করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সচেতনতা
রাশেদা ইসলাম মুন্নী
০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে শৈথিল্য লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যদিকে ঋতু পরিবর্তনে শীতের আগমন অবধারিত। বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। গভীর রাত ও সকালের দিকে ঠাণ্ডার আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশে শীতকালে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
শীত ও বায়ুদূষণে অধিকতর সংক্রমণের আশঙ্কাও দেখা যায়। দূষিত বায়ুর কবলে পড়ে গ্রাম ও নগরে এমনিতেই সারা বছর আমাদের ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। তার মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আবির্ভূত হওয়ায় মানুষের উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
ইতোমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন- ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও জার্মানিতে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একই অবস্থা বিরাজমান। এসব দেশের সংবাদ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
যদিও তাপমাত্রা ওঠানামার সঙ্গে ভাইরাসের বাঁচা-মরার সম্পর্ক নেই; তারপরও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। এছাড়া শীতকালে বাতাস শুকনো ও আর্দ্রতা কম থাকায় ড্রপলেট তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মেঘলা বা শীতল আবহাওয়ায় অথবা শিশির পড়ার ফলে বাতাসে স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকতে পারে। এতে ড্রপলেটের মধ্যে থাকা ভাইরাসের আয়ু বেড়ে যায়। ভাইরাস যত বেশিদিন বেঁচে থাকে, সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও তত বৃদ্ধি পায়।
শীতের তীব্রতায় বাড়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। ঠাণ্ডাজনিত এ রোগগুলো সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। করোনা আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হল ফুসফুস। আর আমাদের দেশে শীতকালে মানুষের ফুসফুসজনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। যেমন হাঁপানি, ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কনজাংটিভাইটিস ও আর্থ্রাইটিস ইত্যাদির প্রকোপে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই।
ফলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের জন্য চরম অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি হবে। মূলত শ্বাসতন্ত্রের উপরের ও নিচের অংশের সংক্রমণে এ ভাইরাস দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটায়। তাই এটি শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের জন্য একটি বাড়তি ফ্যাক্টর হতে পারে।
শীতকালে ঠাণ্ডা আটকাতে সব বন্ধ করে রাখার প্রবণতা রয়েছে আমাদের। সেটি বাড়িতে যেমন; আবার গণপরিবহনেও তেমন। এ বদ্ধাবস্থায় একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। শীতের সময় মানুষের শরীরের আর্দ্রতা কম থাকে এবং শীতে রোদ কম থাকার ফলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর জোগান কমে যায়।
ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেকাংশ কমে যায়। এজন্য ভাইরাস খুব সহজেই আক্রান্ত করতে পারে আমাদের। তাই শীতকাল বা শীতের তীব্রতা পুরোপুরি শুরু হলে আমাদের পক্ষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়তে পারে।
শীত মৌসুমে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে দেশবাসীর সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সম্পূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন ও মেনে চলা জরুরি। সরকার ইতোমধ্যে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারের এ নীতি খুবই প্রশংসনীয়। তবে বাস্তবে এ নীতি পালন বা মানা হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করতে হবে। কেননা এখনও মাস্ক ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় সেবা মিলছে।
বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ও যৌথ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সচেতনতা
বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে শৈথিল্য লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যদিকে ঋতু পরিবর্তনে শীতের আগমন অবধারিত। বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। গভীর রাত ও সকালের দিকে ঠাণ্ডার আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশে শীতকালে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
শীত ও বায়ুদূষণে অধিকতর সংক্রমণের আশঙ্কাও দেখা যায়। দূষিত বায়ুর কবলে পড়ে গ্রাম ও নগরে এমনিতেই সারা বছর আমাদের ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। তার মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আবির্ভূত হওয়ায় মানুষের উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
ইতোমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন- ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও জার্মানিতে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একই অবস্থা বিরাজমান। এসব দেশের সংবাদ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
যদিও তাপমাত্রা ওঠানামার সঙ্গে ভাইরাসের বাঁচা-মরার সম্পর্ক নেই; তারপরও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। এছাড়া শীতকালে বাতাস শুকনো ও আর্দ্রতা কম থাকায় ড্রপলেট তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মেঘলা বা শীতল আবহাওয়ায় অথবা শিশির পড়ার ফলে বাতাসে স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকতে পারে। এতে ড্রপলেটের মধ্যে থাকা ভাইরাসের আয়ু বেড়ে যায়। ভাইরাস যত বেশিদিন বেঁচে থাকে, সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও তত বৃদ্ধি পায়।
শীতের তীব্রতায় বাড়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। ঠাণ্ডাজনিত এ রোগগুলো সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। করোনা আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হল ফুসফুস। আর আমাদের দেশে শীতকালে মানুষের ফুসফুসজনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। যেমন হাঁপানি, ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কনজাংটিভাইটিস ও আর্থ্রাইটিস ইত্যাদির প্রকোপে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই।
ফলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের জন্য চরম অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি হবে। মূলত শ্বাসতন্ত্রের উপরের ও নিচের অংশের সংক্রমণে এ ভাইরাস দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটায়। তাই এটি শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের জন্য একটি বাড়তি ফ্যাক্টর হতে পারে।
শীতকালে ঠাণ্ডা আটকাতে সব বন্ধ করে রাখার প্রবণতা রয়েছে আমাদের। সেটি বাড়িতে যেমন; আবার গণপরিবহনেও তেমন। এ বদ্ধাবস্থায় একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। শীতের সময় মানুষের শরীরের আর্দ্রতা কম থাকে এবং শীতে রোদ কম থাকার ফলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর জোগান কমে যায়।
ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেকাংশ কমে যায়। এজন্য ভাইরাস খুব সহজেই আক্রান্ত করতে পারে আমাদের। তাই শীতকাল বা শীতের তীব্রতা পুরোপুরি শুরু হলে আমাদের পক্ষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়তে পারে।
শীত মৌসুমে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে দেশবাসীর সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সম্পূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন ও মেনে চলা জরুরি। সরকার ইতোমধ্যে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারের এ নীতি খুবই প্রশংসনীয়। তবে বাস্তবে এ নীতি পালন বা মানা হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করতে হবে। কেননা এখনও মাস্ক ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় সেবা মিলছে।
বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ও যৌথ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ