সাপে কাটার চিকিৎসা ও সচেতনতা
আহমেদ বায়েজীদ
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাপ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরীসৃপ প্রজাতির এ প্রাণীটির বসবাস বিশ্বের প্রায় সর্বত্র। বনাঞ্চল, জলাশয়, পাহাড় কিংবা আবাসিক এলাকা-সর্বত্রই সাপের বসবাস। বিশ্বের সাপের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর বিশ্বে ৪৫ থেকে ৫৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। বাংলাদেশেও সাপের সংখ্যা কম নয়। গ্রামাঞ্চল, বনাঞ্চল এমনকি শহরেও দেখা মেলে সাপের। তাই সাপে কাটার বিষয়ে সচেতনতা খুবই জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ৯৪ প্রজাতির সাপ আছে। এর মধ্যে ২৬ প্রজাতির সাপ বিষাক্ত, যেগুলোর দংশনে মৃত্যু কিংবা অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে। তবে এর মধ্যে ১২ প্রজাতির সাপ রয়েছে সামুদ্রিক। তাই এগুলো থেকে সাধারণ মানুষের বিপদের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। বাকি ১৪টির মধ্যে কালাজ, শঙ্খিনী, কালো কালাজ, ছোট কালো কালাজ, খইয়া গোখরো ও কেউটে-এ সাপগুলো লোকালয়ে দেখা যায়। এমনকি ঘরেও বাসা বাঁধতে পারে। তাই এগুলো সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক থাকা জরুরি। এছাড়া চন্দ্রবোড়া গোত্রের তিন ধরনের বিষাক্ত সাপও লোকালয়ে বাস করে।
অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনসিডিসি) দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপের তথ্যমতে, প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এতে মৃত্যু হয় সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষের। এ দেশে সাপের কামড়ের ৯৫ শতাংশ ঘটনা গ্রামীণ এলাকায় ঘটে। বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বেশি দেখা যায়। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ এখনো সাপের কামড়ের চিকিৎসা হিসাবে ওঝার ওপর নির্ভরশীল। যদিও ওঝার ঝাড়ফুঁকে সাপের বিষ নামানোর বিষয়টি পুরোপুরি কাল্পনিক। বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপে বিষ না থাকায় ওঝাদের প্রতি গ্রামের মানুষের বিশ্বাস জন্মায়। নির্বিষ সাপে কাটলেও তারা মনে করেন ওঝার ঝাড়ফুঁকে রোগী সুস্থ হয়েছে। যেটি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিষাক্ত সাপে কাটা ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। দেরি হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে গ্রামাঞ্চলে সাপের কাটা রোগীর চিকিৎসা সহজলভ্য নয়। বাংলাদেশ যেসব অ্যান্টিভেনম আমদানি করে সেগুলো জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোয় দেওয়া হয়; কিন্তু সেখানে সব চিকিৎসক অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে অভিজ্ঞ নন। লক্ষণ দেখে বিষের ধরন আন্দাজ করা ও এন্টিভেনম প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সর্বত্র দক্ষ চিকিৎসক নেই। আবার এমন অনেক গ্রাম আছে যেখান থেকে উপজেলা কিংবা জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে রোগীর জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। যেহেতু সাপে দংশনের ঘটনা গ্রামাঞ্চলেই বেশি, তাই এর চিকিৎসাও গ্রাম পর্যায়ে সহজলভ্য করা প্রয়োজন। গ্রামীণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও অ্যান্টিভেনম রাখার ব্যবস্থা করতে পারলে মৃত্যুর সংখ্যা কমবে। প্রতিটি ক্লিনিকে না হলেও অন্তত প্রতি ইউনিয়নে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকা দরকার-যেখানে সাপে কাটার চিকিৎসা হবে। এতে যেমন বিষাক্ত সাপের ছোবল খাওয়া লোকদের জীবন বাঁচবে, পাশাপাশি হাতের কাছে উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া গেলে ওঝা-বদ্যির ওপর মানুষের অন্ধবিশ্বাস কমে সচেতনতা তৈরি হবে।
দাড়িয়াল, বরিশাল