শত যুদ্ধে টিকেও ভূমিকম্পে শেষ
গুঁড়িয়ে গেল তুরস্কের ২০০০ বছরের দুর্গ
মার্জিয়া সুলতানা
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রোম, বাইজেনটাইন কিংবা অটোমান সাম্রাজ্যের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে ছিল ‘গাজিয়েনতেপ ক্যাসেল’। শত শত যুদ্ধ-বিগ্রহ-বিজয় তার ক্ষয় করতে পারেনি, অক্ষত ছিল প্রতিটা পাথর।
মাত্র এক মিনিটের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় যুগ যুগ ধরে গড়া সভ্যতা। সোমবার তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়েনতেপে ৭.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত করলে ২০০০ বছর পুরোনো এই দুর্গ লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
‘গাজিয়ানতেপ ক্যালেস’-খ্যাত ঐতিহাসিক এই দুর্গ প্রথম খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে হিট্টি সভ্যতায় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হতো। তার পরে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্য এটিকে প্রধান দুর্গে প্রসারিত করে। সে সময় প্রাসাদটিকে ব্যবহার করা হতো ‘ওয়াচ টাওয়ার’ হিসাবে। এতে ১২টি টাওয়ার এবং চার পাশে একটি পরিখা ছিল।
ইতিহাসজুড়েই এই জায়গাটি জয়-পরাজয়, পুনরায় দখল করার গল্প আছে। রোমান সাম্রাজ্য দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর দুর্গটি বাইজেন্টাইনদের কাছে চলে যায়। মধ্য বলকানের কৃষক পরিবার থেকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাসক হয়ে ওঠা সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান গাজিয়ানতেপ দুর্গ সম্প্রসারিত এবং সংস্কার করেছিলেন। আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে তিনি শুকনো পরিখা ও সুড়ঙ্গ তৈরি করেন। ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে দুর্গটির শাসন হারান খ্রিষ্টানরা। মক্কায় উদ্ভূত হওয়া উমাইয়া রাজবংশ এর দখলদারিত্ব গ্রহণ করে। এটি ৯৬২
সাল পর্যন্ত মুসলিমদের শাসনে ছিল। পরে বাইজেন্টাইনরা তা পুনরায় দখল করে। ১০৬৭ সালে সেলজুক সাম্রাজ্য বাইজেন্টাইনদের কাছ থেকে জয় করে নেয়। এছাড়া খ্রিষ্টান ক্রুসেডার, কর্দিশ শাসক সালাদিন প্রতিষ্ঠিত আইয়ুবিদ রাজবংশ এটিতে শাসন করে। গাজিয়ানতেপ ক্যাসেল অটোমানদের দখলে যায় ১৫১৬ সালে। এটি বৃহৎভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয় দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট খ্যাত সুলতান সুলেমানের আমলে। অটোমানরা ১৫৬৬ সাল অবধি তা দখলে রেখেছিল। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গাজিয়ানতেপ সম্মানসূচক ‘ওয়ারিয়র’ উপাধি লাভ করে। দুর্গটি বর্তমানে তুরস্কের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাওয়া ছবিতে দেখা যায়, দুর্গটির রেলিং ভেঙে পড়েছে। পাথরের খণ্ড রাস্তায় স্তূপ হয়ে আছে। দুর্গের পাশে অবস্থিত ঐতিহাসিক সিরভানি মসজিদের দেয়ালও আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
শত যুদ্ধে টিকেও ভূমিকম্পে শেষ
গুঁড়িয়ে গেল তুরস্কের ২০০০ বছরের দুর্গ
রোম, বাইজেনটাইন কিংবা অটোমান সাম্রাজ্যের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে ছিল ‘গাজিয়েনতেপ ক্যাসেল’। শত শত যুদ্ধ-বিগ্রহ-বিজয় তার ক্ষয় করতে পারেনি, অক্ষত ছিল প্রতিটা পাথর।
মাত্র এক মিনিটের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় যুগ যুগ ধরে গড়া সভ্যতা। সোমবার তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়েনতেপে ৭.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত করলে ২০০০ বছর পুরোনো এই দুর্গ লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
‘গাজিয়ানতেপ ক্যালেস’-খ্যাত ঐতিহাসিক এই দুর্গ প্রথম খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে হিট্টি সভ্যতায় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হতো। তার পরে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্য এটিকে প্রধান দুর্গে প্রসারিত করে। সে সময় প্রাসাদটিকে ব্যবহার করা হতো ‘ওয়াচ টাওয়ার’ হিসাবে। এতে ১২টি টাওয়ার এবং চার পাশে একটি পরিখা ছিল।
ইতিহাসজুড়েই এই জায়গাটি জয়-পরাজয়, পুনরায় দখল করার গল্প আছে। রোমান সাম্রাজ্য দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর দুর্গটি বাইজেন্টাইনদের কাছে চলে যায়। মধ্য বলকানের কৃষক পরিবার থেকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাসক হয়ে ওঠা সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান গাজিয়ানতেপ দুর্গ সম্প্রসারিত এবং সংস্কার করেছিলেন। আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে তিনি শুকনো পরিখা ও সুড়ঙ্গ তৈরি করেন। ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে দুর্গটির শাসন হারান খ্রিষ্টানরা। মক্কায় উদ্ভূত হওয়া উমাইয়া রাজবংশ এর দখলদারিত্ব গ্রহণ করে। এটি ৯৬২
সাল পর্যন্ত মুসলিমদের শাসনে ছিল। পরে বাইজেন্টাইনরা তা পুনরায় দখল করে। ১০৬৭ সালে সেলজুক সাম্রাজ্য বাইজেন্টাইনদের কাছ থেকে জয় করে নেয়। এছাড়া খ্রিষ্টান ক্রুসেডার, কর্দিশ শাসক সালাদিন প্রতিষ্ঠিত আইয়ুবিদ রাজবংশ এটিতে শাসন করে। গাজিয়ানতেপ ক্যাসেল অটোমানদের দখলে যায় ১৫১৬ সালে। এটি বৃহৎভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয় দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট খ্যাত সুলতান সুলেমানের আমলে। অটোমানরা ১৫৬৬ সাল অবধি তা দখলে রেখেছিল। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গাজিয়ানতেপ সম্মানসূচক ‘ওয়ারিয়র’ উপাধি লাভ করে। দুর্গটি বর্তমানে তুরস্কের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাওয়া ছবিতে দেখা যায়, দুর্গটির রেলিং ভেঙে পড়েছে। পাথরের খণ্ড রাস্তায় স্তূপ হয়ে আছে। দুর্গের পাশে অবস্থিত ঐতিহাসিক সিরভানি মসজিদের দেয়ালও আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছে।