ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান

সরকার পতন আগুন ছড়াচ্ছে ‘হিজাব ছাড়ার’ বিক্ষোভ

এটা আন্দোলন নয় দাঙ্গাবাজি, জনগণের নিরাপত্তা এবং শান্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে -ইব্রাহিম রাইসি, প্রেসিডেন্ট
 সাইফ আহমাদ 
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

পুলিশি হেফাজতে মাসা আমিনির (২২) মৃত্যুতে লঙ্কাকান্ড চলছে ইরানে। তেহরান থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির ৮০ শহরে।

কট্টর নৈতিকতা পুলিশের ওপর ফুঁসে ওঠা ‘হিজাব ছাড়ার’ আন্দোলন এখন রূপ নিয়েছে সরকার পতন বিক্ষোভে। মার্কিন সমর্থনপুষ্ট পশ্চিমা মদদে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে আরও বারুদ গতিতে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ আমেরিকাও উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ‘রাইসি পতন’ আন্দোলনে।

স্লোগানে-প্ল্যাকার্ডে ক্ষুব্ধ জনতার একটাই দাবি-আয়াতুল্লাহ খোমেনি সরকারের পতন। প্যারিসের রাজপথ গরম হচ্ছে ‘খোমিনি গেট আউট অব ইরান’ ও ‘ডেথ অব ইসলামিক রিপাবলিক’ (ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের মৃত্যু চাই) লিফলেটে।

এসময় স্লোগানের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা ফার্সি ভাষায় ইতালীয় প্রতিবাদী গান ‘বেলা সিয়াও’ (গুডবাই বিউটিফুল) গাইতে থাকে।

হিজাব ছাড়াই রাজপথে নামেন ইরানের বিক্ষোভকারীরা। ‘জান, জেন্দেগি, আজাদি! (নারী, জীবন, স্বাধীনতা) এর মতো ভাইরাল ফার্সি গান গেয়ে র‌্যালি আরও চাঙ্গা করে তোলে প্যারিসের পথ। ফ্রান্সে বসবাসকারী নির্বাসিত কবি ও লেখক মাহতাব ঘোরবানি বলেন, ‘ক্রোধে আগুন লেগেছে। এ আগুন আর নেভানো সম্ভব হবে না। এখন যারা কথা বলবে না তাদের দায়ী করা হবে এবং আমরা ফ্রান্সকে (পরমাণু ইস্যুতে) আলোচনা বন্ধ এবং প্যারিসে ইরানের দূতাবাস বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।’

বিক্ষোভ হয় গ্রিসের রাজধানী এথেন্সেও। আমিনির শোকে একাত্মতা ঘোষণা করে রোববারও চুল কেটে ফেলেন বেশ কয়েকজন নারী। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের কেন্দ্রে সার্জেলস টর্গে বিক্ষোভকারীরাও তাদের চুল কেটে ফেলেন।

বিক্ষোভকারীদের একটি দল আমিনির ছবি হাতে দেশটির সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভকারীদের একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘আন্দোলন এখন আর শুধু ইরানেই সীমাবদ্ধ নেই যে চাইলেই থামাতে পারবে।

এটি এথেন্স, বার্লিন, ব্রাসেলস, ইস্তাম্বুল, মাদ্রিদ, নিউইয়র্ক, প্যারিস, সান্তিয়াগো, স্টকহোম, দ্য হেগ, টরন্টো এবং ওয়াশিংটনসহ অন্যান্য শহরগুলোতেও পৌঁছে গেছে। ইরানি নারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ চলছে গোটা বিশ্বেই।’

পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যু দেশটিকে বহু বছরের মধ্যে এবার মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। পরিবার ও বেশিরভাগ ইরানির বিশ্বাস, ১৩ সেপ্টেম্বর আটকের পর পুলিশ হেফাজতে মারধরের কারণে তার মৃত্যু (১৬ সেপ্টেম্বর) হয়েছে।

রোববার ইরানের রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি চলমান বিক্ষোভকে ‘দাঙ্গা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ‘দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা এবং শান্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ’ গ্রহণের দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন।

বিক্ষোভ থামাতে ইরানের সরকার মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট যোগাযোগ সীমিত করে। এসময় ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফরমেও তারা যোগাযোগে সীমাবদ্ধতা আনে। কিন্তু তার পরদিনই ইন্টারনেট পরিষেবা শিথিল করে বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘ইরানের জনগণকে যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং অন্ধকারে থাকতে না হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা সাহায্য করতে যাচ্ছি।’

ব্লিংকেনের ঘোষণার পরপরই টুইটারে এক বার্তায় ইলন মাস্ক জানান, ইরানে ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে তার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ফার্ম স্টারলিংককে সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন