শতবর্ষের আলোয় আলোকিত তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশন
jugantor
শতবর্ষের আলোয় আলোকিত তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশন

  তোফাজ্জল হোসেন (লিপু)  

২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

১৯২২ সালে গ্রামের দরিদ্র ও শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রত্যয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর এটি মানিকগঞ্জ জেলার পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হিসাবে আবির্ভূত হয়। তৎকালীন জমিদার সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায় চৌধুরী তার পিতার নামে ১৯২২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিদ্যালয় মানিকগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিদ্যালয়।

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে দেশব্যাপী যে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল, তার প্রভাবে মানিকগঞ্জে গঠিত হয় মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ‘মাতৃভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদ’। বিপ্লবী ডা. এম এন নন্দী, তার ভাই প্রমথনাথ নন্দী ও আফসার উদ্দিন মাস্টারের প্রেরণায় আন্দোলন ক্রমশ বিস্তৃত হতে থাকে। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে লিফলেট বিতরণ করে। তেরশ্রীতে মিছিল বের করার কারণে মিছিলে নেতৃত্বদানকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার হুলিয়া জারি করেছিল। মো. ওয়াজ উদ্দিন, মো. রেহাজ উদ্দিন, ভূপেন্দ্রনাথ দাস হাসি, নিরঞ্জন বিহারী বসু, মণিন্দ্রনাথ সরকারসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ৪২ দিন কারাভোগের পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ভাষা আন্দোলন থেকে তারা বিরত হননি।

স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদান

বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হাকিম ও মন্তোষ কুমার পাল, আব্দুর রহমান ঠাকুর, আফছার উদ্দিন মাস্টার, আব্দুল মতিন, ওয়াজ উদ্দিন মাস্টার প্রমুখ ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও এখানকার অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১২ মার্চ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে বিদ্যালয় মাঠে প্রতিরোধ অনুশীলন শুরু হয়। বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপিত হলে রাজাকার ও আলবদররা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে খবর দেয় এবং ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তেরশ্রী আক্রমণ করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায়চৌধুরীসহ ৪৩ জনকে হত্যা করে। পাশাপাশি তেরশ্রীর বিভিন্ন জনপদে বাড়িঘরে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ওই শহিদদের স্মরণে বিদ্যালয়সংলগ্ন স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়।

শতবর্ষের আলোয় আলোকিত এ বিদ্যাপীঠ অসংখ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, কৃষিবিদ, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবী, সর্বোপরি ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরি করেছে, যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে ও দেশের বাইরে কর্মরত রয়েছেন। ২৮-২৯ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের শতবর্ষ অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। এই মিলনমেলা সফল হোক। প্রগতির পথপরিক্রমায় শতবর্ষী এ বিদ্যালয়টির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করছি।

সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার ও তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশনের সাবেক শিক্ষার্থী

শতবর্ষের আলোয় আলোকিত তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশন

 তোফাজ্জল হোসেন (লিপু) 
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

১৯২২ সালে গ্রামের দরিদ্র ও শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রত্যয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর এটি মানিকগঞ্জ জেলার পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হিসাবে আবির্ভূত হয়। তৎকালীন জমিদার সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায় চৌধুরী তার পিতার নামে ১৯২২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিদ্যালয় মানিকগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিদ্যালয়।

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে দেশব্যাপী যে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল, তার প্রভাবে মানিকগঞ্জে গঠিত হয় মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ‘মাতৃভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদ’। বিপ্লবী ডা. এম এন নন্দী, তার ভাই প্রমথনাথ নন্দী ও আফসার উদ্দিন মাস্টারের প্রেরণায় আন্দোলন ক্রমশ বিস্তৃত হতে থাকে। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে লিফলেট বিতরণ করে। তেরশ্রীতে মিছিল বের করার কারণে মিছিলে নেতৃত্বদানকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার হুলিয়া জারি করেছিল। মো. ওয়াজ উদ্দিন, মো. রেহাজ উদ্দিন, ভূপেন্দ্রনাথ দাস হাসি, নিরঞ্জন বিহারী বসু, মণিন্দ্রনাথ সরকারসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ৪২ দিন কারাভোগের পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ভাষা আন্দোলন থেকে তারা বিরত হননি।

স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদান

বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হাকিম ও মন্তোষ কুমার পাল, আব্দুর রহমান ঠাকুর, আফছার উদ্দিন মাস্টার, আব্দুল মতিন, ওয়াজ উদ্দিন মাস্টার প্রমুখ ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও এখানকার অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১২ মার্চ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে বিদ্যালয় মাঠে প্রতিরোধ অনুশীলন শুরু হয়। বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপিত হলে রাজাকার ও আলবদররা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে খবর দেয় এবং ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তেরশ্রী আক্রমণ করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায়চৌধুরীসহ ৪৩ জনকে হত্যা করে। পাশাপাশি তেরশ্রীর বিভিন্ন জনপদে বাড়িঘরে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ওই শহিদদের স্মরণে বিদ্যালয়সংলগ্ন স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়।

শতবর্ষের আলোয় আলোকিত এ বিদ্যাপীঠ অসংখ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, কৃষিবিদ, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবী, সর্বোপরি ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরি করেছে, যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে ও দেশের বাইরে কর্মরত রয়েছেন। ২৮-২৯ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের শতবর্ষ অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। এই মিলনমেলা সফল হোক। প্রগতির পথপরিক্রমায় শতবর্ষী এ বিদ্যালয়টির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করছি।

সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার ও তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশনের সাবেক শিক্ষার্থী

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন