অমোঘ ডাক দিয়ে চলেছেন তিনি
জন্মদিনের শুভেচ্ছা
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
‘অমোঘ যে ডাক সেই ডাক দাও’-রবীন্দ্রনাথের ১৩১৭ বঙ্গাব্দে রচিত এ পঙ্ক্তিটি শাইখ সিরাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমার স্মরণে আসছে। তাই রবীন্দ্র পঙ্ক্তির অনুসরণে এ শিরোনাম। ‘অমোঘ ডাক’ সব সময়ই শাইখ সিরাজ দিয়ে চলেছেন।
তিনি যখন যে মাধ্যমে কাজ করেন-সংবাদপত্রে, সম্প্রচার মাধ্যমে অথবা সামাজিক কোনো মাধ্যমে-তার বক্তব্য, তার কর্তব্য দেখে রবীন্দ্রনাথের এ পঙ্ক্তিটিই স্বাভাবিকভাবে মনে আসে।
বাংলাদেশের সম্প্রচার ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ভিন্নমানের একজন মানুষ। তার চিন্তার ভিন্নতা, কাজের ভিন্নতা, সর্বোপরি তার মানবিক দিকগুলো তাকে সম্প্রচারজগতে একজন ভিন্ন মানুষে রূপান্তর করেছে।
শাইখ সিরাজের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হন এবং চার দশক ধরে গণমাধ্যমের সঙ্গেই সম্পৃক্ত আছেন। তিনি নিজে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করেছেন ও পরিচালনা করছেন। তিনি গণমাধ্যম ও সম্প্রচারমাধ্যমে নানা মাত্রা যুক্ত করেছেন। আমরা দেখেছি শাইখ সিরাজকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে। চার দশক আগে তিনি কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান নির্মাণ শুরু করেছিলেন; কারণ তিনি সঠিকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। কৃষি ও কৃষিসংক্রান্ত পেশার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ। কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেই বাংলাদেশ শাব্দিক অর্থে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। এ লক্ষ্যেই তার কর্মকাণ্ডের সূচনা।
এবং পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, চ্যানেল আই প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষি সম্প্রচার ও কৃষি সাংবাদিকতাকে তিনি নবতর উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এখনো তিনি নিজে মাঠে গিয়ে কৃষিকাজে সংযুক্ত কৃষকের সঙ্গে কথা বলে, সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তাদের কার্যক্রম সম্প্রচারমাধ্যমে তুলে ধরেন। শহরের শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে কৃষক সম্প্রদায়ের প্রত্যক্ষ যোগাযোগমাধ্যম হিসাবে কাজ করেন শাইখ সিরাজ। রাজধানীতে অবস্থিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য মাঝেমধ্যেই গ্রামের কৃষি মাঠে নিয়ে যান। উচ্চশিক্ষা গ্রহণরত দেশের ও বিদেশের ছাত্রছাত্রীদের এ ধরনের কৃষিকর্মের সঙ্গে ওরিয়েন্টেশন ঘটানো অত্যন্ত প্রয়োজন। এ প্রয়োজনীয় কাজটিই শাইখ সিরাজ করে চলেছেন বছরের পর বছর।
ইতোমধ্যে শাইখ সিরাজ কৃষিসংশ্লিষ্ট সাংবাদিকতার ওপর বেশকিছু গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন। মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি-প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়নচিন্তা (২০১৩), বদলে যাওয়া কৃষি (২০১৮), করোনাকালে বহতা জীবন (২০২১) গ্রন্থগুলোই প্রমাণ করে শাইখ সিরাজ কৃষি বিষয়ে নিজেকে কতটা নিবেদিত রাখেন। একজন নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক, সত্যিকার অর্থে একজন মানবিক মানুষ। কারণ তিনি মানবতাকে মূল্যায়ন করেই তার পেশাগত দিকনির্দেশনা নির্দিষ্ট করেন।
এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের ভিতটাই কৃষির ওপর। আর সেই কৃষিকে সম্প্রচার মাধ্যমে নিয়ে আসা, কৃষিকে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত করার অনবদ্য কাজটি শাইখ সিরাজ করে চলেছেন অব্যাহতভাবে। আর এজন্য তিনি অর্জন করেছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুটি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদকসহ (১৯৯৫) একাধিক আন্তর্জাতিক খ্যাতি। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তার পেশাগত ভূমিকা অত্যন্ত মহৎ হিসাবে স্বীকৃত। তিনি লাভ করেছেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এএইচ বুর্মা অ্যাওয়ার্ড, গুসি পিস প্রাইজসহ বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি।
শাইখ সিরাজ তার ‘ফিরে চল মাটির টানে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এদেশের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণদের কৃষিমুখী করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার তার ছাদকৃষি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রবাসীদের আঙিনা পর্যন্ত। ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকের কণ্ঠকে পৌঁছে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে, নীতিনির্ধারকদের কাছে। ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ বিপুল জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান, যা গ্রামের মানুষ তথা কৃষকের হাসি-আনন্দের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যমে কৃষকের সার্বিক অবস্থান দৃঢ় করার লক্ষ্যে শাইখ সিরাজ নিরন্তর কাজ করে চলেছেন।
আজকের একবিংশ শতাব্দীতে আমরা জলবায়ুসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। জাতিসংঘসহ নানা বিশ্ব সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের যে অপ্রতিরোধ্য গতি, সেটি কীভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি স্বভাবতই কৃষির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। শাইখ সিরাজ নানাভাবে কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় সম্পর্কে যেমন সচেতন করে তুলছেন, তেমনই এর গুরুত্ব ও করণীয় সম্পর্কে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন সরকার ও প্রশাসনকে।
শাইখ সিরাজের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি সম্প্রচার জগতের মানুষ, সাংবাদিকতায় প্রত্যক্ষ অবদান রেখে চলেছেন। আগেই বলেছি, তিনি মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ। মানবিকতার বিকাশ যদি না ঘটে, তাহলে যত উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত মানুষই হোক না কেন, তার মাধ্যমে সমাজ খুব বেশি উপকৃত হয় না। শাইখ সিরাজের মাঝে আমি যে মানবিক গুণাবলি দেখেছি, তাতে আমি এ বিশ্বাসে অত্যন্ত দৃঢ় যে, তার মাধ্যমে জাতি, দেশ ও পৃথিবী এগিয়ে যাবে। তার কার্যক্রম মানবিক কার্যক্রম। মানুষকে ভালো না বাসলে, দেশের মাটিকে ভালো না বাসলে এ পর্যায়ে পৌঁছানো যায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা আমি সবসময় স্মরণ করি। বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার জন্য কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘এই দেশের মানুষকে ভালোবাসো, দেশের মাটিকে ভালোবাসো। আমি এ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব, কারণ আমার প্রচুর সম্পদ আছে।’ কী সেই সম্পদ? বঙ্গবন্ধু নিজেই উত্তর দিয়েছেন, ‘আমার সম্পদ আমার জনশক্তি, আমার মানুষ এবং আমার দেশের মাটি।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি না থাকে। এ মাটিকে এবং এ দেশের মানুষকে কেন্দ্র করে শাইখ সিরাজ যেভাবে সাংবাদিকতা, বিশেষ করে সম্প্রচার সাংবাদিকতা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, সেটি আমাদের দৃঢ়ভাবে আশাবাদী করে তোলে। শাইখ সিরাজের জন্মদিনে আমি তাকে শুভেচ্ছা জানাই, শুভকামনা জানাই এবং আশা করি, তিনি বাংলাদেশের মানুষ ও মাটিকে নিয়ে যে কাজ করে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে তার বিস্তৃতি ঘটাবেন সারা পৃথিবীর মানুষ ও জলবায়ু নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাখবেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এবং সেই প্রমাণ ইতোমধ্যে আমরা পেয়েছি। শাইখ সিরাজের জন্মদিনে আবারও তাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
জন্মদিনের শুভেচ্ছা
অমোঘ ডাক দিয়ে চলেছেন তিনি
‘অমোঘ যে ডাক সেই ডাক দাও’-রবীন্দ্রনাথের ১৩১৭ বঙ্গাব্দে রচিত এ পঙ্ক্তিটি শাইখ সিরাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমার স্মরণে আসছে। তাই রবীন্দ্র পঙ্ক্তির অনুসরণে এ শিরোনাম। ‘অমোঘ ডাক’ সব সময়ই শাইখ সিরাজ দিয়ে চলেছেন।
তিনি যখন যে মাধ্যমে কাজ করেন-সংবাদপত্রে, সম্প্রচার মাধ্যমে অথবা সামাজিক কোনো মাধ্যমে-তার বক্তব্য, তার কর্তব্য দেখে রবীন্দ্রনাথের এ পঙ্ক্তিটিই স্বাভাবিকভাবে মনে আসে।
বাংলাদেশের সম্প্রচার ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ভিন্নমানের একজন মানুষ। তার চিন্তার ভিন্নতা, কাজের ভিন্নতা, সর্বোপরি তার মানবিক দিকগুলো তাকে সম্প্রচারজগতে একজন ভিন্ন মানুষে রূপান্তর করেছে।
শাইখ সিরাজের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হন এবং চার দশক ধরে গণমাধ্যমের সঙ্গেই সম্পৃক্ত আছেন। তিনি নিজে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করেছেন ও পরিচালনা করছেন। তিনি গণমাধ্যম ও সম্প্রচারমাধ্যমে নানা মাত্রা যুক্ত করেছেন। আমরা দেখেছি শাইখ সিরাজকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে। চার দশক আগে তিনি কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান নির্মাণ শুরু করেছিলেন; কারণ তিনি সঠিকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। কৃষি ও কৃষিসংক্রান্ত পেশার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ। কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেই বাংলাদেশ শাব্দিক অর্থে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। এ লক্ষ্যেই তার কর্মকাণ্ডের সূচনা।
এবং পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, চ্যানেল আই প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষি সম্প্রচার ও কৃষি সাংবাদিকতাকে তিনি নবতর উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এখনো তিনি নিজে মাঠে গিয়ে কৃষিকাজে সংযুক্ত কৃষকের সঙ্গে কথা বলে, সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তাদের কার্যক্রম সম্প্রচারমাধ্যমে তুলে ধরেন। শহরের শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে কৃষক সম্প্রদায়ের প্রত্যক্ষ যোগাযোগমাধ্যম হিসাবে কাজ করেন শাইখ সিরাজ। রাজধানীতে অবস্থিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য মাঝেমধ্যেই গ্রামের কৃষি মাঠে নিয়ে যান। উচ্চশিক্ষা গ্রহণরত দেশের ও বিদেশের ছাত্রছাত্রীদের এ ধরনের কৃষিকর্মের সঙ্গে ওরিয়েন্টেশন ঘটানো অত্যন্ত প্রয়োজন। এ প্রয়োজনীয় কাজটিই শাইখ সিরাজ করে চলেছেন বছরের পর বছর।
ইতোমধ্যে শাইখ সিরাজ কৃষিসংশ্লিষ্ট সাংবাদিকতার ওপর বেশকিছু গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন। মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি-প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়নচিন্তা (২০১৩), বদলে যাওয়া কৃষি (২০১৮), করোনাকালে বহতা জীবন (২০২১) গ্রন্থগুলোই প্রমাণ করে শাইখ সিরাজ কৃষি বিষয়ে নিজেকে কতটা নিবেদিত রাখেন। একজন নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক, সত্যিকার অর্থে একজন মানবিক মানুষ। কারণ তিনি মানবতাকে মূল্যায়ন করেই তার পেশাগত দিকনির্দেশনা নির্দিষ্ট করেন।
এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের ভিতটাই কৃষির ওপর। আর সেই কৃষিকে সম্প্রচার মাধ্যমে নিয়ে আসা, কৃষিকে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত করার অনবদ্য কাজটি শাইখ সিরাজ করে চলেছেন অব্যাহতভাবে। আর এজন্য তিনি অর্জন করেছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুটি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদকসহ (১৯৯৫) একাধিক আন্তর্জাতিক খ্যাতি। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তার পেশাগত ভূমিকা অত্যন্ত মহৎ হিসাবে স্বীকৃত। তিনি লাভ করেছেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এএইচ বুর্মা অ্যাওয়ার্ড, গুসি পিস প্রাইজসহ বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি।
শাইখ সিরাজ তার ‘ফিরে চল মাটির টানে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এদেশের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণদের কৃষিমুখী করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার তার ছাদকৃষি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রবাসীদের আঙিনা পর্যন্ত। ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকের কণ্ঠকে পৌঁছে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে, নীতিনির্ধারকদের কাছে। ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ বিপুল জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান, যা গ্রামের মানুষ তথা কৃষকের হাসি-আনন্দের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যমে কৃষকের সার্বিক অবস্থান দৃঢ় করার লক্ষ্যে শাইখ সিরাজ নিরন্তর কাজ করে চলেছেন।
আজকের একবিংশ শতাব্দীতে আমরা জলবায়ুসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। জাতিসংঘসহ নানা বিশ্ব সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের যে অপ্রতিরোধ্য গতি, সেটি কীভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি স্বভাবতই কৃষির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। শাইখ সিরাজ নানাভাবে কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় সম্পর্কে যেমন সচেতন করে তুলছেন, তেমনই এর গুরুত্ব ও করণীয় সম্পর্কে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন সরকার ও প্রশাসনকে।
শাইখ সিরাজের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি সম্প্রচার জগতের মানুষ, সাংবাদিকতায় প্রত্যক্ষ অবদান রেখে চলেছেন। আগেই বলেছি, তিনি মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ। মানবিকতার বিকাশ যদি না ঘটে, তাহলে যত উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত মানুষই হোক না কেন, তার মাধ্যমে সমাজ খুব বেশি উপকৃত হয় না। শাইখ সিরাজের মাঝে আমি যে মানবিক গুণাবলি দেখেছি, তাতে আমি এ বিশ্বাসে অত্যন্ত দৃঢ় যে, তার মাধ্যমে জাতি, দেশ ও পৃথিবী এগিয়ে যাবে। তার কার্যক্রম মানবিক কার্যক্রম। মানুষকে ভালো না বাসলে, দেশের মাটিকে ভালো না বাসলে এ পর্যায়ে পৌঁছানো যায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা আমি সবসময় স্মরণ করি। বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার জন্য কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘এই দেশের মানুষকে ভালোবাসো, দেশের মাটিকে ভালোবাসো। আমি এ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব, কারণ আমার প্রচুর সম্পদ আছে।’ কী সেই সম্পদ? বঙ্গবন্ধু নিজেই উত্তর দিয়েছেন, ‘আমার সম্পদ আমার জনশক্তি, আমার মানুষ এবং আমার দেশের মাটি।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি না থাকে। এ মাটিকে এবং এ দেশের মানুষকে কেন্দ্র করে শাইখ সিরাজ যেভাবে সাংবাদিকতা, বিশেষ করে সম্প্রচার সাংবাদিকতা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, সেটি আমাদের দৃঢ়ভাবে আশাবাদী করে তোলে। শাইখ সিরাজের জন্মদিনে আমি তাকে শুভেচ্ছা জানাই, শুভকামনা জানাই এবং আশা করি, তিনি বাংলাদেশের মানুষ ও মাটিকে নিয়ে যে কাজ করে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে তার বিস্তৃতি ঘটাবেন সারা পৃথিবীর মানুষ ও জলবায়ু নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাখবেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এবং সেই প্রমাণ ইতোমধ্যে আমরা পেয়েছি। শাইখ সিরাজের জন্মদিনে আবারও তাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়