পথশিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করুন

 জুনায়েদ মাসুদ 
২৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

কোনো জাতিকে উন্নত হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে প্রত্যেক মানুষকে নিয়ে চিন্তা করতে হয়। দেশের উন্নয়ন শুধু একশ্রেণির মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ এবং ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। রপ্তানি খাতেও সুখ্যাতি রয়েছে। নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানিয়ে বিশ্বব্যাংককে জবাব দেওয়ারও হিম্মত রাখি আমরা। আমাদের দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, বাল্যবিবাহ ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, স্থায়ী উন্নয়নের সব শর্তই প্রায় পূরণ হয়ে গেছে।

কিন্তু আমরা রাতের অন্ধকারে যখন বিভিন্ন রাস্তার অলিগলি, বিভিন্ন পার্ক, খেলার মাঠ, রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট এলাকা দেখি, তখন বাংলাদেশের এত উন্নয়নমূলক নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও আমরা নিরাশ হই। লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আমরা বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারলেও নিজ দেশের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ রেললাইন, লঞ্চঘাট, রাস্তায় ঘুমায়। যখন নিজের ছোটো ভাইয়ের সমবয়সি ক্ষুধার্ত জীর্ণশীর্ণ চেহারাগুলো দেখতে পাই, তখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা আমার কাছে শুধু পরিসংখ্যানই মনে হয়।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪ লাখ পথশিশু আছে, ইউনিসেফের হিসাবে তা ১০ লাখ। একটু চিন্তা করুন, একটা দেশের ১০ লাখের বেশি মানুষের তথা শুধু শিশুদের থাকার জায়গা নেই। তার ওপর পুষ্টি, শিক্ষা, স্যানিটেশনের বঞ্চনা তো আছেই। রয়েছে মাদকাসক্তি সমস্যাও। ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি যুগান্তরে প্রকাশিত এক নিবন্ধের তথ্যমতে, পথশিশুদের প্রায় ৮৫ শতাংশ মাদকাসক্ত। এখন প্রশ্ন হলো-প্রত্যেক মানুষ যদি জাতির অংশ হয়, তাহলে এই ১০ লাখ মানুষ যারা শুধু শিশু, তারা কি জাতির অংশ নয়? এ দেশ তাদেরও, তারাও জাতির অংশ। যতদিন দেশের সব মানুষের উন্নয়ন করা যাবে না, ততদিন জাতি পেছনেই রয়ে যাবে। রাষ্ট্রের উচিত জাতির এ মানুষগুলোর জন্য স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে তারা সমাজের বোঝা নয়, সম্পদে পরিণত হয়। জাতির উন্নয়নে তাদেরও অংশীদার করতে হবে। আবার নাগরিক হিসাবে আমাদেরও হতে হবে সচেতন। বদলাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি। নিজ নিজ জায়গা থেকে পথশিশুদের উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে। জাতির অংশ হিসাবে এটা আমাদের দায়িত্ব।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন