যুক্তরাষ্ট্রে ৩ মাসে ১২৯ বন্দুক হামলা
নাশভিল স্কুলে সাবেক ছাত্রের ১৪ মিনিটের ‘কিলিং মিশন’
যুগান্তর ডেস্ক
২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই কমপক্ষে ১২৯টি বন্দুক হামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অনলাইনে বন্দুক সহিংসতা তথ্য সরবারাহকারী প্রতিষ্ঠান দ্য গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ (জিভিএ) থেকে এ তথ্য জানা যায়। জিভিএ অনুসারে, গত বছরের ১৯ মার্চ একদিনেই একশ বন্দুক হামলা চালানো হয়েছিল। এর আগে ২০২১ সালেও মার্চের শেষ দিনে একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সোমবার সকাল ১০টার দিকে টেনিসি রাজ্যের নাশভিলের এক বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলে বন্দুক হামলার পর এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সিএনএন। এতে তিন শিশু ও তিনজন প্রাপ্তবয়স্কসহ নিহত হয়েছে ৬ জন। স্কুলেরই সাবেক ছাত্র অড্রে হালে বন্দুক হামলাটি চালায়। প্রায় ১৪ মিনিটব্যাপী সাবেক এই ছাত্রের ‘কিলিং মিশনে’ নিহত হয় মোট ছয়জন। তাদের মধ্যে রয়েছে তিন প্রাপ্তবয়স্ক ও তিন শিশু। মেট্রোপলিটন নাশভিল পুলিশের দুই মিনিটের একটি নজরদারি ভিডিওতে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে হলওয়ে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সে সময় তার হাতে ছিল তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র। মঙ্গলবার এই ফুটেজটি প্রকাশ করেছে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনায় পুলিশের মুখপাত্র ডন অ্যারন এদিন বলেন, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে কভনেন্ট স্কুলে বন্দুকধারীর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পৌঁছানো পাঁচজন পুলিশ অফিসার স্কুলটির দ্বিতীয়তলা থেকেও গুলির শব্দ শুনতে পান। পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পুলিশের গাড়ির ওপরও হামলা চালিয়েছিল সেই বন্দুকধারী। এরপর স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে দুজন পুলিশ অফিসারের গুলিতে সেই বন্দুকধারী নিহত হয়। বন্দুকধারী নিহত হওয়ার পর শিশুদের স্কুল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, হালের কাছে তিনটি বন্দুক ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল সেমি অটোমেটিক রাইফেল। পুলিশের তালিকায় হালের নামে অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই। পুলিশের ধারণা, আগের ‘ক্ষোভ’ থেকে হালে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু কাগজ উদ্ধার করেছে। সেখানে স্কুলের প্রবেশ, বের হওয়ার পথগুলোসহ স্কুলটির বিস্তারিত ম্যাপ ছিল। পুলিশ এখন এসব খতিয়ে দেখছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হালে বন্দুক দিয়ে স্কুলে প্রবেশ দরজার কাচ ভেঙে প্রবেশ করেন। এরপর স্কুলের নির্জন করিডরে ঘুরে বেড়ান। একপর্যায়ে ‘শিশুদের মন্ত্রণালয়’ লেখা একটি ঘরের পাশ দিয়ে চলে যান। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, হালে নিজে সুরক্ষা বর্ম পরে এসেছিলেন। তার এক হাতে ছিল একটি রাইফেল। আর কোমরের বাঁ দিকে ঝুলছিল একই রাইফেল। ওপরের তলায় ওঠার আগে হালে নিচতলায় গুলি ছোড়েন। পুলিশের গাড়ি পৌঁছানোর পর হালে তাদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে। একটি গুলি এসে লাগে উইন্ডস্ক্রিনে। ভাঙা কাচের আঘাতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ দ্রুত ভেতরে ঢুকে হালেকে গুলি করে। হালের ঠিকানার সূত্র ধরে পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সেখানে তার বাবার সঙ্গে তারা কথা বলে। তার বাড়ি থেকে অনেকগুলো অস্ত্র পাওয়া গেছে। নাশভিল পুলিশের প্রধান জন ড্রেক বলেন, দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে, স্কুলের মানচিত্র এঁকে হামলা চালিয়েছিল ওই বন্দুকবাজ। এমনকি ধরা পড়লে আইনের সাহায্যে কীভাবে শাস্তি এড়ানো যায়, সে নিয়েও পড়াশোনা করে রেখেছিল। হামলার পর স্কুল ছেড়ে পালিয়ে যায় হালে। তবে বেশ কিছু কাগজপত্র ফেলে রাখে, সেখান থেকেই জানা গিয়েছে আরও বেশ কিছু জায়গায় হামলার পরিকল্পনা রয়েছে তার। প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকবাজের হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে। স্কুল থেকে শুরু করে ধর্মস্থান, বাদ পড়ছে না কিছু। বন্দুকসংক্রান্ত আইন পাশ হলেও থামছে না হামলার ঘটনা। সোমবারের ঘটনার পর মুখ খুলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেন, ‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। গোটা বিষয়টির দিকে কড়া নজর রাখছি। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের হৃদয় একেবারে ভেঙে গিয়েছে। কংগ্রেসের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুন তারা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
যুক্তরাষ্ট্রে ৩ মাসে ১২৯ বন্দুক হামলা
নাশভিল স্কুলে সাবেক ছাত্রের ১৪ মিনিটের ‘কিলিং মিশন’
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই কমপক্ষে ১২৯টি বন্দুক হামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অনলাইনে বন্দুক সহিংসতা তথ্য সরবারাহকারী প্রতিষ্ঠান দ্য গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ (জিভিএ) থেকে এ তথ্য জানা যায়। জিভিএ অনুসারে, গত বছরের ১৯ মার্চ একদিনেই একশ বন্দুক হামলা চালানো হয়েছিল। এর আগে ২০২১ সালেও মার্চের শেষ দিনে একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সোমবার সকাল ১০টার দিকে টেনিসি রাজ্যের নাশভিলের এক বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলে বন্দুক হামলার পর এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সিএনএন। এতে তিন শিশু ও তিনজন প্রাপ্তবয়স্কসহ নিহত হয়েছে ৬ জন। স্কুলেরই সাবেক ছাত্র অড্রে হালে বন্দুক হামলাটি চালায়। প্রায় ১৪ মিনিটব্যাপী সাবেক এই ছাত্রের ‘কিলিং মিশনে’ নিহত হয় মোট ছয়জন। তাদের মধ্যে রয়েছে তিন প্রাপ্তবয়স্ক ও তিন শিশু। মেট্রোপলিটন নাশভিল পুলিশের দুই মিনিটের একটি নজরদারি ভিডিওতে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে হলওয়ে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সে সময় তার হাতে ছিল তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র। মঙ্গলবার এই ফুটেজটি প্রকাশ করেছে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনায় পুলিশের মুখপাত্র ডন অ্যারন এদিন বলেন, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে কভনেন্ট স্কুলে বন্দুকধারীর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পৌঁছানো পাঁচজন পুলিশ অফিসার স্কুলটির দ্বিতীয়তলা থেকেও গুলির শব্দ শুনতে পান। পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পুলিশের গাড়ির ওপরও হামলা চালিয়েছিল সেই বন্দুকধারী। এরপর স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে দুজন পুলিশ অফিসারের গুলিতে সেই বন্দুকধারী নিহত হয়। বন্দুকধারী নিহত হওয়ার পর শিশুদের স্কুল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, হালের কাছে তিনটি বন্দুক ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল সেমি অটোমেটিক রাইফেল। পুলিশের তালিকায় হালের নামে অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই। পুলিশের ধারণা, আগের ‘ক্ষোভ’ থেকে হালে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু কাগজ উদ্ধার করেছে। সেখানে স্কুলের প্রবেশ, বের হওয়ার পথগুলোসহ স্কুলটির বিস্তারিত ম্যাপ ছিল। পুলিশ এখন এসব খতিয়ে দেখছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হালে বন্দুক দিয়ে স্কুলে প্রবেশ দরজার কাচ ভেঙে প্রবেশ করেন। এরপর স্কুলের নির্জন করিডরে ঘুরে বেড়ান। একপর্যায়ে ‘শিশুদের মন্ত্রণালয়’ লেখা একটি ঘরের পাশ দিয়ে চলে যান। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, হালে নিজে সুরক্ষা বর্ম পরে এসেছিলেন। তার এক হাতে ছিল একটি রাইফেল। আর কোমরের বাঁ দিকে ঝুলছিল একই রাইফেল। ওপরের তলায় ওঠার আগে হালে নিচতলায় গুলি ছোড়েন। পুলিশের গাড়ি পৌঁছানোর পর হালে তাদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে। একটি গুলি এসে লাগে উইন্ডস্ক্রিনে। ভাঙা কাচের আঘাতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ দ্রুত ভেতরে ঢুকে হালেকে গুলি করে। হালের ঠিকানার সূত্র ধরে পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সেখানে তার বাবার সঙ্গে তারা কথা বলে। তার বাড়ি থেকে অনেকগুলো অস্ত্র পাওয়া গেছে। নাশভিল পুলিশের প্রধান জন ড্রেক বলেন, দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে, স্কুলের মানচিত্র এঁকে হামলা চালিয়েছিল ওই বন্দুকবাজ। এমনকি ধরা পড়লে আইনের সাহায্যে কীভাবে শাস্তি এড়ানো যায়, সে নিয়েও পড়াশোনা করে রেখেছিল। হামলার পর স্কুল ছেড়ে পালিয়ে যায় হালে। তবে বেশ কিছু কাগজপত্র ফেলে রাখে, সেখান থেকেই জানা গিয়েছে আরও বেশ কিছু জায়গায় হামলার পরিকল্পনা রয়েছে তার। প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকবাজের হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে। স্কুল থেকে শুরু করে ধর্মস্থান, বাদ পড়ছে না কিছু। বন্দুকসংক্রান্ত আইন পাশ হলেও থামছে না হামলার ঘটনা। সোমবারের ঘটনার পর মুখ খুলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেন, ‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। গোটা বিষয়টির দিকে কড়া নজর রাখছি। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের হৃদয় একেবারে ভেঙে গিয়েছে। কংগ্রেসের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুন তারা।