কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশার অবসান হবে কবে?

 কাজী সুলতানুল আরেফিন 
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের একটি সফল প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রাণকেন্দ্র ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’।

জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার (১৯৯৬) ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৮ সালে টুঙ্গিপাড়ার গীমাডাঙ্গায় স্থাপন করেন একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।

২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক ক্লিনিক স্থাপন করা হয় সারা দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে।

২০০০-পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয় কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প।

এই জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় বন্ধ ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছায়। ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পুনরায় সরকার গঠন করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি আবারও বিশেষ নজর দেন।

RCHCIB প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে নতুন ক্লিনিক নির্মাণ ও কর্মী নিয়োগ দিয়ে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার নতুন যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের অক্টোবর মাস হতে। কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের পদবির নামকরণ হয় ‘কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার’ বা সংক্ষেপে ‘সিএইচসিপি’।

দেশের একঝাঁক তরুণ-তরুণী স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে (৫২ ভাগ নারী, ৪৮ ভাগ পুরুষ) কমিউনিটি ক্লিনিকে তাদের কর্মজীবন শুরু করেন। প্রকল্পের অধীনে চাকরি হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও প্রত্যাশা থেকে স্ব স্ব এলাকায় নিয়োগকৃত কর্মীরা তাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে এ সেবা প্রদান চালিয়ে যেতে শুরু করেন নতুন উদ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের চাকরি রাজস্বকরণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক (আরসিএইচসিআইবি)।

পরবর্তীকালে দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে চিঠি প্রেরণের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

এরপর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) চাকরি স্থায়ীকরণ প্রসঙ্গে পরিচালক, প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশের সব সিভিল সার্জনদের অবহিত করে আরও একটি চিঠি ইস্যু করা হয়।

ইতিমধ্যে চলমান প্রকল্প শেষ হয়ে নতুন প্রকল্প শুরু হল। সেই প্রকল্পও শেষ হয়ে তৃতীয় সিবিএইচসি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হল কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের চাকরি রাজস্বকরণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কর্মীদের বেতন-ভাতা কনস্যুলেটেড হিসেবে প্রদান করা হয়।

সরকারি কোনো সুবিধাও তারা এখন পর্যন্ত পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে শুরু হল কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, মহাসমাবেশ কর্মসূচিসহ সর্বশেষ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দীর্ঘ এক মাস টানা অবস্থান কর্মসূচি।

এ কর্মসূচি চলাকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট গঠনের ঘোষণা দেন। একই বছর ৮ অক্টোবর জাতীয় সংসদে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন পাস হয় এবং গেজেট প্রকাশিত হয়। উক্ত আইনের ২৪ ধারায় কর্মীদের সরকারি চাকরির ন্যায় সব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রাখার কথা বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে আইনে কার্যকর হওয়ার দিন হতে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের সবকিছু কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইনে পরিচালিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

তবে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন বাস্তবায়ন হতে দেরি হওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মহোদয় স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠি জারি করা হয়। জারিকৃত চিঠিতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮ এর ধারা ৪(২) ২৪ বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

উক্ত নির্দেশনার পর আরও এক বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে; তবুও আইনটি বাস্তবায়নে গড়িমসি চলছে। এদিকে দিন দিন কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন এবং তাদের আর্থিক দুরবস্থা ও মনোকষ্ট চরম আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্ব পালনকালে বহু সিএইচসিপির অকাল মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, সরকার বা প্রকল্পের পক্ষ হতে মৃতকর্মীর পরিবারকে কোনোরকম আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় না; শুধুমাত্র একটি শোকবার্তা পাঠিয়েই কর্তৃপক্ষ দায় সারেন।

এতকিছুর পরও কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন; সেইসঙ্গে আশায় দিন গুনছেন- একদিন আইন অনুযায়ী সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসবেন তারা।

সিএইচসিপি, ফেনী

arefin.feni99@gmail.com

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন