অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশে গৃহপরিচারিকা মানে অসহায়, হতভাগ্য এক নারী। তার ওপর চলে গৃহকর্তা অথবা কর্ত্রীর নির্যাতন; তাকে খেতে দেয়া হয় কম, কখনও কখনও নির্যাতনের ফলে মারাও যায় সে।
এটাই যখন বাস্তবতা, তখন এক ব্যতিক্রমী ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম আমার এক প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে।
আমি পূর্ব রামপুরায় থাকি। আমার ফ্ল্যাটের ঠিক নিচের ফ্ল্যাটটিতে বসবাস করে দেশের খ্যাতনামা একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কর্মরত রুমানা। তার ঘরে ১০ বছর বয়সে এসেছিল গৃহপরিচারিকা শারমিন। মেয়েটির বয়স যখন ২০ বছর, তখন রুমানা আয়োজন করে তার বিয়ের। গত ১০ জুলাই মেয়েটির বিয়ে দেয়া হয়। গৃহপরিচারিকা শারমিনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর আগে সাজিয়ে আনা হয় পার্লার থেকে। ধুমধাম করে ভবনের ছাদে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ে। আমন্ত্রিতরা এসে খাবার খেয়ে টাকার অঙ্কে উপহার প্রদান করেন।
বিয়ের আসরেই রুমানা শারমিনের নতুন বরকে নগদ ৭০ হাজার টাকা দেয় একটি অটোরিকশা কেনার জন্য। ২৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনে দেয় একটি টেলিভিশন। এখানেই শেষ নয়। গত তিন বছর ধরে প্রতিবছর জাকাতের টাকা থেকে ১ লাখ টাকা শারমিনের জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে রুমানা। তিন বছরে সুদে-আসলে সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এই টাকা দিয়ে সে নবদম্পতির জন্য রংপুরে জমি কিনে দেবে ঠিক করেছে। বলা দরকার, শারমিন দম্পতি এখন রংপুরে বসবাস করছে। রুমানা আরও একটা কাজ করতে যাচ্ছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
সেই টাকা দিয়ে সে শারমিনের সংসারের টুকিটাকি জিনিস কিনে দেবে বলে মনস্থির করেছে। রুমানা শারমিনকে যেমন ভালোবাসে, শারমিনও তেমন ভালোবাসে রুমানাকে। গত দশ বছরে বেশ কয়েকবার শারমিনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। সে বেশিদিন থাকতে পারেনি। মায়ার টানে ফিরে এসেছে রুমানার ঘরে।
আমি আশা করব, রুমানার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের সব গৃহকর্তা- গৃহকর্ত্রী তাদের পরিচারিকার সঙ্গে মানবিক আচরণ করবেন।
পূর্ব রামপুরা, ঢাকা
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশে গৃহপরিচারিকা মানে অসহায়, হতভাগ্য এক নারী। তার ওপর চলে গৃহকর্তা অথবা কর্ত্রীর নির্যাতন; তাকে খেতে দেয়া হয় কম, কখনও কখনও নির্যাতনের ফলে মারাও যায় সে।
এটাই যখন বাস্তবতা, তখন এক ব্যতিক্রমী ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম আমার এক প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে।
আমি পূর্ব রামপুরায় থাকি। আমার ফ্ল্যাটের ঠিক নিচের ফ্ল্যাটটিতে বসবাস করে দেশের খ্যাতনামা একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কর্মরত রুমানা। তার ঘরে ১০ বছর বয়সে এসেছিল গৃহপরিচারিকা শারমিন। মেয়েটির বয়স যখন ২০ বছর, তখন রুমানা আয়োজন করে তার বিয়ের। গত ১০ জুলাই মেয়েটির বিয়ে দেয়া হয়। গৃহপরিচারিকা শারমিনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর আগে সাজিয়ে আনা হয় পার্লার থেকে। ধুমধাম করে ভবনের ছাদে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ে। আমন্ত্রিতরা এসে খাবার খেয়ে টাকার অঙ্কে উপহার প্রদান করেন।
বিয়ের আসরেই রুমানা শারমিনের নতুন বরকে নগদ ৭০ হাজার টাকা দেয় একটি অটোরিকশা কেনার জন্য। ২৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনে দেয় একটি টেলিভিশন। এখানেই শেষ নয়। গত তিন বছর ধরে প্রতিবছর জাকাতের টাকা থেকে ১ লাখ টাকা শারমিনের জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে রুমানা। তিন বছরে সুদে-আসলে সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এই টাকা দিয়ে সে নবদম্পতির জন্য রংপুরে জমি কিনে দেবে ঠিক করেছে। বলা দরকার, শারমিন দম্পতি এখন রংপুরে বসবাস করছে। রুমানা আরও একটা কাজ করতে যাচ্ছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
সেই টাকা দিয়ে সে শারমিনের সংসারের টুকিটাকি জিনিস কিনে দেবে বলে মনস্থির করেছে। রুমানা শারমিনকে যেমন ভালোবাসে, শারমিনও তেমন ভালোবাসে রুমানাকে। গত দশ বছরে বেশ কয়েকবার শারমিনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। সে বেশিদিন থাকতে পারেনি। মায়ার টানে ফিরে এসেছে রুমানার ঘরে।
আমি আশা করব, রুমানার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের সব গৃহকর্তা- গৃহকর্ত্রী তাদের পরিচারিকার সঙ্গে মানবিক আচরণ করবেন।
পূর্ব রামপুরা, ঢাকা