মিঠে কড়া সংলাপ
দুবাইয়ের চিঠি
প্রায় দুই সপ্তাহ হলো দুবাই এসেছি। আমার দুবাই আসার দুটি কারণ ছিল। প্রথমটি হলো, আমি একজন লাংসের পুরোনো রোগী। এ অবস্থায় কিছুদিন আগে ঢাকার গুলশানের একটি হাসপাতালে লাংসের সিটি স্ক্যান করিয়ে রিপোর্ট হাতে পেয়ে দেখি, রিপোর্ট অনুযায়ী আমার লাংস সম্পূর্ণ ভালো। লাংসের কোথাও কোনো ত্রুটি বা অসুখ-বিসুখ নেই। অথচ ২০১৪ সালে আমেরিকার ডাক্তার সেখানে সিটি স্ক্যান করে বলেছিলেন, আমার লাংসের অবস্থা বেশ খারাপ। যে ইনফেকশন হয়েছে তা কোনোদিন ভালো হবে না, সবসময় মনিটরিংয়ে রেখে ওষুধ খেতে হবে। অথচ ঢাকার ডাক্তার সাহেব তার রিপোর্টে আমার লাংসকে সম্পূর্ণ ভালো বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এ অবস্থায় রিপোর্টটি দেখে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক অজয় বাবুকে বিষয়টি একটু জোরেশোরে বলায় তিনি লোক পাঠিয়ে রিপোর্টটি ফেরত নিয়ে নতুন করে রিপোর্ট তৈরি করে দিলে দেখা গেল, সেখানে আমার লাংসের এন্তার দোষ-ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি এসব নিয়ে আর ঝামেলা না বাড়িয়ে যেহেতু প্রায় তিন বছর দেশের বাইরে কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠেনি, তাই একটু নড়াচড়া করাসহ ডাক্তার দেখানোর জন্য দুবাই চলে এসেছিলাম। কারণ অন্য দেশে কোয়ারেন্টিনসহ অন্যান্য ঝামেলা পোহাতে হয় আর আমেরিকাও বহুদূর, তাই মন টানল না।
আর দ্বিতীয় কারণটা কিছুটা গৌণ বিবেচিত হলেও একটি বিষয় দেখার জন্য অনুসন্ধিৎসু মনে আমি দুবাই আসতে চেয়েছিলাম। আর তা হলো, একটি প্রাইভেট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দুবাই রেসিডেন্সি ভিসা করে দেওয়ার জন্য বারবার মেসেজ দেওয়ায় আমি একদিন তাদের একটি সেমিনারে যোগ দিয়ে কিছুটা দোটানায় পড়ে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও আমার রেসিডেন্সি নেই বিধায় চিকিৎসা ইত্যাদি কারণে দুবাইয়ে রেসিডেন্সি ভিসা থাকলে কেমন হয় তা সরেজমিন দেখার ইচ্ছা হচ্ছিল। কারণ সেমিনারে যোগ দিয়ে বুঝেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে শত শত লোক রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, বসবাস করছেন।
অতঃপর দুবাই এসে যা দেখলাম, তাতে অবস্থা অনেকটা অবাক হওয়ার মতোই। সারা বিশ্বের কাছে দুবাই এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবারিত। সারা বছর ধরে এখানে এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের আনাগোনা। রাস্তাঘাট, দালানপাট সবকিছুতেই নতুনত্বের ছাপ। রাস্তার ধারে ফুলের সমারোহ। এক কথায়, দুবাই নগরীকে এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যে, দিনে দিনে তা রূপের রানি হিসাবে দেশি-বিদেশিদের আকৃষ্ট করে চলেছে। আমাদের দেশেরও অনেক ধনী ব্যক্তি এখানে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। পাশাপাশি হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক এখানে কর্মরত। আমার আসার দিনে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে প্রায় ২০০-২৫০ শ্রমিক আসতে দেখলাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দুবাই বিমানবন্দরে কিউতে যখন ট্যুরিস্টদের ডাকা হলো, তখন দেখলাম, এ ২০০-২৫০ শ্রমিকের সবাই ট্যুরিস্ট কিউতে চলে এলেন! আমার সামনের ও পেছনের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, তারা সবাই অবৈধ শ্রমিক হিসাবে এখানে কাজ করতে এসেছেন এবং তাদের সবাইকে ৪০-৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করে ইমিগ্রেশন পার হতে হয়েছে! আবার দুবাই এসে হোটেলে উঠে দেখলাম ভারত, নেপাল থেকেও এমন অনেক অবৈধ শ্রমিক এসে এখানে কাজ করছেন। তবে তারা জানালেন, তাদের দেশে ইমিগ্রেশনে কোনো ঘুষ বা অতিরিক্ত অর্থ তাদের প্রদান করতে হয়নি। যাক সে কথা। অন্য প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
দুবাইয়ের ফাকিহ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বাংলাদেশি ডাক্তার শাকিব নাজিরের সঙ্গে আগেই কথা বলে এসেছিলাম। তিনি একজন কার্ডিওলজিস্ট। ইতঃপূর্বে ঢাকার বারডেম ও এ্যাপোলো হাসপাতালে কাজ করেছেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এ সন্তান কার্ডিওলোজিস্ট হিসাবে দুবাইয়ে স্বনামধন্য। দুবাইয়ে আসার আগে সর্বশেষ তিনি লন্ডনে কার্ডিওলজিস্ট হিসাবে কমর্রত ছিলেন। অতঃপর সৌদি আরবের বিনিয়োগে দুবাই সিলিকন ওয়েসিসে ফাকিহ ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এখানে চাকরি নিয়ে চলে আসেন। আমি তাকে দিয়ে আমার হার্ট, ক্যারোটিড চেক আপ করিয়ে লাংসের ডাক্তারের কাছে যাব এমন সময় আমার গা-হাত-পা ব্যথা শুরু হওয়ায় করোনা পরীক্ষা করিয়ে দেখা গেল, আমি করোনা আক্রান্ত। পরে আমার স্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায়, ডা. সাকিব নাজির আমাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। দিন-রাত আসা যাওয়ার মাধ্যমে তিনি খোঁজখবর নিতে থাকলেন। বাসা থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করে আমাদের চাঙা রাখার চেষ্টা করলেন। তিনি এবং তার স্ত্রী ‘রাক্সানজা’ ভাবিও আসা যাওয়া শুরু করলেন এবং এভাবে একপর্যায়ে তারা দুজনও করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়লেন! আমরা দুজন রোগী এখন চারজনে পরিণত হলাম। কিন্তু কেউ রোগী হলাম এমন মনে হলো না। কারণ শারীরিক দিক থেকে আমরা সবাই ফিট বা সুস্থবোধ করে যাচ্ছি। কারও কোনো সিম্পটম নেই। আমরা এখনো মেলামেশা করে যাচ্ছি। কিন্তু পরপর দুবার নমুনা পরীক্ষার পরও আমাদের দুজনের কারও রেজাল্ট নেগেটিভ হচ্ছে না। ফলে দেশেও ফিরতে পারছি না। এদিকে হোটেলে থাকা-খাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছে। গাঁটের টাকাকড়িও প্রায় শেষ। ডাক্তার সাকিব ধার দিচ্ছেন। এমন ডাক্তার জীবনেও দেখিনি, আর দেখব বলেও মনে হয় না। এখন আল্লাহ আল্লাহ করছি কবে নেগেটিভ হবে আর কবে বাড়ি ফিরব।
আজকের লেখাটির শেষাংশে বলতে চাই, ঢাকায় আমার লাংসের সিটি স্ক্যানে ভুল রিপোর্ট না এলে এ যাত্রা হয়তো আমি বিদেশ আসতাম না। ঢাকার যে ডাক্তার ভুল রিপোর্ট দিয়েছেন, তার কৃতিত্বেই এবার আমার বিদেশ আসা! এ অবস্থায়, আমরা দেশের ডাক্তারদের ওপর আস্থা ফিরে পাব কবে জানি না।
আরও একটি প্রশ্ন হলো, দুবাইয়ে সৌদি আরবের ফাকিহ পরিবার দুবাই সিলিকন ওয়েসিসে ফাকিহ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মতো একটি হাসপাতাল নির্মাণ করল এবং সেই হাসপাতালে বাংলাদেশি ডাক্তার যোগ দিলেন, অথচ ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশ, যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও মোটামুটি ভালো, সেখানে সৌদি বিনিয়োগে একটি উন্নত ও আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় না কেন?
দুবাইয়ের মতো মরুভূমির দেশে সারা পৃথিবীর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে অথচ আমাদের মতো সুন্দর সুজলা সুফলা দেশে তার নমুনা দেখতে পাচ্ছি না কেন? এতদসংক্রান্ত অনেক প্রশ্নই করা যাবে; কিন্তু তার আর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সুতরাং দুবাইয়ের চিঠি লেখাটি এখানেই শেষ করতে হলো।
ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
দুবাইয়ের চিঠি
মিঠে কড়া সংলাপ
ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন
১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রায় দুই সপ্তাহ হলো দুবাই এসেছি। আমার দুবাই আসার দুটি কারণ ছিল। প্রথমটি হলো, আমি একজন লাংসের পুরোনো রোগী। এ অবস্থায় কিছুদিন আগে ঢাকার গুলশানের একটি হাসপাতালে লাংসের সিটি স্ক্যান করিয়ে রিপোর্ট হাতে পেয়ে দেখি, রিপোর্ট অনুযায়ী আমার লাংস সম্পূর্ণ ভালো। লাংসের কোথাও কোনো ত্রুটি বা অসুখ-বিসুখ নেই। অথচ ২০১৪ সালে আমেরিকার ডাক্তার সেখানে সিটি স্ক্যান করে বলেছিলেন, আমার লাংসের অবস্থা বেশ খারাপ। যে ইনফেকশন হয়েছে তা কোনোদিন ভালো হবে না, সবসময় মনিটরিংয়ে রেখে ওষুধ খেতে হবে। অথচ ঢাকার ডাক্তার সাহেব তার রিপোর্টে আমার লাংসকে সম্পূর্ণ ভালো বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এ অবস্থায় রিপোর্টটি দেখে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক অজয় বাবুকে বিষয়টি একটু জোরেশোরে বলায় তিনি লোক পাঠিয়ে রিপোর্টটি ফেরত নিয়ে নতুন করে রিপোর্ট তৈরি করে দিলে দেখা গেল, সেখানে আমার লাংসের এন্তার দোষ-ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি এসব নিয়ে আর ঝামেলা না বাড়িয়ে যেহেতু প্রায় তিন বছর দেশের বাইরে কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠেনি, তাই একটু নড়াচড়া করাসহ ডাক্তার দেখানোর জন্য দুবাই চলে এসেছিলাম। কারণ অন্য দেশে কোয়ারেন্টিনসহ অন্যান্য ঝামেলা পোহাতে হয় আর আমেরিকাও বহুদূর, তাই মন টানল না।
আর দ্বিতীয় কারণটা কিছুটা গৌণ বিবেচিত হলেও একটি বিষয় দেখার জন্য অনুসন্ধিৎসু মনে আমি দুবাই আসতে চেয়েছিলাম। আর তা হলো, একটি প্রাইভেট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দুবাই রেসিডেন্সি ভিসা করে দেওয়ার জন্য বারবার মেসেজ দেওয়ায় আমি একদিন তাদের একটি সেমিনারে যোগ দিয়ে কিছুটা দোটানায় পড়ে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও আমার রেসিডেন্সি নেই বিধায় চিকিৎসা ইত্যাদি কারণে দুবাইয়ে রেসিডেন্সি ভিসা থাকলে কেমন হয় তা সরেজমিন দেখার ইচ্ছা হচ্ছিল। কারণ সেমিনারে যোগ দিয়ে বুঝেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে শত শত লোক রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, বসবাস করছেন।
অতঃপর দুবাই এসে যা দেখলাম, তাতে অবস্থা অনেকটা অবাক হওয়ার মতোই। সারা বিশ্বের কাছে দুবাই এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবারিত। সারা বছর ধরে এখানে এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের আনাগোনা। রাস্তাঘাট, দালানপাট সবকিছুতেই নতুনত্বের ছাপ। রাস্তার ধারে ফুলের সমারোহ। এক কথায়, দুবাই নগরীকে এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যে, দিনে দিনে তা রূপের রানি হিসাবে দেশি-বিদেশিদের আকৃষ্ট করে চলেছে। আমাদের দেশেরও অনেক ধনী ব্যক্তি এখানে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। পাশাপাশি হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক এখানে কর্মরত। আমার আসার দিনে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে প্রায় ২০০-২৫০ শ্রমিক আসতে দেখলাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দুবাই বিমানবন্দরে কিউতে যখন ট্যুরিস্টদের ডাকা হলো, তখন দেখলাম, এ ২০০-২৫০ শ্রমিকের সবাই ট্যুরিস্ট কিউতে চলে এলেন! আমার সামনের ও পেছনের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, তারা সবাই অবৈধ শ্রমিক হিসাবে এখানে কাজ করতে এসেছেন এবং তাদের সবাইকে ৪০-৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করে ইমিগ্রেশন পার হতে হয়েছে! আবার দুবাই এসে হোটেলে উঠে দেখলাম ভারত, নেপাল থেকেও এমন অনেক অবৈধ শ্রমিক এসে এখানে কাজ করছেন। তবে তারা জানালেন, তাদের দেশে ইমিগ্রেশনে কোনো ঘুষ বা অতিরিক্ত অর্থ তাদের প্রদান করতে হয়নি। যাক সে কথা। অন্য প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
দুবাইয়ের ফাকিহ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বাংলাদেশি ডাক্তার শাকিব নাজিরের সঙ্গে আগেই কথা বলে এসেছিলাম। তিনি একজন কার্ডিওলজিস্ট। ইতঃপূর্বে ঢাকার বারডেম ও এ্যাপোলো হাসপাতালে কাজ করেছেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এ সন্তান কার্ডিওলোজিস্ট হিসাবে দুবাইয়ে স্বনামধন্য। দুবাইয়ে আসার আগে সর্বশেষ তিনি লন্ডনে কার্ডিওলজিস্ট হিসাবে কমর্রত ছিলেন। অতঃপর সৌদি আরবের বিনিয়োগে দুবাই সিলিকন ওয়েসিসে ফাকিহ ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এখানে চাকরি নিয়ে চলে আসেন। আমি তাকে দিয়ে আমার হার্ট, ক্যারোটিড চেক আপ করিয়ে লাংসের ডাক্তারের কাছে যাব এমন সময় আমার গা-হাত-পা ব্যথা শুরু হওয়ায় করোনা পরীক্ষা করিয়ে দেখা গেল, আমি করোনা আক্রান্ত। পরে আমার স্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায়, ডা. সাকিব নাজির আমাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। দিন-রাত আসা যাওয়ার মাধ্যমে তিনি খোঁজখবর নিতে থাকলেন। বাসা থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করে আমাদের চাঙা রাখার চেষ্টা করলেন। তিনি এবং তার স্ত্রী ‘রাক্সানজা’ ভাবিও আসা যাওয়া শুরু করলেন এবং এভাবে একপর্যায়ে তারা দুজনও করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়লেন! আমরা দুজন রোগী এখন চারজনে পরিণত হলাম। কিন্তু কেউ রোগী হলাম এমন মনে হলো না। কারণ শারীরিক দিক থেকে আমরা সবাই ফিট বা সুস্থবোধ করে যাচ্ছি। কারও কোনো সিম্পটম নেই। আমরা এখনো মেলামেশা করে যাচ্ছি। কিন্তু পরপর দুবার নমুনা পরীক্ষার পরও আমাদের দুজনের কারও রেজাল্ট নেগেটিভ হচ্ছে না। ফলে দেশেও ফিরতে পারছি না। এদিকে হোটেলে থাকা-খাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছে। গাঁটের টাকাকড়িও প্রায় শেষ। ডাক্তার সাকিব ধার দিচ্ছেন। এমন ডাক্তার জীবনেও দেখিনি, আর দেখব বলেও মনে হয় না। এখন আল্লাহ আল্লাহ করছি কবে নেগেটিভ হবে আর কবে বাড়ি ফিরব।
আজকের লেখাটির শেষাংশে বলতে চাই, ঢাকায় আমার লাংসের সিটি স্ক্যানে ভুল রিপোর্ট না এলে এ যাত্রা হয়তো আমি বিদেশ আসতাম না। ঢাকার যে ডাক্তার ভুল রিপোর্ট দিয়েছেন, তার কৃতিত্বেই এবার আমার বিদেশ আসা! এ অবস্থায়, আমরা দেশের ডাক্তারদের ওপর আস্থা ফিরে পাব কবে জানি না।
আরও একটি প্রশ্ন হলো, দুবাইয়ে সৌদি আরবের ফাকিহ পরিবার দুবাই সিলিকন ওয়েসিসে ফাকিহ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মতো একটি হাসপাতাল নির্মাণ করল এবং সেই হাসপাতালে বাংলাদেশি ডাক্তার যোগ দিলেন, অথচ ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশ, যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও মোটামুটি ভালো, সেখানে সৌদি বিনিয়োগে একটি উন্নত ও আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় না কেন?
দুবাইয়ের মতো মরুভূমির দেশে সারা পৃথিবীর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে অথচ আমাদের মতো সুন্দর সুজলা সুফলা দেশে তার নমুনা দেখতে পাচ্ছি না কেন? এতদসংক্রান্ত অনেক প্রশ্নই করা যাবে; কিন্তু তার আর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সুতরাং দুবাইয়ের চিঠি লেখাটি এখানেই শেষ করতে হলো।
ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023