আগাম মৌসুমি ফল

 শামীম আহমেদ 
২৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বর্তমানে দেশে ফলের মৌসুম চলছে। শতকরা প্রায় ৬০ শতাংশ ফল গ্রীষ্ম-বর্ষা ঋতুতে হয়। ফলের প্রধান মাস জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়। এ সময় বেশি ফল পাওয়া যায়। বিশেষ করে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, তরমুজ, পেয়ারা প্রভৃতি। কিন্তু এসব দেশীয় সুস্বাদু ফল পরিপক্ব হওয়ার আগেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বাগানে আম পরিপক্ব না হলেও বাজারে বিভিন্ন জাতের আকর্ষণীয় পাকা আম শোভা পাচ্ছে। অপরিপক্ব আম পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকারক কার্বাইড, ইথোফেন, ইথিকন ও রাইপেনজাতীয় রাসায়নিক, যা আমের ওপর স্প্রে করে ঢেকে দিলে ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যে আকর্ষণীয় রং ধারণ করে।

সাধারণ ভোক্তার বোঝায় উপায় নেই, এটি যে কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়েছে। এতে যেমন আমের প্রকৃত স্বাদ ও পুষ্টি থেকে ভোক্তা বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনই বিভিন্ন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকছে। একইভাবে লিচু বড় ও আকর্ষণীয় করতে গুটি থাকতেই জৈব উজ্জীবক ট্রায়াকন্টানল, ম্যানকোজেব ছিটিয়ে গাছ ভিজিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ছত্রাকনাশক ল্যাম্বডা সাইহ্যালেথ্রিন প্রয়োগ করার পর ফল একটু বড় হলে নিয়মিত বিরতিতে কার্বেন্ডাজিম ও সাইফারমেথ্রিন নামের কীটনাশক ছিটানো হয়। লিচু রসালো হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে ম্যানকোজেব, ট্রায়াকন্টানল, বোরন ও হরমোনজাতীয় নানা ওষুধ ছিটানো হয়। এসব ছিটালে লিচুর রং লাল টকটকে হয়। এসব রাসায়নিকের সঠিক মাত্রা না জেনেই ইচ্ছামতো ব্যবহার যেন আরও ভয়ংকর অবস্থার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাঁঠালের ব্যাপারেও ব্যতিক্রম নয়। অপরিপক্ব কাঁঠাল পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম-কার্বাইড, ইথাইড, কপার সালফেট, পটাশের তরল দ্রবণ, কার্বনের ধোঁয়া, রাইপেন জাতীয় রাসায়নিক। কাঁঠালের বোঁটায় ঢুকিয়ে দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার ১৮-২০ ঘণ্টার মধ্যে অপরিপক্ব কাঁঠাল পেকে মিষ্টি গন্ধ ছাড়ায়। এসব রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফল খাওয়ার ফলে, বদহজম, পেটের রোগ, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যানসারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া নারীরা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে। শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিরাপদ ফল প্রাপ্তিতে তাই সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ বাজার মনিটরিং, ভোক্তা অধিকারের কার্যক্রম বাড়ানো, জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন