বাংলা ভাষা আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনের ধাপ
jugantor
বাংলা ভাষা আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনের ধাপ

  সাইফ শোভন  

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

অনেকভাবেই সমাজে পরিবর্তন আসতে পারে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে এ পরিবর্তন আসতে পারে, অর্থনৈতিক কারণে পরিবর্তন আসতে পারে; আবার প্রাকৃতিক কারণেও একটি সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কাজটি ত্বরিত ঘটে যেতে পারে। আসলে পরিবর্তন যেভাবেই আসুক না কেন, তা যে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে যায়-আধুনিক সমাজ বিজ্ঞানীরা তা আবিষ্কার করেছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও যা প্রত্যক্ষ করা যায়।

১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন পাশ হয়। সাম্প্রদায়িক মুসলীম লীগের অধিকাংশই সামন্তবাদী হলেও তারা জমিদারি প্রথা বিরোধী আইন পাশ করেন। অধিকাংশ জমিদার-তালুকদার হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় তারা এর প্রতিবাদ না করে ভারতে চলে যান। তবে মুসলমান জমিদার-তালুকদাররা রয়ে যান; যদিও আইন তৈরি করে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের কারণে তাদের শোষণের শেঁকড় কাটা পড়ে। ক্রমান্বয়ে তাদের সামাজিক প্রভূত্বের ভিত্তিটা দুর্বল হয়ে যায়; পরিণামে তারা রাজনৈতিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়ে।

১৯৫২ সালে মুসলিম লীগ সরকারের ‘উজিরে আলা’ (মুখ্যমন্ত্রী) নুরুল আমিনের নির্দেশে ভাষা আন্দোলনকারীদের প্রতি পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে বেশকিছু মানুষ নিহত ও আহত হয়। এ খবর ছড়িয়ে সারা দেশে। জনগন প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে। জমিদার-তালুকদার অর্থাৎ সামন্ত শ্রেণিভুক্ত মুসলিম লীগারদের করার কিছুই ছিল না। পাকিস্তানি আমলাতন্ত্রের আশ্রয়ে থেকে তারা এ আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে।

১৯৫১ সালের জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন আর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন একসূত্রে গাঁথা। একটি ছিল গ্রন্থিচ্ছেদের ঘটনা; অন্যটি ছিল সদ্য শিকল কাটা পাখির ডানা ঝাপটানি। মাতৃভাষায় রাষ্ট্রীয় কার্যাদি পরিচালনার দাবি আসলে সাধারণ মানুষের দাবি ছিল। বড়লোকদের ভাষা ছিল ফারসি, আরবি ও ইংরেজি। সুতরাং বাংলা ভাষার আন্দোলন বড়লোকদের বিরুদ্ধে, সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে, ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন; অর্থাৎ জোতদার-জমিদারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গেই একসূত্রে গাঁথা ছিল।

জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে গেছে। সামাজিক জীবনে জমিদারদের প্রভাব প্রায় অন্তর্হিত। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বীকৃত। কেবল তাই নয়, বাংলা ভাষীদের একটি রাষ্ট্রও গড়ে উঠেছে। এ পরিবর্তন আমাদের প্রজম্মের জীবনকালেই এসেছে। সুতরাং জনগণের অধিকাংশের আকাক্সক্ষার অনুকূলে আগামী দিনের পরিবর্তন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ঘটতেই পারে।

সাবেক ছাত্রনেতা ও নির্বাহী সম্পাদক, পাক্ষিক অন্যচিত্র, ঢাকা

বাংলা ভাষা আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনের ধাপ

 সাইফ শোভন 
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

অনেকভাবেই সমাজে পরিবর্তন আসতে পারে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে এ পরিবর্তন আসতে পারে, অর্থনৈতিক কারণে পরিবর্তন আসতে পারে; আবার প্রাকৃতিক কারণেও একটি সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কাজটি ত্বরিত ঘটে যেতে পারে। আসলে পরিবর্তন যেভাবেই আসুক না কেন, তা যে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে যায়-আধুনিক সমাজ বিজ্ঞানীরা তা আবিষ্কার করেছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও যা প্রত্যক্ষ করা যায়।

১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন পাশ হয়। সাম্প্রদায়িক মুসলীম লীগের অধিকাংশই সামন্তবাদী হলেও তারা জমিদারি প্রথা বিরোধী আইন পাশ করেন। অধিকাংশ জমিদার-তালুকদার হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় তারা এর প্রতিবাদ না করে ভারতে চলে যান। তবে মুসলমান জমিদার-তালুকদাররা রয়ে যান; যদিও আইন তৈরি করে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের কারণে তাদের শোষণের শেঁকড় কাটা পড়ে। ক্রমান্বয়ে তাদের সামাজিক প্রভূত্বের ভিত্তিটা দুর্বল হয়ে যায়; পরিণামে তারা রাজনৈতিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়ে।

১৯৫২ সালে মুসলিম লীগ সরকারের ‘উজিরে আলা’ (মুখ্যমন্ত্রী) নুরুল আমিনের নির্দেশে ভাষা আন্দোলনকারীদের প্রতি পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে বেশকিছু মানুষ নিহত ও আহত হয়। এ খবর ছড়িয়ে সারা দেশে। জনগন প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে। জমিদার-তালুকদার অর্থাৎ সামন্ত শ্রেণিভুক্ত মুসলিম লীগারদের করার কিছুই ছিল না। পাকিস্তানি আমলাতন্ত্রের আশ্রয়ে থেকে তারা এ আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে।

১৯৫১ সালের জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন আর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন একসূত্রে গাঁথা। একটি ছিল গ্রন্থিচ্ছেদের ঘটনা; অন্যটি ছিল সদ্য শিকল কাটা পাখির ডানা ঝাপটানি। মাতৃভাষায় রাষ্ট্রীয় কার্যাদি পরিচালনার দাবি আসলে সাধারণ মানুষের দাবি ছিল। বড়লোকদের ভাষা ছিল ফারসি, আরবি ও ইংরেজি। সুতরাং বাংলা ভাষার আন্দোলন বড়লোকদের বিরুদ্ধে, সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে, ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন; অর্থাৎ জোতদার-জমিদারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গেই একসূত্রে গাঁথা ছিল।

জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে গেছে। সামাজিক জীবনে জমিদারদের প্রভাব প্রায় অন্তর্হিত। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বীকৃত। কেবল তাই নয়, বাংলা ভাষীদের একটি রাষ্ট্রও গড়ে উঠেছে। এ পরিবর্তন আমাদের প্রজম্মের জীবনকালেই এসেছে। সুতরাং জনগণের অধিকাংশের আকাক্সক্ষার অনুকূলে আগামী দিনের পরিবর্তন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ঘটতেই পারে।

সাবেক ছাত্রনেতা ও নির্বাহী সম্পাদক, পাক্ষিক অন্যচিত্র, ঢাকা

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন