মোশাররফকে আদর করে মা ডাকতেন পাল্লু
jugantor
মোশাররফকে আদর করে মা ডাকতেন পাল্লু
চলে গেলেন পাকিস্তানের শেষ সেনাশাসক

  সাবিহা আক্তার  

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুনে জ্বলতে থাকা ভারত তখনও অবিভক্ত। ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট। ভারত সরকারের প্রভাবশালী কূটনীতিক সৈয়দ মোশাররফ উদ্দিনের স্ত্রী বেগম জারিন মোশাররফের কোল আলো করে জন্ম নেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।

অ্যামাইলেইডোসিস নামক বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ অসুস্থতার পর রোববার দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি প্রায় ৯ বছর ( ১৯৯৯-২০০৮) পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০১ সালের ২০ জুন পাকিস্তানের ১০ম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন শেষ স্বৈরশাসক। জীবনের দুই রঙই নিজ চোখে দেখেছেন তিনি। একসময় ছিলেন প্রতাপশালী সেনাপ্রধান। শুধু পাকিস্তান নয়, ভূখণ্ডের বাইরেও মুখে মুখে ছিলেন সবার। ক্ষমতা হারানোর পর সেই মানুষটিই আবার হয়ে যান অচেনা। যেন কেউ চেনে না তাকে।

ছেলেবেলা থেকেই আঁচল ধরে থাকা ছেলেটাকে মা আদর করে ডাকতেন পাল্লু। বন্ধুরা মজা করে ডাকত কাউবয়। পরে তার পরিবার চলে আসে পাকিস্তানের করাচিতে। তত দিনে ভারত পাকিস্তান দুটি আলাদা দেশ। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। জীবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন ইস্তাম্বুলে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা থেকে রাজনৈতিক জীবনের নানা চড়াই উতরাই পার করেন তিনি। করাচির সেন্ট পাটরিক্স স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর লাহোরের ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে গণিত নিয়ে পড়াশোনার পর যুক্তরাজ্যের রয়াল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিসের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬১ সালের ১৯ এপ্রিল কাকুলের মিলিটারি একাডেমিতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে সেখান থেকে স্নাতক হয়ে পরবর্তীতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। এরপর ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধের সময় প্রথম তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। এরপর একে একে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সব পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাকে সেনাপ্রধান হিসাবে নিযুক্ত করেন।

১২ অক্টোবর ১৯৯৯, শ্রীলংকার এক সফর থেকে ফেরার সময় নওয়াজ শরিফ তাকে বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধা দেন। এ সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী হাউজ দখল করে নেয়। ঘটনা জানতে পেরে মোশাররফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। পরে সংবিধান স্থগিত করে নিজেই প্রধান নির্বাহীর ভূমিকা গ্রহণ করেন। তখন পাকিস্তানে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ না হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে এর সমালোচনা হয়। অবশেষে, ১ জুন ২০০১ এ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলা হয়। এর পরই তিনি ‘সন্ত্রাসের সঙ্গে যুদ্ধ’ নামক একটি জোটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হন। পরেও তিনি এই সম্পর্ক ধরে রাখার চেষ্টা করেন। ২০০২ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ), মত্তাহিদা কাওমি মুভমেন্ট, মুত্তাহিদা মজলিশই আলমসহ ছয়টি ধর্মীয় দলের জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হন। ওই নির্বাচনে তিনি দুই-তৃতীয়ংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন এবং এরপর ১৭তম সংশোধনী পাশ করার মাধ্যমে ১৯৯৯ সালের অভ্যুত্থান ও অন্যান্য পদক্ষেপকে বৈধতা দেন। ২০০৪ সালে মোশাররফ পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ এবং চারটি প্রাদেশিক পরিষদে ৫৬ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একটি আস্থা ভোটে উতরে যান। ২০০৬ এ ‘ইন দ্যা লাইন অব ফায়ার’ নামে তার আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।

২০০৭ সালের মার্চ এ তিনি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মোহাম্মদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে পদের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে তাকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু এতে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে তাকে আবার স্বপদে পুনর্বহাল করেন। একই সালের ৩ নভেম্বর তিনি আবার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং এর ২৫ দিনের মাথায় জেনারেল আশফাক পারভেজ কানিয়াকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা তুলে নেন।

২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-এর জোট সরকার গঠন করে। তারা মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এতে প্রথমে মোশাররফ পদত্যাগ করতে অস্বীকার জানালেও পরবর্তীতে অভিশংসন শেষ হওয়ার আগেই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এর পরপরই তার নামে বেনজির ভুট্টো হত্যা, নওয়াব আকবর বুগতি হত্যাসহ নভেম্বরে জরুরি অবস্থা জারির পর ৬২ জন বিচারপতির অবৈধ বন্দিসংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা হয়। এই অবস্থায়ও ২০১০ সালে তিনি অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এপিএমএল) নামে একটি রাজনৈতিক দল খোলেন। ২০১৩ সালে ৫ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

পরে পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বহির্গমন তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়। ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ তিনি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দুবাই যান এবং স্বেচ্ছা নির্বাসন গ্রহণ করেন। তিনি আর কখনোই পাকিস্তানে ফেরেননি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো প্রকাশ হয় তিনি অ্যামাইলয়েডোসিসে ভুগছেন যা তার চলাফেরায় প্রভাব ফেলছিল। মানব শরীরে বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে অ্যামাইলয়েড নামক একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরির কারণে অ্যামাইলয়েডোসিস রোগ হয়। এই রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও টিস্যু সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মোশাররফের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলার বিচার শুরুর ছয় বছর পর, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের ট্রায়াল কোর্ট উচ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। এর এক মাস পর লাহোরের হাইকোর্ট মোশাররফের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, যার ফলে তার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়। ২০১৯-এর মার্চে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং অবশেষে এই রোগের কাছে পরাস্থ হয়েই জীবনাবসান হলো সেনানায়ক থেকে পাকিস্তানে শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিতে আসা পাকিস্তানের শেষ স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের।

মোশাররফকে আদর করে মা ডাকতেন পাল্লু

চলে গেলেন পাকিস্তানের শেষ সেনাশাসক
 সাবিহা আক্তার 
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুনে জ্বলতে থাকা ভারত তখনও অবিভক্ত। ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট। ভারত সরকারের প্রভাবশালী কূটনীতিক সৈয়দ মোশাররফ উদ্দিনের স্ত্রী বেগম জারিন মোশাররফের কোল আলো করে জন্ম নেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।

অ্যামাইলেইডোসিস নামক বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ অসুস্থতার পর রোববার দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি প্রায় ৯ বছর ( ১৯৯৯-২০০৮) পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০১ সালের ২০ জুন পাকিস্তানের ১০ম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন শেষ স্বৈরশাসক। জীবনের দুই রঙই নিজ চোখে দেখেছেন তিনি। একসময় ছিলেন প্রতাপশালী সেনাপ্রধান। শুধু পাকিস্তান নয়, ভূখণ্ডের বাইরেও মুখে মুখে ছিলেন সবার। ক্ষমতা হারানোর পর সেই মানুষটিই আবার হয়ে যান অচেনা। যেন কেউ চেনে না তাকে।

ছেলেবেলা থেকেই আঁচল ধরে থাকা ছেলেটাকে মা আদর করে ডাকতেন পাল্লু। বন্ধুরা মজা করে ডাকত কাউবয়। পরে তার পরিবার চলে আসে পাকিস্তানের করাচিতে। তত দিনে ভারত পাকিস্তান দুটি আলাদা দেশ। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। জীবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন ইস্তাম্বুলে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা থেকে রাজনৈতিক জীবনের নানা চড়াই উতরাই পার করেন তিনি। করাচির সেন্ট পাটরিক্স স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর লাহোরের ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে গণিত নিয়ে পড়াশোনার পর যুক্তরাজ্যের রয়াল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিসের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬১ সালের ১৯ এপ্রিল কাকুলের মিলিটারি একাডেমিতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে সেখান থেকে স্নাতক হয়ে পরবর্তীতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। এরপর ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধের সময় প্রথম তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। এরপর একে একে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সব পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাকে সেনাপ্রধান হিসাবে নিযুক্ত করেন।

১২ অক্টোবর ১৯৯৯, শ্রীলংকার এক সফর থেকে ফেরার সময় নওয়াজ শরিফ তাকে বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধা দেন। এ সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী হাউজ দখল করে নেয়। ঘটনা জানতে পেরে মোশাররফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। পরে সংবিধান স্থগিত করে নিজেই প্রধান নির্বাহীর ভূমিকা গ্রহণ করেন। তখন পাকিস্তানে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ না হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে এর সমালোচনা হয়। অবশেষে, ১ জুন ২০০১ এ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলা হয়। এর পরই তিনি ‘সন্ত্রাসের সঙ্গে যুদ্ধ’ নামক একটি জোটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হন। পরেও তিনি এই সম্পর্ক ধরে রাখার চেষ্টা করেন। ২০০২ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ), মত্তাহিদা কাওমি মুভমেন্ট, মুত্তাহিদা মজলিশই আলমসহ ছয়টি ধর্মীয় দলের জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হন। ওই নির্বাচনে তিনি দুই-তৃতীয়ংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন এবং এরপর ১৭তম সংশোধনী পাশ করার মাধ্যমে ১৯৯৯ সালের অভ্যুত্থান ও অন্যান্য পদক্ষেপকে বৈধতা দেন। ২০০৪ সালে মোশাররফ পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ এবং চারটি প্রাদেশিক পরিষদে ৫৬ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একটি আস্থা ভোটে উতরে যান। ২০০৬ এ ‘ইন দ্যা লাইন অব ফায়ার’ নামে তার আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।

২০০৭ সালের মার্চ এ তিনি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মোহাম্মদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে পদের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে তাকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু এতে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে তাকে আবার স্বপদে পুনর্বহাল করেন। একই সালের ৩ নভেম্বর তিনি আবার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং এর ২৫ দিনের মাথায় জেনারেল আশফাক পারভেজ কানিয়াকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা তুলে নেন।

২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-এর জোট সরকার গঠন করে। তারা মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এতে প্রথমে মোশাররফ পদত্যাগ করতে অস্বীকার জানালেও পরবর্তীতে অভিশংসন শেষ হওয়ার আগেই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এর পরপরই তার নামে বেনজির ভুট্টো হত্যা, নওয়াব আকবর বুগতি হত্যাসহ নভেম্বরে জরুরি অবস্থা জারির পর ৬২ জন বিচারপতির অবৈধ বন্দিসংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা হয়। এই অবস্থায়ও ২০১০ সালে তিনি অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এপিএমএল) নামে একটি রাজনৈতিক দল খোলেন। ২০১৩ সালে ৫ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

পরে পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বহির্গমন তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়। ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ তিনি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দুবাই যান এবং স্বেচ্ছা নির্বাসন গ্রহণ করেন। তিনি আর কখনোই পাকিস্তানে ফেরেননি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো প্রকাশ হয় তিনি অ্যামাইলয়েডোসিসে ভুগছেন যা তার চলাফেরায় প্রভাব ফেলছিল। মানব শরীরে বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে অ্যামাইলয়েড নামক একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরির কারণে অ্যামাইলয়েডোসিস রোগ হয়। এই রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও টিস্যু সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মোশাররফের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলার বিচার শুরুর ছয় বছর পর, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের ট্রায়াল কোর্ট উচ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। এর এক মাস পর লাহোরের হাইকোর্ট মোশাররফের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, যার ফলে তার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়। ২০১৯-এর মার্চে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং অবশেষে এই রোগের কাছে পরাস্থ হয়েই জীবনাবসান হলো সেনানায়ক থেকে পাকিস্তানে শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিতে আসা পাকিস্তানের শেষ স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন