সুশিক্ষার আঁতুড়ঘর পরিবার
পারিবারিক শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিবারের যে পরিবেশে শিশুরা বেড়ে উঠবে, সে পরিবেশই তাদের মস্তিষ্কে গেঁথে থাকবে। কারণ শিশু অনুকরণপ্রিয়। ছোট্ট বাচ্চার সামনে যেটা করা হয়, সে সেটা করতে চেষ্টা করে। এ চেষ্টা করতে করতে পরিবারের বড়দের কাজ, আচার-আচরণ সব তারা রপ্ত করে নেয়। শিশু কাদার মতো, নরম কাদা দিয়ে কত রকমের জিনিস বানায় কুমাররা। শুকিয়ে গেলে আর কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। তখন কিছু করতে গেলে মাটি ভেঙে যায়। তেমনই শিশুও, সাধারণত আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত যা শেখা হয় এর প্রতিফলন পরবর্তী জীবনে পড়ে। জন্ম থেকে এ বয়স পর্যন্ত শিশু পরিবারের লোকেদের সঙ্গেই থাকে। এ সময় সুশৃঙ্খল পরিবারে বড় হলে শিশু বড় হয়ে তাই হবে আর উচ্ছৃঙ্খল পরিবারে বড় হলে শিশু বড় হয়ে উচ্ছৃঙ্খলই হবে। এমন প্রমাণ সমাজে অনেক আছে। আধুনিকতার নামে বর্তমানে পারিবারিক শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সন্তানদের অনেক অন্যায় আবদার প্রশ্রয় দেন মা-বাবা। স্কুল জীবনে দামি স্মার্টফোন, দামি মোটরসাইকেল, গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে আড্ডা দেওয়া এ প্রজন্মের জন্য ভালো নয়, যা মা-বাবা সহজভাবেই মেনে নেন। অতিআদর আর স্বাধীনতার নামে এসব উচ্ছৃঙ্খলতার প্রশ্রয়ের প্রভাব সমাজে আমরা দেখতে পাচ্ছি। চরমভাবে নৈতিক অবক্ষয়ের পথে সমাজের অধিকাংশ ঘর। স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা সাধারণ সৌজন্যবোধ, বড়দের সম্মান, সালাম কিছুই করতে চায় না। আধুনিকতার নামে নির্লজ্জ হচ্ছে তারা। খুন-ধর্ষণ অহরহ হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া বা এমন টিনএজারদের মধ্যে দেখা যায় প্রেমের প্রস্তাব নাকচ করলেই খুনের পথ বেছে নেয়। কিশোর গ্যাং এখন অলিতে-গলিতে। শিশু জন্মের পর মা-বাবা অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে তাদের তিলে তিলে বড় করে তোলেন। তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করেন। সেই শিশুটি বড় হয়ে মা বাবাকেই মারতে উদ্যত হয়। মা-বাবাকে খুনের নজিরও সমাজে আছে। বৃদ্ধাশ্রমের দিকে তাকালে বোঝা যায় শুরুতেই সন্তানের প্রতি তাদের শিক্ষার ঘাটতি ছিল। তাই মা-বাবাসহ পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত শিশুকে শুরু থেকেই সঠিক শিক্ষা দেওয়া। ‘মাতৃস্নেহের তুলনা হয় না তবে অতিরিক্ত স্নেহ সন্তানের অকল্যাণ বয়ে আনে।’ এ কথাটি মাথায় রেখে সন্তানকে আদরের পাশাপাশি শাসনেও রাখতে হবে। এদিকে মায়ের ভূমিকা বেশি। সন্তানের অনেক দোষ মায়েরা বাবার কাছ থেকে আড়াল করেন। আড়াল করতে করতে এক সময় সেই সন্তান মাকেও আর ভয় পায় না। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, ক্ষতিকর হয়ে ওঠে তার কার্যকলাপ। তাই স্কুল-কলেজে পড়ানোর পাশাপাশি সুশিক্ষিত হওয়ার শিক্ষাটাও পরিবার থেকেই দিতে হবে। যে শিশুটি তার বাবাকে দেখবে সৎ ও আদর্শবান, সুন্দর চরিত্রের; সে বড় হয়ে তার বাবাকে অনুসরণ করতে চেষ্টা করবে। আবার যে ছেলেটি তার বাবার হাত ধরে মসজিদে যাবে নামাজের জন্য, সে শিশুটি বড় হয়ে যে পরিবেশেই থাকুক ছোটবেলার সেই স্মৃতি মনে করে হলেও মসজিদে যাবে নামাজের জন্য। যে শিশুটি তার মাকে দেখবে, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ধৈর্যশীল ও সংসারে মনোযোগী; সে শিশু বড় হয়ে মাকে অনুসরণ করে নিজের জীবন পরিচালনার চেষ্টা করবে। বাবা-মায়ের সততা, শ্রম, জীবনযাপনের ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠবে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো। যার প্রতিফলন ঘটবে ওই শিশুর পরবর্তী জীবনে। বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলা, গুরুজনের প্রতি দায়িত্ব পালন, শ্রদ্ধা করা, ছোটদের প্রতি আদর-শাসন এগুলো দেখে শিশুরা বড় হলে বাস্তব জীবনে তারা মা-বাবাসহ সব গুরুজনদের সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে। ছোট থেকেই শিশুদের হাতে তুলে দিতে হবে নানা ধরনের বই। ক্লাসের বইয়ের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে তাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে। ধর্মীয় বিষয়গুলোও শুদ্ধভাবে তাদের শেখাতে চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের সবাই মিলেমিশে বাস করা, আপদে বিপদে পাশে থাকা, সবার প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে শিশুর মনকে জাগ্রত করতে হবে। নৈতিকতা, সামাজিকতা, ধর্মীয় বিষয়ে গুরুত্ব আদবকায়দা, বিনয়, নম্রতা-ভদ্রতা সার্বিক মানবিক গুণের শিক্ষা পরিবার থেকেই দিতে হবে।
শিক্ষক ও কলামিস্ট
সুশিক্ষার আঁতুড়ঘর পরিবার
ডা. নূরজাহান নীরা
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পারিবারিক শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিবারের যে পরিবেশে শিশুরা বেড়ে উঠবে, সে পরিবেশই তাদের মস্তিষ্কে গেঁথে থাকবে। কারণ শিশু অনুকরণপ্রিয়। ছোট্ট বাচ্চার সামনে যেটা করা হয়, সে সেটা করতে চেষ্টা করে। এ চেষ্টা করতে করতে পরিবারের বড়দের কাজ, আচার-আচরণ সব তারা রপ্ত করে নেয়। শিশু কাদার মতো, নরম কাদা দিয়ে কত রকমের জিনিস বানায় কুমাররা। শুকিয়ে গেলে আর কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। তখন কিছু করতে গেলে মাটি ভেঙে যায়। তেমনই শিশুও, সাধারণত আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত যা শেখা হয় এর প্রতিফলন পরবর্তী জীবনে পড়ে। জন্ম থেকে এ বয়স পর্যন্ত শিশু পরিবারের লোকেদের সঙ্গেই থাকে। এ সময় সুশৃঙ্খল পরিবারে বড় হলে শিশু বড় হয়ে তাই হবে আর উচ্ছৃঙ্খল পরিবারে বড় হলে শিশু বড় হয়ে উচ্ছৃঙ্খলই হবে। এমন প্রমাণ সমাজে অনেক আছে। আধুনিকতার নামে বর্তমানে পারিবারিক শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সন্তানদের অনেক অন্যায় আবদার প্রশ্রয় দেন মা-বাবা। স্কুল জীবনে দামি স্মার্টফোন, দামি মোটরসাইকেল, গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে আড্ডা দেওয়া এ প্রজন্মের জন্য ভালো নয়, যা মা-বাবা সহজভাবেই মেনে নেন। অতিআদর আর স্বাধীনতার নামে এসব উচ্ছৃঙ্খলতার প্রশ্রয়ের প্রভাব সমাজে আমরা দেখতে পাচ্ছি। চরমভাবে নৈতিক অবক্ষয়ের পথে সমাজের অধিকাংশ ঘর। স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা সাধারণ সৌজন্যবোধ, বড়দের সম্মান, সালাম কিছুই করতে চায় না। আধুনিকতার নামে নির্লজ্জ হচ্ছে তারা। খুন-ধর্ষণ অহরহ হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া বা এমন টিনএজারদের মধ্যে দেখা যায় প্রেমের প্রস্তাব নাকচ করলেই খুনের পথ বেছে নেয়। কিশোর গ্যাং এখন অলিতে-গলিতে। শিশু জন্মের পর মা-বাবা অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে তাদের তিলে তিলে বড় করে তোলেন। তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করেন। সেই শিশুটি বড় হয়ে মা বাবাকেই মারতে উদ্যত হয়। মা-বাবাকে খুনের নজিরও সমাজে আছে। বৃদ্ধাশ্রমের দিকে তাকালে বোঝা যায় শুরুতেই সন্তানের প্রতি তাদের শিক্ষার ঘাটতি ছিল। তাই মা-বাবাসহ পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত শিশুকে শুরু থেকেই সঠিক শিক্ষা দেওয়া। ‘মাতৃস্নেহের তুলনা হয় না তবে অতিরিক্ত স্নেহ সন্তানের অকল্যাণ বয়ে আনে।’ এ কথাটি মাথায় রেখে সন্তানকে আদরের পাশাপাশি শাসনেও রাখতে হবে। এদিকে মায়ের ভূমিকা বেশি। সন্তানের অনেক দোষ মায়েরা বাবার কাছ থেকে আড়াল করেন। আড়াল করতে করতে এক সময় সেই সন্তান মাকেও আর ভয় পায় না। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, ক্ষতিকর হয়ে ওঠে তার কার্যকলাপ। তাই স্কুল-কলেজে পড়ানোর পাশাপাশি সুশিক্ষিত হওয়ার শিক্ষাটাও পরিবার থেকেই দিতে হবে। যে শিশুটি তার বাবাকে দেখবে সৎ ও আদর্শবান, সুন্দর চরিত্রের; সে বড় হয়ে তার বাবাকে অনুসরণ করতে চেষ্টা করবে। আবার যে ছেলেটি তার বাবার হাত ধরে মসজিদে যাবে নামাজের জন্য, সে শিশুটি বড় হয়ে যে পরিবেশেই থাকুক ছোটবেলার সেই স্মৃতি মনে করে হলেও মসজিদে যাবে নামাজের জন্য। যে শিশুটি তার মাকে দেখবে, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ধৈর্যশীল ও সংসারে মনোযোগী; সে শিশু বড় হয়ে মাকে অনুসরণ করে নিজের জীবন পরিচালনার চেষ্টা করবে। বাবা-মায়ের সততা, শ্রম, জীবনযাপনের ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠবে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো। যার প্রতিফলন ঘটবে ওই শিশুর পরবর্তী জীবনে। বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলা, গুরুজনের প্রতি দায়িত্ব পালন, শ্রদ্ধা করা, ছোটদের প্রতি আদর-শাসন এগুলো দেখে শিশুরা বড় হলে বাস্তব জীবনে তারা মা-বাবাসহ সব গুরুজনদের সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে। ছোট থেকেই শিশুদের হাতে তুলে দিতে হবে নানা ধরনের বই। ক্লাসের বইয়ের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে তাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে। ধর্মীয় বিষয়গুলোও শুদ্ধভাবে তাদের শেখাতে চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের সবাই মিলেমিশে বাস করা, আপদে বিপদে পাশে থাকা, সবার প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে শিশুর মনকে জাগ্রত করতে হবে। নৈতিকতা, সামাজিকতা, ধর্মীয় বিষয়ে গুরুত্ব আদবকায়দা, বিনয়, নম্রতা-ভদ্রতা সার্বিক মানবিক গুণের শিক্ষা পরিবার থেকেই দিতে হবে।
শিক্ষক ও কলামিস্ট
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023