মিশনে গিয়ে শত শত সন্তানের বাবা শান্তিরক্ষী!
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে দেশে অস্থিরতা দমনে জাতিসংঘ থেকে পাঠানো হয় শান্তিরক্ষা বাহিনী। আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করেন তারা। তবে মিশনে গিয়ে অসংখ্য পুরুষ সেনা-পুলিশ সদস্য স্থানীয় নারীদের ওপর চালান যৌন নিপীড়ন। অনেকে আবার অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেন। তাদের অনৈতিক কার্যক্রমে অধিকাংশ নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। গত ১০ বছরের এমন শত শত সন্তানের বাবা হয়েছেন শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। গর্ভে থাকা সেসব সন্তানের দায়িত্ব না নিয়েই কাপুরুষের মতো ফিরে যান নিজ দেশে বা অন্য কোনো নতুন দেশে। পরে তাদের ফেলা যাওয়া সন্তানদের নিয়ে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে মায়েদের জীবন। নিপীড়নের শিকার এসব নারীর অনেকেই সমাজের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রসবের পর সন্তান লালন-পালনে হিমশিম খাচ্ছেন বহু নারী। এককভাবে চালিয়ে যেতে হয় সংসারসহ সন্তানের দায়িত্ব। ফি দিতে না পারায় অনেক নারী তার সন্তানকে স্কুলেও পাঠাতে পারেন না। চলতি বছরের জুনে আফ্রিকা থেকে ৬০ জন শান্তিরক্ষীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে নিপীড়নের অভিযোগও রয়েছে। সিএনএন।
বিভিন্ন দেশের সামরিক-বেসামরিক জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ওপর অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতিসংঘ তাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৬৩টি পিতৃত্বের দাবি নথিভুক্ত করেছে। এমনই এক বিষাদময় অভিজ্ঞতার শিকার ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ হাইতির নাগরিক পলিন ফিলিপ। যমজ দুই সন্তানের মা হতে যাচ্ছেন শুনে প্রথমে বেশ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার খবরে পর মুহূর্তেই কেঁদে ফেলেন তিনি। কারণ তার অনাগত সন্তানের পিতা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য এবং সন্তানদের স্বীকৃতি না দিয়েই তিনি তার দেশে ফিরে গেছেন। দুই সন্তানের বাবা রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্সে জাতিসংঘের একজন পুলিশ সদস্য হিসাবে অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন। গর্ভধারণের বিষয়টি পলিন তাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। ২০১২ সালে যমজ পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্ম দেন পলিন। তার ২ মাস পরই ওই ব্যক্তি পলিন ও দুই সন্তানকে ফেলে নিজ দেশে ফিরে যান। হাইতির লেস কায়েস শহরের জোকেনসি জিন নামে এক নারী নিজের জীবনের করুণ কাহিনী বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। সেনেগালের এক শান্তিরক্ষীর সন্তানের মা তিনি। জোকেনসি বলেন, ‘একবার কল্পনা করুন তো, সন্তানের স্কুলের ফি জোগাড় করে বাসায় ফিরে দেখলেন সে ক্ষুধায় কান্না করছে। আপনার তখন কেমন লাগবে।’ সাহায্য সংস্থার আচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে বেশ্যার মতো আচরণ করে। কারণ আমরা গরিব।’ ২০১৩ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান একটি বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে জাতিসংঘের কর্মী ও ত্রাণকর্মীদের অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। কারণ এতে জাতিসংঘের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। বর্তমান মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘের দায়িত্বকে আরও সুশৃঙ্খল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ২০১৭ সালে তিনি ভুক্তভোগীদের অধিকার ও মর্যাদাকে অগ্রাধিকারের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য আইনজীবী নিযুক্ত করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেন। তবে পলিন ফিলিপসহ ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন নারীর দাবি, জাতিসংঘের এ সহায়তা খুবই সামান্য এবং তা নানা শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ। সন্তানের পিতৃপরিচয়, ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে জাতিসংঘের সহায়তা-এ ধরনের বেশিরভাগ সহায়তাই তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাননি। জাতিসংঘ অফিসের আচরণ সম্পর্কে এক নারী বলেন, ‘তারা আমাদের মানুষ বলেই মনে করে না।’