রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিকল্প নেই
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৬,৫৫,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
বিগত তিন দশক ধরে মিয়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে ৩,০০,০০০-এর অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থান করছে। এ মুহূর্তে কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাস্তুছাড়া হওয়ায় বাংলাদেশ তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়ায় এবং তাদের থাকার জন্য ক্যাম্প তৈরি করে দেওয়াসহ অন্য সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা এসব সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করে তাদের থাকার ক্যাম্পগুলোকে অপরাধের কারখানায় পরিণত করছে। খুন, ধর্ষণ, চোরাকারবারি, ছিনতাই, মানবপাচার, অস্ত্রপাচার, মাদকদ্রব্য সরবরাহসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কাজে তারা লিপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া গত চার বছরে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দলবদ্ধ হামলা, সংঘর্ষ ও অতর্কিত হামলায় ২৩২ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা এ দেশের মানুষদেরও হত্যা করছে। আনসার ক্যাম্পে আক্রমণ করে ক্যাম্পপ্রধানকে হত্যা করেছে। ১১টি অস্ত্র লুট করে নিয়েছে। পাসপোর্ট, এনআইডি জালিয়াতি করে, এমনকি বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গারা।
আগে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার হয়ে আসত আর এখন ক্রিস্টাল মেথের মতো ভয়ংকর মাদকও আসছে মিয়ানমার থেকে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাঙালিরাও মিলেমিশে মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারের ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
আগে অস্ত্র আসত বাইরের দেশ থেকে আর এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২ হাজার ৮৫০ জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৯৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগই হয়েছে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে। রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশি তরুণ, যুবক এবং কিশোরদের সঙ্গে মিশতে শুরু করছে, বন্ধুত্ব করছে, যা বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। রোহিঙ্গারা সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে তাদের অপরাধ প্রবণতাও ছড়িয়ে যাচ্ছে পাহাড় থেকে সমতলে।
রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ তাদের পাশে ছিল, আছে, সেটা নিশ্চয় প্রশংসার দাবিদার; কিন্তু আমরা কেউ চাই না, তাদের জন্য আমাদের ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের বাংলাদেশ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। যেভাবে তাদের অপরাধের বিস্তার হচ্ছে, সেভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিত অন্ধকারে ধাবিত হবে। এমনিতেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে; তার ওপর রোহিঙ্গাদের বসবাস দীর্ঘ চার বছর ধরে। আর কত! এবার তাদের প্রত্যাবাসন জরুরি। তাদের অপরাধমূলক কাজকর্মের ইতি টানতে আমি মনে করি, প্রত্যাবাসন ছাড়া বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
শিক্ষার্থী, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ
laijuakther76@gmail.com
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিকল্প নেই
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৬,৫৫,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
বিগত তিন দশক ধরে মিয়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে ৩,০০,০০০-এর অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থান করছে। এ মুহূর্তে কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাস্তুছাড়া হওয়ায় বাংলাদেশ তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়ায় এবং তাদের থাকার জন্য ক্যাম্প তৈরি করে দেওয়াসহ অন্য সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা এসব সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করে তাদের থাকার ক্যাম্পগুলোকে অপরাধের কারখানায় পরিণত করছে। খুন, ধর্ষণ, চোরাকারবারি, ছিনতাই, মানবপাচার, অস্ত্রপাচার, মাদকদ্রব্য সরবরাহসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কাজে তারা লিপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া গত চার বছরে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দলবদ্ধ হামলা, সংঘর্ষ ও অতর্কিত হামলায় ২৩২ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা এ দেশের মানুষদেরও হত্যা করছে। আনসার ক্যাম্পে আক্রমণ করে ক্যাম্পপ্রধানকে হত্যা করেছে। ১১টি অস্ত্র লুট করে নিয়েছে। পাসপোর্ট, এনআইডি জালিয়াতি করে, এমনকি বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গারা।
আগে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার হয়ে আসত আর এখন ক্রিস্টাল মেথের মতো ভয়ংকর মাদকও আসছে মিয়ানমার থেকে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাঙালিরাও মিলেমিশে মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারের ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
আগে অস্ত্র আসত বাইরের দেশ থেকে আর এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২ হাজার ৮৫০ জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৯৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগই হয়েছে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে। রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশি তরুণ, যুবক এবং কিশোরদের সঙ্গে মিশতে শুরু করছে, বন্ধুত্ব করছে, যা বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। রোহিঙ্গারা সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে তাদের অপরাধ প্রবণতাও ছড়িয়ে যাচ্ছে পাহাড় থেকে সমতলে।
রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ তাদের পাশে ছিল, আছে, সেটা নিশ্চয় প্রশংসার দাবিদার; কিন্তু আমরা কেউ চাই না, তাদের জন্য আমাদের ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের বাংলাদেশ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। যেভাবে তাদের অপরাধের বিস্তার হচ্ছে, সেভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিত অন্ধকারে ধাবিত হবে। এমনিতেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে; তার ওপর রোহিঙ্গাদের বসবাস দীর্ঘ চার বছর ধরে। আর কত! এবার তাদের প্রত্যাবাসন জরুরি। তাদের অপরাধমূলক কাজকর্মের ইতি টানতে আমি মনে করি, প্রত্যাবাসন ছাড়া বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
শিক্ষার্থী, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ
laijuakther76@gmail.com