দখল-দূষণে বিপন্ন নরসুন্দা
jugantor
দখল-দূষণে বিপন্ন নরসুন্দা

  লুৎফর রহমান নাঈম  

২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদ-নদী মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ দেশে। তাই নদ-নদীর সঙ্গে এ দেশের মানুষের সখ্য, প্রেম সুদূর অতীত থেকেই। এমনকি নদীপথই এক সময় মানুষের যাতায়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে ছিল। কিন্তু অবহেলা, অনাদর বা প্রাকৃতিক কারণে দেশের অনেক নদ-নদীর এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। নদী রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপও নেই। দখল-দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে অসংখ্য নদী। পলি জমে অনেক নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা, ঘরবাড়ি, শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে আর এভাবেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক নদী। তেমনি কিশোরগঞ্জ জেলার এক ঐতিহ্যেবাহী নদী ‘নরসুন্দা’। এ নদীর আরেক নাম ‘নাগচিনি’।

নরসুন্দা নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে পুনঃখননের জন্য সরকারিভাবে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও নদীটির করুণ অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি; বরং কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতরের অংশ এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শহরের কাচারি বাজার, বড় বাজারসহ কয়েকটি বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা ও জবাই করা পশুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হচ্ছে মানুষকে। নদীর পাড় দিয়ে চলতে হলে নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। নদীর পাড় দিয়ে বানানো ওয়াকওয়ের অবস্থা আরও শোচনীয়। নদীর তীর বলতে যে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও নান্দনিক পরিবেশ অনুমান করা হয়, সেটি এখানে অনুপস্থিত।

শহরের ব্যস্ততম জায়গা গৌরাঙ্গ বাজার ব্রিজ বা বড় বাজার ব্রিজ থেকে নদীটি দেখে যে কারও মন খারাপ হতে পারে। চারদিকে ময়লার স্তূপ আর আবর্জনা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। কিন্তু এক সময় এ নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, ট্রলার যাতায়াত করত। নদীতে পাওয়া যেত নানা রকমের মাছ। এখানকার দিন-রাতগুলো মুখরিত থাকত হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে। বর্ষায় পানিতে থাকত ভরপুর। এখন এসব শুধু ইতিহাস। ময়লা-আবর্জনায় নদীটি ভরাট হয়ে দিনেদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কচুরিপানা আর ময়লার জন্য পানি প্রবাহের সামান্য সুযোগও নেই। মাঝেমধ্যে কোথাও ডোবার মতো অল্প পানি জমে আছে। নদী ভরাট করে বসানো হয়েছে অস্থায়ী বাজার। প্রশাসন ও পৌরসভা নদীটি রক্ষায় কার্যকর কিছুই করেনি। নদীটির অস্তিত্ব এখন পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে। নরসুন্দার অবয়ব থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে নদীর চিহ্ন। কঙ্কালসার অস্তিত্ব নিয়ে শুধু টিকে আছে নদীর নামটি। অস্তিত্ব বিলীন হতে যাওয়া নরসুন্দা রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা উচিত। সরকারকে দেশের নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নরসুন্দা নদীর দুপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট, দালান-কোঠা অপসারণ করে নদীটি খনন করে হাওড়ের সঙ্গে পানি চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে নরসুন্দা আবার প্রাণ ফিরে পাবে। নরসুন্দার সঙ্গে এখানকার জনসাধারণের রয়েছে গভীর মমত্ববোধ আর প্রবল ভালোবাসার টান। নরসুন্দাকে বাঁচাতে হবে।

lfrahman24@gmail.cm

দখল-দূষণে বিপন্ন নরসুন্দা

 লুৎফর রহমান নাঈম 
২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদ-নদী মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ দেশে। তাই নদ-নদীর সঙ্গে এ দেশের মানুষের সখ্য, প্রেম সুদূর অতীত থেকেই। এমনকি নদীপথই এক সময় মানুষের যাতায়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে ছিল। কিন্তু অবহেলা, অনাদর বা প্রাকৃতিক কারণে দেশের অনেক নদ-নদীর এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। নদী রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপও নেই। দখল-দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে অসংখ্য নদী। পলি জমে অনেক নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা, ঘরবাড়ি, শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে আর এভাবেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক নদী। তেমনি কিশোরগঞ্জ জেলার এক ঐতিহ্যেবাহী নদী ‘নরসুন্দা’। এ নদীর আরেক নাম ‘নাগচিনি’।

নরসুন্দা নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে পুনঃখননের জন্য সরকারিভাবে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও নদীটির করুণ অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি; বরং কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতরের অংশ এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শহরের কাচারি বাজার, বড় বাজারসহ কয়েকটি বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা ও জবাই করা পশুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হচ্ছে মানুষকে। নদীর পাড় দিয়ে চলতে হলে নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। নদীর পাড় দিয়ে বানানো ওয়াকওয়ের অবস্থা আরও শোচনীয়। নদীর তীর বলতে যে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও নান্দনিক পরিবেশ অনুমান করা হয়, সেটি এখানে অনুপস্থিত।

শহরের ব্যস্ততম জায়গা গৌরাঙ্গ বাজার ব্রিজ বা বড় বাজার ব্রিজ থেকে নদীটি দেখে যে কারও মন খারাপ হতে পারে। চারদিকে ময়লার স্তূপ আর আবর্জনা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। কিন্তু এক সময় এ নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, ট্রলার যাতায়াত করত। নদীতে পাওয়া যেত নানা রকমের মাছ। এখানকার দিন-রাতগুলো মুখরিত থাকত হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে। বর্ষায় পানিতে থাকত ভরপুর। এখন এসব শুধু ইতিহাস। ময়লা-আবর্জনায় নদীটি ভরাট হয়ে দিনেদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কচুরিপানা আর ময়লার জন্য পানি প্রবাহের সামান্য সুযোগও নেই। মাঝেমধ্যে কোথাও ডোবার মতো অল্প পানি জমে আছে। নদী ভরাট করে বসানো হয়েছে অস্থায়ী বাজার। প্রশাসন ও পৌরসভা নদীটি রক্ষায় কার্যকর কিছুই করেনি। নদীটির অস্তিত্ব এখন পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে। নরসুন্দার অবয়ব থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে নদীর চিহ্ন। কঙ্কালসার অস্তিত্ব নিয়ে শুধু টিকে আছে নদীর নামটি। অস্তিত্ব বিলীন হতে যাওয়া নরসুন্দা রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা উচিত। সরকারকে দেশের নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নরসুন্দা নদীর দুপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট, দালান-কোঠা অপসারণ করে নদীটি খনন করে হাওড়ের সঙ্গে পানি চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে নরসুন্দা আবার প্রাণ ফিরে পাবে। নরসুন্দার সঙ্গে এখানকার জনসাধারণের রয়েছে গভীর মমত্ববোধ আর প্রবল ভালোবাসার টান। নরসুন্দাকে বাঁচাতে হবে।

lfrahman24@gmail.cm

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন