অবশেষে বেলুনে গুলি যুক্তরাষ্ট্রের
আকাশে উড়তে থাকা ৩ বাসের সমান চীনের বিশালদেহী বেলুন নিয়ে কয়েক দিন ধরেই টানটান উত্তেজনায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র। শত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে গুলি করে ভূ-পতিত করল আলোচিত সেই ‘গোয়েন্দা বেলুনকে’। শনিবার দক্ষিণ ক্যারোলিনার উপকূলে এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের ৪৭ ফুট গভীরে তলিয়ে যায় বেলুনটি। ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে গবেষণার জন্য পাঠানো হয় ভার্জিনিয়ার এফবিআই ল্যাবে। তবে ব্যাপারটি ভালো চোখে দেখেনি চীন। বেসামরিক গবেষণার বেলুন বলে দায় স্বীকারের পরেও হস্তান্তর না করে গুলি করার ঘটনাকে অপমান হিসাবেই নিয়েছে দেশটি। বেলুন বিতর্কের সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার। যুক্তরাষ্ট্র হুট করে জানায়, মন্টানার আকাশে ৬০ হাজার ফুট উপরে থাকা চীনের একটি গোয়েন্দা বেলুন ট্র্যাক করছে তারা। দুদিন ওড়ার পরেও কেন গুলি করা হয়নি এই প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, তিনটি বাসের সমান এই বিশাল বেলুনের ধ্বংসাবশেষ মানুষের জান-মালের ক্ষতি করতে পারে। অবশেষে সমুদ্র অতিক্রম করার সময় তাকে গুলি করা হয়। অবশিষ্টাংশ পড়ে আটলান্টিক মহাসাগরে। অতঃপর তা উদ্ধার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকোর এফবিআই ল্যাবে। একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এফবিআই এবং কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা একত্রে কাজ করছে।
বেলুন ভূ-পতিত করার পর পাইলটদের অভিনন্দন জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মেরিল্যান্ডে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘আমি আমাদের বিমানচালকদের প্রশংসা করতে চাই। তারা সফলভাবে বেলুনটি ধ্বংস করেছে।’ অভিবাদন জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও। টুইটারে বলেন, কানাডা এই পদক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কার্যক্রমের জন্য আমরা একসাথে কাজ করে যাব। এ ঘটনায় বহুল আকাঙ্ক্ষিত ও পরিকল্পিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চীন সফর বাতিল করেন। সম্পর্কের টানাপোড়েন কমানোর পরিকল্পনা করেও যেন লাভ হয়নি। হয়েছে অবনতি। বেলুনের দায় স্বীকার করেছিল চীন। জানিয়েছে আবহাওয়া গবেষণার কাজে ব্যবহৃত বেলুনটি ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় ঢুকে পড়ে। তবুও হস্তান্তর না করে তা উড়িয়ে দেওয়ায় তা ভীষণভাবে গায়ে মেখেছে দেশটি। রোববার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চীন। বিবৃতিতে জানায়, ওয়াশিংটন ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে। এসব করে আন্তর্জাতিক অনুশীলন গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মনুষ্যবিহীন একটি বেসামরিক বেলুনকে আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীরা কাজ করেছে। এর জন্য দৃঢ় অসন্তোষ ও প্রতিবাদ জানানো হলো। যাচাই করার পর চীনের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছিল যে, এটি বেসামরিক। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে এতে সামরিক হুমকি নেই। পথ পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কেবলই একটি দুর্ঘটনা। চীন পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সেটি হস্তান্তরের কথা বলেছিল।’ এদিকে পেন্টাগণ শুরুতেই জানিয়েছিল বেলুনটিতে কোনো সামরিক ও শারীরিক হুমকি নেই। তারাই আবার চীনের ‘বেসামরিক ও গবেষণায় ব্যবহৃত’ হওয়ার দাবি অস্বীকার করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়বিশ্বাস বেলুনটি গুপ্তচরবৃত্তির কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘এটি স্পষ্টতই চীনের একটি নজরদারি বেলুন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা অতিক্রম করেছে। আমরা নিশ্চিত যে, এটি সংবেদনশীল সামরিক সাইটগুলো পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যেই ছাড়া হয়েছে।’ তিনি জানান, বেলুনে নজরদারি সরঞ্জাম বহন করা হয়েছে। আবহাওয়াসংক্রান্ত কার্যক্রম বা বেসামরিক গবেষণার সাথে এসব কোনোভাবেই যুক্ত না। চীনা বেলুনের ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় তাইওয়ান। ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের’ সহ্য করা উচিত নয় বলেও হুঙ্কার দেয় দেশটি। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন, অন্য দেশের আকাশসীমা এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে।’ চীনের সরকারকে অবিলম্বে এ ধরনের আচরণ বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে তাইওয়ান।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অবশেষে বেলুনে গুলি যুক্তরাষ্ট্রের
আকাশে উড়তে থাকা ৩ বাসের সমান চীনের বিশালদেহী বেলুন নিয়ে কয়েক দিন ধরেই টানটান উত্তেজনায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র। শত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে গুলি করে ভূ-পতিত করল আলোচিত সেই ‘গোয়েন্দা বেলুনকে’। শনিবার দক্ষিণ ক্যারোলিনার উপকূলে এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের ৪৭ ফুট গভীরে তলিয়ে যায় বেলুনটি। ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে গবেষণার জন্য পাঠানো হয় ভার্জিনিয়ার এফবিআই ল্যাবে। তবে ব্যাপারটি ভালো চোখে দেখেনি চীন। বেসামরিক গবেষণার বেলুন বলে দায় স্বীকারের পরেও হস্তান্তর না করে গুলি করার ঘটনাকে অপমান হিসাবেই নিয়েছে দেশটি। বেলুন বিতর্কের সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার। যুক্তরাষ্ট্র হুট করে জানায়, মন্টানার আকাশে ৬০ হাজার ফুট উপরে থাকা চীনের একটি গোয়েন্দা বেলুন ট্র্যাক করছে তারা। দুদিন ওড়ার পরেও কেন গুলি করা হয়নি এই প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, তিনটি বাসের সমান এই বিশাল বেলুনের ধ্বংসাবশেষ মানুষের জান-মালের ক্ষতি করতে পারে। অবশেষে সমুদ্র অতিক্রম করার সময় তাকে গুলি করা হয়। অবশিষ্টাংশ পড়ে আটলান্টিক মহাসাগরে। অতঃপর তা উদ্ধার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকোর এফবিআই ল্যাবে। একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এফবিআই এবং কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা একত্রে কাজ করছে।
বেলুন ভূ-পতিত করার পর পাইলটদের অভিনন্দন জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মেরিল্যান্ডে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘আমি আমাদের বিমানচালকদের প্রশংসা করতে চাই। তারা সফলভাবে বেলুনটি ধ্বংস করেছে।’ অভিবাদন জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও। টুইটারে বলেন, কানাডা এই পদক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কার্যক্রমের জন্য আমরা একসাথে কাজ করে যাব। এ ঘটনায় বহুল আকাঙ্ক্ষিত ও পরিকল্পিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চীন সফর বাতিল করেন। সম্পর্কের টানাপোড়েন কমানোর পরিকল্পনা করেও যেন লাভ হয়নি। হয়েছে অবনতি। বেলুনের দায় স্বীকার করেছিল চীন। জানিয়েছে আবহাওয়া গবেষণার কাজে ব্যবহৃত বেলুনটি ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় ঢুকে পড়ে। তবুও হস্তান্তর না করে তা উড়িয়ে দেওয়ায় তা ভীষণভাবে গায়ে মেখেছে দেশটি। রোববার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চীন। বিবৃতিতে জানায়, ওয়াশিংটন ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে। এসব করে আন্তর্জাতিক অনুশীলন গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মনুষ্যবিহীন একটি বেসামরিক বেলুনকে আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীরা কাজ করেছে। এর জন্য দৃঢ় অসন্তোষ ও প্রতিবাদ জানানো হলো। যাচাই করার পর চীনের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছিল যে, এটি বেসামরিক। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে এতে সামরিক হুমকি নেই। পথ পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কেবলই একটি দুর্ঘটনা। চীন পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সেটি হস্তান্তরের কথা বলেছিল।’ এদিকে পেন্টাগণ শুরুতেই জানিয়েছিল বেলুনটিতে কোনো সামরিক ও শারীরিক হুমকি নেই। তারাই আবার চীনের ‘বেসামরিক ও গবেষণায় ব্যবহৃত’ হওয়ার দাবি অস্বীকার করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়বিশ্বাস বেলুনটি গুপ্তচরবৃত্তির কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘এটি স্পষ্টতই চীনের একটি নজরদারি বেলুন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা অতিক্রম করেছে। আমরা নিশ্চিত যে, এটি সংবেদনশীল সামরিক সাইটগুলো পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যেই ছাড়া হয়েছে।’ তিনি জানান, বেলুনে নজরদারি সরঞ্জাম বহন করা হয়েছে। আবহাওয়াসংক্রান্ত কার্যক্রম বা বেসামরিক গবেষণার সাথে এসব কোনোভাবেই যুক্ত না। চীনা বেলুনের ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় তাইওয়ান। ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের’ সহ্য করা উচিত নয় বলেও হুঙ্কার দেয় দেশটি। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন, অন্য দেশের আকাশসীমা এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে।’ চীনের সরকারকে অবিলম্বে এ ধরনের আচরণ বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে তাইওয়ান।