত্রী মঞ্জুষাকে।
তাজমহল তৈরিতে প্রায় ১৫ বছর সময় লাগে। কিন্তু এই বাড়িটি তৈরিতে সময় লেগেছে মাত্র তিন বছর। শাহজাহান তার স্ত্রীর স্মৃতিসৌধ বানানোর উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশের শ্রমিক, শিল্পী ও কারিগরদের সাহায্য নিয়েছিলেন। তাজমহলে প্রতিকৃতি তৈরি করতে আনন্দও ইন্দোর এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষ শিল্পীদের সহায়তা নিয়েছেন। তাজমহল তৈরিতে যেখান থেকে পাথর আনা হয়, সেই মাকরানা থেকেই পাথর সংগ্রহ করেছেন আনন্দও। অভিনব এই বাড়িটি তৈরি করতে তার খরচ হয়েছে দেড় কোটি রুপি।
বাড়িটির নির্মাণে যুক্ত স্থাপত্যবিদ প্রবীণ চৌকশ বলেন, বাড়িটি ৯০ বর্গমিটার প্রশস্ত। তবে এর মূল কাঠামো ৬০ বর্গমিটার, উচ্চতা ২৯ ফুট। বাড়িটির দুটি তলায় দুটি শোওয়ার ঘর। আছে রান্নাঘর, গ্রন্থাগার ও যোগাসনের ঘর। আর শুধু তাই নয়, বাড়িটির অন্দরমহল ও বাইরের আলোকসজ্জা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে আসল তাজমহলের মতো অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে। তবে তাজমহল দেখে শুধু আনন্দই অনুপ্রাণিত হননি। একই প্রেরণায় ৫৮ বছর বয়সি স্ত্রী তাজাম্মুল বেগমের স্মৃতিতে তাজমহলের আকৃতি বানিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের ৭৭ বছর বয়সি ফয়জুল হাসান কাদেরি।