এক বছরেও বিসিএস পরীক্ষা সম্পন্ন হবে না?
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, ‘কমিশন পুরো পরীক্ষা পদ্ধতিতেই সংস্কার আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিখিত, মৌখিক বা প্রিলিমিনারিতেও সংস্কার হচ্ছে। আরও কিছু বিষয়ের মতো মৌখিক পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, এমনকি জেলার নামও জানতে চাওয়া হবে না। পরীক্ষক চাকরিপ্রার্থীর রোল নম্বর ছাড়া কিছুই জানতে চাইবে না।’ বলা প্রয়োজন-বর্তমানে বাংলাদেশের সব চাকরির পরীক্ষায় ভাইভায় সর্বোচ্চ নম্বর ১০০ থাকলেও বিসিএসে ২০০ রাখা হয়েছে, যা অসংগতিপূর্ণ ও এতে স্বজনপ্রীতি হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। বিসিএস বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় মিলে গেলে প্রশ্ন শিথিল করার গুঞ্জনও শোনা যায়, যা থেকে পিএসসির বেরিয়ে আসা উচিত।
আমাদের সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে-প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। সংবিধানের ২৯ (২) অনুচ্ছেদে আরও বলা আছে-শুধু ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক রাষ্ট্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবে না। এসব ক্ষেত্রে তার প্রতি কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। বাস্তবে পিএসসি কি সংবিধান অনুসরণ করছে? বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর, অন্যদিকে বিসিএস পরীক্ষায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর রাখা হয়েছে, যা অসংগতিপূর্ণ। বেতনসীমার দিকে তাকালে দেখি-বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় নিয়োগের পর চাকরির প্রারম্ভিক বেতন ষষ্ঠ গ্রেডে। অন্যদিকে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগের পর চাকরির প্রারম্ভিক বেতন ৯ম গ্রেডে, যা অসংগতিপূর্ণ।
বস্তুত বিশ্বের কোনো দেশেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় এত জট ও জটিলতা নেই, যা আমাদের দেশে আছে। তাছাড়া পিএসসি তার কাজ শুরু করতে না করতেই যেন গোড়ায় গলদ হয়ে গেল। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পিছিয়েছে। তাই লিখিত ও ভাইভাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিছিয়ে যাবে। আর তা হলে তো অনেক শিক্ষার্থীর বয়স একদিকে যেমন ফুরিয়ে যাবে; অন্যদিকে হতাশা ক্রমান্বয়ে তাদের গ্রাস করবে। এত জটিলতা থাকা সত্ত্বেও বিসিএস বা সরকারি চাকরিতে বয়সও বাড়ানো হচ্ছে না। তাহলে একজন বিসিএস প্রার্থী কী করবে? কারণ, একজন ছাত্রের স্নাতক (সম্মান) শেষ করতেই তো কমপক্ষে ২৭ বছর লাগে। এজন্য অনেকের প্রশ্ন-পিএসসি কি তাহলে পূর্বের বিসিএস জটসহ বর্তমানের এসব জটিলতা কাটাতে পারবে না? আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা লালফিতার দৌরাত্ম্যের কারণেই কি এমনটা হচ্ছে? তাহলে কি এক বছরেও বিসিএসের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে না?
শিক্ষার্থী, মাহিগঞ্জ কলেজ, রংপুর
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এক বছরেও বিসিএস পরীক্ষা সম্পন্ন হবে না?
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, ‘কমিশন পুরো পরীক্ষা পদ্ধতিতেই সংস্কার আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিখিত, মৌখিক বা প্রিলিমিনারিতেও সংস্কার হচ্ছে। আরও কিছু বিষয়ের মতো মৌখিক পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, এমনকি জেলার নামও জানতে চাওয়া হবে না। পরীক্ষক চাকরিপ্রার্থীর রোল নম্বর ছাড়া কিছুই জানতে চাইবে না।’ বলা প্রয়োজন-বর্তমানে বাংলাদেশের সব চাকরির পরীক্ষায় ভাইভায় সর্বোচ্চ নম্বর ১০০ থাকলেও বিসিএসে ২০০ রাখা হয়েছে, যা অসংগতিপূর্ণ ও এতে স্বজনপ্রীতি হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। বিসিএস বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় মিলে গেলে প্রশ্ন শিথিল করার গুঞ্জনও শোনা যায়, যা থেকে পিএসসির বেরিয়ে আসা উচিত।
আমাদের সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে-প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। সংবিধানের ২৯ (২) অনুচ্ছেদে আরও বলা আছে-শুধু ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক রাষ্ট্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবে না। এসব ক্ষেত্রে তার প্রতি কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। বাস্তবে পিএসসি কি সংবিধান অনুসরণ করছে? বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর, অন্যদিকে বিসিএস পরীক্ষায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর রাখা হয়েছে, যা অসংগতিপূর্ণ। বেতনসীমার দিকে তাকালে দেখি-বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় নিয়োগের পর চাকরির প্রারম্ভিক বেতন ষষ্ঠ গ্রেডে। অন্যদিকে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগের পর চাকরির প্রারম্ভিক বেতন ৯ম গ্রেডে, যা অসংগতিপূর্ণ।
বস্তুত বিশ্বের কোনো দেশেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় এত জট ও জটিলতা নেই, যা আমাদের দেশে আছে। তাছাড়া পিএসসি তার কাজ শুরু করতে না করতেই যেন গোড়ায় গলদ হয়ে গেল। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পিছিয়েছে। তাই লিখিত ও ভাইভাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিছিয়ে যাবে। আর তা হলে তো অনেক শিক্ষার্থীর বয়স একদিকে যেমন ফুরিয়ে যাবে; অন্যদিকে হতাশা ক্রমান্বয়ে তাদের গ্রাস করবে। এত জটিলতা থাকা সত্ত্বেও বিসিএস বা সরকারি চাকরিতে বয়সও বাড়ানো হচ্ছে না। তাহলে একজন বিসিএস প্রার্থী কী করবে? কারণ, একজন ছাত্রের স্নাতক (সম্মান) শেষ করতেই তো কমপক্ষে ২৭ বছর লাগে। এজন্য অনেকের প্রশ্ন-পিএসসি কি তাহলে পূর্বের বিসিএস জটসহ বর্তমানের এসব জটিলতা কাটাতে পারবে না? আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা লালফিতার দৌরাত্ম্যের কারণেই কি এমনটা হচ্ছে? তাহলে কি এক বছরেও বিসিএসের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে না?
শিক্ষার্থী, মাহিগঞ্জ কলেজ, রংপুর