অমর্ত্য সেনের ‘জগৎ কুটির’
বিশ্বের সচেতন ব্যক্তিদের কাছে অমর্ত্য সেন একটি অতি পরিচিত নাম। তবে এ পরিচয়ে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে। তাকে কেউ চেনেন একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসাবে; কেউ মনে করেন তিনি একজন অর্থনীতির পণ্ডিত; আর বাঙালিরা মনে করেন তাদের সেরা সন্তানদের অন্যতম একজন তিনি।
কোনো সন্দেহ নেই, অর্থনীতি বিষয়ে গত পাঁচ দশকে তিনি পৃথিবীকে যতটা নাড়িয়ে দিয়েছেন, তাতে তার খ্যাতির উচ্চতা পরিমাপ করাটাই যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। বাস্তবে তিনি নিজেকে অর্থনীতিবিদের সীমায় আবদ্ধ না রেখে যুক্ত করেছেন নৈতিক দর্শন, রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মানবিক মূল্যবোধ, প্রাচীন ও আধুনিক ধর্মবোধ, শ্রেণি-বিভেদসহ সব ধরনের মানবসভ্যতার অতি প্রয়োজনীয় বিষয়াদিতে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান তাকে অনন্য অর্থনীতিবিদ আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘বিশ্বের গরিব ও নিঃস্ব মানুষদের হয়ে কথা বলার জন্য অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অমর্ত্য সেনের চেয়ে জোরালো ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন কাউকে খুঁজে পাবে না।
আমাদের জীবনকুশলতা ধনসম্পদ দিয়ে নয়, বরং করা ও হওয়ার অধিকার দিয়ে পরিমাপ করা উচিত; এটি প্রতিষ্ঠা করে তার রচনা উন্নয়নের তত্ত্বে আর প্রয়োগে এক বিপ্লব নিয়ে এসেছে।’ অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা তার লিখিত ‘অমর্ত্য সেনের মর্ত্য-ভাবনা’ বইয়ে লিখেছেন, ‘অমর্ত্য সেনের খ্যাতি অবশ্য কেবল প্রথাসিদ্ধ অর্থনীতিবিদ হিসাবে নয়, একজন মানবতাবাদী দার্শনিক হিসাবেও। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সঙ্গে তিনি একজন অর্থনীতি ও দর্শনের সম্মানিত প্রফেসর। তাছাড়া অঙ্কশাস্ত্রেও তার মৌলিক কাজ ওই বিদ্যার সর্বোচ্চ মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।’
আজকের আলোচনায় আমরা অমর্ত্য সেন সম্পর্কে সম্মানিত বিজ্ঞজনের কোনো মতামতকে তুলে ধরার চেষ্টা করব না, বরং অমর্ত্য সেনের ৮৮ বছরের বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা ও কর্মময় জীবনের কথাই আলোকপাত করব, যা তিনি নিজে লিখেছেন। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছে অমর্ত্য সেনের আত্মজীবনীমূলক বই ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। এর পরের বছর বইটির বাংলা অনুবাদ বের করে কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স। বইটির নামকরণ করা হয় ‘জগৎ কুটির’। উল্লেখ্য, ঢাকার ওয়ারীতে যে পৈতৃক বাড়িতে শিশু অমর্ত্য দিনযাপন করেছিলেন, সেই অপূর্ব ভালোবাসার বাড়িটির নাম ছিল ‘জগৎ কুটির’। পুরোপুরি ৫০০ পৃষ্ঠার বইটিতে পাঁচটি পর্বে ২৬টি অধ্যায় রয়েছে। বইটির রচনাশৈলী এতটাই আকর্ষণীয় যে, বইটি পড়া শুরু করলে শেষ না করে অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না।
প্রথম পর্বটিকে সাজানো হয়েছে ছয়টি অধ্যায়ে। ১৯৪২ সালের আগের সময়গুলো এখানে বিবৃত হয়েছে। অমর্ত্য সেনের বাবা ড. আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক ছিলেন। মা অমিতা সেন। দাদা সারদাপ্রসাদ সেন ছিলেন বিচারপতি। দাদি জগৎলক্ষ্মী অমর্ত্য সেনের জন্মের বেশ কয়েক বছর আগেই মারা যান। ওয়ারীর ওই ‘জগৎ কুটির’ বাড়িটি অমর্ত্য সেনের দাদাই নির্মাণ করেন এবং মনে করা হয় তার স্ত্রীর নামের সঙ্গে মিল রেখে বাড়িটির নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু অমর্ত্য সেন বিশ্বের যেখানে যেখানে অবস্থান করেছেন, সেটাকেই নিজের বাড়ি বলে ভাবতে ভালোবাসেন। অবস্থানগত কারণে তার জন্ম ঢাকাতেই হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সে সময়কার রীতি অনুযায়ী প্রথম সন্তান নানাবাড়িতে প্রসূত হয়। অমর্ত্য সেনের নানা ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন শান্তিনিকেতনের স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। তাই জন্মের কিছু দিন আগে অমর্ত্য সেনের মা অমিতা সেন শান্তিনিকেতনে বাপের বাড়ি চলে যান। সেখানেই ১৯৩৩ সালের ৩ নভেম্বর অমিতা সেন ও ড. আশুতোষ সেনের প্রথম সন্তানের জন্ম হয় এবং কবিগুরু তার নাম রাখেন অমর্ত্য সেন। জন্মের পর অমর্ত্য সেন ঢাকায় চলে আসেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে। কিন্তু স্মৃতি কথার শুরুটা হয় আজকের মিয়ানমার (পুরোনো বার্মা) দিয়ে। তিন বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৩৬ সালে বাবার পেশাগত কারণে সপরিবারে বার্মা গিয়ে ১৯৩৯ সালে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। তার সে সময়কার দেখা বার্মার মানুষ ও পরিবেশের সঙ্গে আজকের বার্মার মানুষের আচরণ তাকে বিস্মিত করে। তিনি তার শিশুকালে দেখেছিলেন বার্মার সহজ-সরল নাগরিক জীবন। সেই বার্মার মানুষ কী করে গণহত্যার মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারে, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না।
ঢাকায় পড়াশোনা শুরু করলেও বেশি দূর যাওয়া হয়নি। ১৯৪১ সালের আগস্টে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। আর এর ঠিক দু’মাস বাদে অমর্ত্য সেন পড়ালেখার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে শান্তিনিকেতনে নানা-নানির সান্নিধ্য লাভ করেন। সে সময়কার শান্তিনিকেতন ছিল সারা ভারতবর্ষের মধ্যে একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিদ্যাপীঠ। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে একজন সামাজিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ তৈরি করার কারখানা ছিল এ শান্তিনিকেতন। আজকের বিশ্বখ্যাত অমর্ত্য সেন সৃষ্টিতে শান্তিনিকেতনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল সন্দেহ নেই।
‘জগৎ কুটিরে’ অমর্ত্য সেন তার দ্বিতীয় অধ্যায়টি সাজিয়েছেন ১৯৪২ থেকে ১৯৫১ সালের ঘটনাবলি নিয়ে। এ পর্বটিতে চারটি অধ্যায় আছে-যথাক্রমে শেষ দুর্ভিক্ষ, বাংলা এবং বাংলাদেশের ধারণা, প্রতিরোধ ও বিভাজন; আর এ পর্বের শেষ অধ্যায়টি হলো ব্রিটেন ও ভারত। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, যা ‘তেতাল্লিশের মন্বন্তর’ নামে আমাদের কাছে পরিচিত, তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ১০ বছরের অমর্ত্য সেন। বলা হয়ে থাকে, সে সময়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ভিক্ষের করুণ চিত্র শিশু অমর্ত্য সেনকে এতটাই দাগ কেটেছিল যে, এর ৩০ বছর পর দুর্ভিক্ষ নিয়েই গবেষণায় মেতে ওঠেন অমর্ত্য সেন। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেছেন, যত দিন ভারতের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, তত দিন ভারত দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পায়নি, যদিও তাকে শাসন করত পৃথিবীর সর্বাগ্রে থাকা গণতান্ত্রিক দেশটি, যাদের নিজেদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল সুপ্রসিদ্ধ, কিন্তু তাদের উপনিবেশে সেটা ছিল না। এ স্বাধীনচেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল শাসকদের জন্য, তাদের প্রজাদের জন্য নয়।
‘জগৎ কুটির’র তৃতীয় পর্বটি পাঁচটি অধ্যায় নিয়ে রচিত। শান্তিনিকেতনের পাঠ শেষ করে ১৯৫১ সালে অমর্ত্য সেন ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। বলতে গেলে এ সময়টাতেই তার কলকাতাকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার শুরু। সে সময়ে বই পাড়া কলেজ স্ট্রিট আর জ্ঞানদীপ্ত আড্ডার কফি হাউজ হয়ে ওঠে অমর্ত্য সেনের অতি আপন। প্রেসিডেন্সিতে পড়াকালে একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। একসময় অমর্ত্য সেন বোধ করেন, তার মুখের ভেতরের উপরের দিকটায়, যাকে আমরা টাকলি বলি, সেখানে একটা টিউমারজাতীয় কিছু হয়েছে। তিনি চিকিৎসকের কাছে গেলে দুজন চিকিৎসক এটাকে খুব একটা আমলে নিলেন না এবং বললেন, ঈশ্বরের সৃষ্টির সব রহস্য তো আমরা জানি না। অমর্ত্য সেন ছোটবেলা থেকেই নিয়তিতে বিশ্বাস করতেন না, তাই চিকিৎসকের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। ব্যাস! লাইব্রেরি থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রের গোটাকয়েক বই নিয়ে রাতভর পড়াশোনা করলেন এবং নিশ্চিতভাবেই বুঝতে পারলেন, তার মুখের ভেতরের টিউমারটি ক্যান্সার বৈ আর কিছু নয়, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে-স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা। পরবর্তী সময়ে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা তার সঙ্গে একমত হয়ে রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে তাকে সারিয়ে তোলেন। সেদিনের এ যুবকের বিজ্ঞানমনস্কতার কারণে আজকের পৃথিবী এখনো অমর্ত্য সেনের সেবা নিতে পারছে। এ পর্বটি শেষ হয়েছে অমর্ত্য সেনের বিলেতে পড়তে যাওয়ার উদ্দেশে ভারত ত্যাগের মধ্য দিয়ে। অমর্ত্য সেন ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে অর্থনীতি পড়ার জন্য মুম্বাই থেকে জাহাজে চড়েন। ১৯৫৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি লন্ডনে পৌঁছান। পড়াশোনার পরিবেশ অতি উচ্চমাত্রায় হলেও সামাজিকভাবে একটি বিভাজিত আচরণের মুখোমুখি হন তিনি। ক্যামব্রিজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে বাড়িতে থাকার সুযোগ পান, সেই বাড়ির মালিক ছিলেন একজন অশেতাঙ্গবিরোধী মহিলা। বাড়িওয়ালি অমর্ত্য সেনকে দেখে প্রথমেই প্রশ্ন করেন, বাথরুমে গোসল করার সময় তোমার গায়ের রং মেঝেতে ছোপ পড়ে নোংরা করবে না তো? বর্ণবিরোধী অমর্ত্য সেন খানিকটা অপ্রস্তুত হলেও সাবলীলভাবে জবাব দিয়েছিলেন-আমার গায়ের রং খুবই পাকা, খসে পড়ার কোনো কারণ নেই। তবে অমর্ত্য সেন তার প্রজ্ঞা দিয়ে বাড়িওয়ালিকে শেষ পর্যন্ত বোঝাতে এবং বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, ‘সব মানুষ সমান’।
ক্যামব্রিজের শিক্ষার্থীরা চেতনাগতভাবে দুই ধারায় বিভক্ত ছিল, তার মধ্যে সোশ্যালিস্ট ক্লাবের সদস্য ছিলেন অমর্ত্য সেন। কিন্তু সেটা কোনো চরম বিরোধিতার সংস্কৃতি ছিল না। মতবিনিময় করার পরিবেশ ছিল আকর্ষণীয়। পরবর্তী সময়ে লেকচারার হিসাবে যোগদানের অভিজ্ঞতায় অমর্ত্য সেন লিখেছেন, ‘একজন তরুণ লেকচারার হিসাবে ট্রিনিটিতে ডেনিস রবার্টসন, মরিস ডব এবং পিয়েরে স্রাফার মতো দিকপালদের সঙ্গে পড়ানো আমার কাছে খুবই উত্তেজনার ব্যাপার ছিল। আগে, ওরা যখন আমার শিক্ষক, সেই সময় আমি ওদের সম্পর্কে খুব কমই জানতাম। কিন্তু যখন সহকর্মী হলাম, তখনই ভালো করে জানলাম ওদের।’ তাছাড়া জন রবিনসনের সান্নিধ্য তাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। উল্লেখ্য, এই ট্রিনিটি কলেজেরই মাস্টার (প্রধান নির্বাহী) হয়ে অমর্ত্য সেন যোগদান করেন ১৯৯৮ সালে। এর সবই বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে বইটির চতুর্থ পর্বে।
‘জগৎ কুটির’র পঞ্চম ও শেষ পর্বটিতে দুটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথমটি হলো : সহমতি ও সহযোগিতা; দ্বিতীয়টি হলো : নিকটে ও দূরে। প্রথম অধ্যায়ে মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি বাসযোগ্য রাষ্ট্র তৈরির কথা বলা হয়েছে। অমর্ত্য সেনের ভাষায়-‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার যেমন সুফল রয়েছে, তেমনি প্রত্যেক দেশের ভেতরেও প্রতিটি মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার কার্যকারিতা রয়েছে। একদিক থেকে দেখলে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে জোরালো বিকাশটি-কল্যাণ রাষ্ট্রের উদ্ভব-স্পষ্টতই যুদ্ধ পরিস্থিতির ধারাবাহিকতার সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে সম্মিলিত উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে লোকে যে একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বটা অনেক ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারল, কল্যাণ রাষ্ট্র হলো, সেই প্রভাবের ফল।’
বইটির সমাপ্তিতে তিনি রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি দিয়েই নিজের ভাব প্রকাশ করেছেন : মানুষের মাঝে যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা সংকীর্ণভাবে কোনো জাতির মধ্যে বদ্ধ হতে পারে না, তা কৃপণের অবরুদ্ধ ভাণ্ডারের সম্পদ নয়।
অমর্ত্য সেনের অন্য বইগুলোকে গুরুত্বের বিচারে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও ‘জগৎ কুটির’ একটি ভিন্ন মাত্রা নিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে। এ বইটি পাঠ করার মধ্য দিয়ে অমর্ত্য সেনকে পরিপূর্ণভাবে চেনার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করি।
মুঈদ রহমান : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
অমর্ত্য সেনের ‘জগৎ কুটির’
মুঈদ রহমান
২৭ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বের সচেতন ব্যক্তিদের কাছে অমর্ত্য সেন একটি অতি পরিচিত নাম। তবে এ পরিচয়ে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে। তাকে কেউ চেনেন একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসাবে; কেউ মনে করেন তিনি একজন অর্থনীতির পণ্ডিত; আর বাঙালিরা মনে করেন তাদের সেরা সন্তানদের অন্যতম একজন তিনি।
কোনো সন্দেহ নেই, অর্থনীতি বিষয়ে গত পাঁচ দশকে তিনি পৃথিবীকে যতটা নাড়িয়ে দিয়েছেন, তাতে তার খ্যাতির উচ্চতা পরিমাপ করাটাই যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। বাস্তবে তিনি নিজেকে অর্থনীতিবিদের সীমায় আবদ্ধ না রেখে যুক্ত করেছেন নৈতিক দর্শন, রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মানবিক মূল্যবোধ, প্রাচীন ও আধুনিক ধর্মবোধ, শ্রেণি-বিভেদসহ সব ধরনের মানবসভ্যতার অতি প্রয়োজনীয় বিষয়াদিতে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান তাকে অনন্য অর্থনীতিবিদ আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘বিশ্বের গরিব ও নিঃস্ব মানুষদের হয়ে কথা বলার জন্য অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অমর্ত্য সেনের চেয়ে জোরালো ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন কাউকে খুঁজে পাবে না।
আমাদের জীবনকুশলতা ধনসম্পদ দিয়ে নয়, বরং করা ও হওয়ার অধিকার দিয়ে পরিমাপ করা উচিত; এটি প্রতিষ্ঠা করে তার রচনা উন্নয়নের তত্ত্বে আর প্রয়োগে এক বিপ্লব নিয়ে এসেছে।’ অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা তার লিখিত ‘অমর্ত্য সেনের মর্ত্য-ভাবনা’ বইয়ে লিখেছেন, ‘অমর্ত্য সেনের খ্যাতি অবশ্য কেবল প্রথাসিদ্ধ অর্থনীতিবিদ হিসাবে নয়, একজন মানবতাবাদী দার্শনিক হিসাবেও। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সঙ্গে তিনি একজন অর্থনীতি ও দর্শনের সম্মানিত প্রফেসর। তাছাড়া অঙ্কশাস্ত্রেও তার মৌলিক কাজ ওই বিদ্যার সর্বোচ্চ মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।’
আজকের আলোচনায় আমরা অমর্ত্য সেন সম্পর্কে সম্মানিত বিজ্ঞজনের কোনো মতামতকে তুলে ধরার চেষ্টা করব না, বরং অমর্ত্য সেনের ৮৮ বছরের বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা ও কর্মময় জীবনের কথাই আলোকপাত করব, যা তিনি নিজে লিখেছেন। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছে অমর্ত্য সেনের আত্মজীবনীমূলক বই ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। এর পরের বছর বইটির বাংলা অনুবাদ বের করে কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স। বইটির নামকরণ করা হয় ‘জগৎ কুটির’। উল্লেখ্য, ঢাকার ওয়ারীতে যে পৈতৃক বাড়িতে শিশু অমর্ত্য দিনযাপন করেছিলেন, সেই অপূর্ব ভালোবাসার বাড়িটির নাম ছিল ‘জগৎ কুটির’। পুরোপুরি ৫০০ পৃষ্ঠার বইটিতে পাঁচটি পর্বে ২৬টি অধ্যায় রয়েছে। বইটির রচনাশৈলী এতটাই আকর্ষণীয় যে, বইটি পড়া শুরু করলে শেষ না করে অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না।
প্রথম পর্বটিকে সাজানো হয়েছে ছয়টি অধ্যায়ে। ১৯৪২ সালের আগের সময়গুলো এখানে বিবৃত হয়েছে। অমর্ত্য সেনের বাবা ড. আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক ছিলেন। মা অমিতা সেন। দাদা সারদাপ্রসাদ সেন ছিলেন বিচারপতি। দাদি জগৎলক্ষ্মী অমর্ত্য সেনের জন্মের বেশ কয়েক বছর আগেই মারা যান। ওয়ারীর ওই ‘জগৎ কুটির’ বাড়িটি অমর্ত্য সেনের দাদাই নির্মাণ করেন এবং মনে করা হয় তার স্ত্রীর নামের সঙ্গে মিল রেখে বাড়িটির নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু অমর্ত্য সেন বিশ্বের যেখানে যেখানে অবস্থান করেছেন, সেটাকেই নিজের বাড়ি বলে ভাবতে ভালোবাসেন। অবস্থানগত কারণে তার জন্ম ঢাকাতেই হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সে সময়কার রীতি অনুযায়ী প্রথম সন্তান নানাবাড়িতে প্রসূত হয়। অমর্ত্য সেনের নানা ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন শান্তিনিকেতনের স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। তাই জন্মের কিছু দিন আগে অমর্ত্য সেনের মা অমিতা সেন শান্তিনিকেতনে বাপের বাড়ি চলে যান। সেখানেই ১৯৩৩ সালের ৩ নভেম্বর অমিতা সেন ও ড. আশুতোষ সেনের প্রথম সন্তানের জন্ম হয় এবং কবিগুরু তার নাম রাখেন অমর্ত্য সেন। জন্মের পর অমর্ত্য সেন ঢাকায় চলে আসেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে। কিন্তু স্মৃতি কথার শুরুটা হয় আজকের মিয়ানমার (পুরোনো বার্মা) দিয়ে। তিন বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৩৬ সালে বাবার পেশাগত কারণে সপরিবারে বার্মা গিয়ে ১৯৩৯ সালে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। তার সে সময়কার দেখা বার্মার মানুষ ও পরিবেশের সঙ্গে আজকের বার্মার মানুষের আচরণ তাকে বিস্মিত করে। তিনি তার শিশুকালে দেখেছিলেন বার্মার সহজ-সরল নাগরিক জীবন। সেই বার্মার মানুষ কী করে গণহত্যার মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারে, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না।
ঢাকায় পড়াশোনা শুরু করলেও বেশি দূর যাওয়া হয়নি। ১৯৪১ সালের আগস্টে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। আর এর ঠিক দু’মাস বাদে অমর্ত্য সেন পড়ালেখার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে শান্তিনিকেতনে নানা-নানির সান্নিধ্য লাভ করেন। সে সময়কার শান্তিনিকেতন ছিল সারা ভারতবর্ষের মধ্যে একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিদ্যাপীঠ। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে একজন সামাজিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ তৈরি করার কারখানা ছিল এ শান্তিনিকেতন। আজকের বিশ্বখ্যাত অমর্ত্য সেন সৃষ্টিতে শান্তিনিকেতনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল সন্দেহ নেই।
‘জগৎ কুটিরে’ অমর্ত্য সেন তার দ্বিতীয় অধ্যায়টি সাজিয়েছেন ১৯৪২ থেকে ১৯৫১ সালের ঘটনাবলি নিয়ে। এ পর্বটিতে চারটি অধ্যায় আছে-যথাক্রমে শেষ দুর্ভিক্ষ, বাংলা এবং বাংলাদেশের ধারণা, প্রতিরোধ ও বিভাজন; আর এ পর্বের শেষ অধ্যায়টি হলো ব্রিটেন ও ভারত। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, যা ‘তেতাল্লিশের মন্বন্তর’ নামে আমাদের কাছে পরিচিত, তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ১০ বছরের অমর্ত্য সেন। বলা হয়ে থাকে, সে সময়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ভিক্ষের করুণ চিত্র শিশু অমর্ত্য সেনকে এতটাই দাগ কেটেছিল যে, এর ৩০ বছর পর দুর্ভিক্ষ নিয়েই গবেষণায় মেতে ওঠেন অমর্ত্য সেন। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেছেন, যত দিন ভারতের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, তত দিন ভারত দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পায়নি, যদিও তাকে শাসন করত পৃথিবীর সর্বাগ্রে থাকা গণতান্ত্রিক দেশটি, যাদের নিজেদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল সুপ্রসিদ্ধ, কিন্তু তাদের উপনিবেশে সেটা ছিল না। এ স্বাধীনচেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল শাসকদের জন্য, তাদের প্রজাদের জন্য নয়।
‘জগৎ কুটির’র তৃতীয় পর্বটি পাঁচটি অধ্যায় নিয়ে রচিত। শান্তিনিকেতনের পাঠ শেষ করে ১৯৫১ সালে অমর্ত্য সেন ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। বলতে গেলে এ সময়টাতেই তার কলকাতাকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার শুরু। সে সময়ে বই পাড়া কলেজ স্ট্রিট আর জ্ঞানদীপ্ত আড্ডার কফি হাউজ হয়ে ওঠে অমর্ত্য সেনের অতি আপন। প্রেসিডেন্সিতে পড়াকালে একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। একসময় অমর্ত্য সেন বোধ করেন, তার মুখের ভেতরের উপরের দিকটায়, যাকে আমরা টাকলি বলি, সেখানে একটা টিউমারজাতীয় কিছু হয়েছে। তিনি চিকিৎসকের কাছে গেলে দুজন চিকিৎসক এটাকে খুব একটা আমলে নিলেন না এবং বললেন, ঈশ্বরের সৃষ্টির সব রহস্য তো আমরা জানি না। অমর্ত্য সেন ছোটবেলা থেকেই নিয়তিতে বিশ্বাস করতেন না, তাই চিকিৎসকের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। ব্যাস! লাইব্রেরি থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রের গোটাকয়েক বই নিয়ে রাতভর পড়াশোনা করলেন এবং নিশ্চিতভাবেই বুঝতে পারলেন, তার মুখের ভেতরের টিউমারটি ক্যান্সার বৈ আর কিছু নয়, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে-স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা। পরবর্তী সময়ে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা তার সঙ্গে একমত হয়ে রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে তাকে সারিয়ে তোলেন। সেদিনের এ যুবকের বিজ্ঞানমনস্কতার কারণে আজকের পৃথিবী এখনো অমর্ত্য সেনের সেবা নিতে পারছে। এ পর্বটি শেষ হয়েছে অমর্ত্য সেনের বিলেতে পড়তে যাওয়ার উদ্দেশে ভারত ত্যাগের মধ্য দিয়ে। অমর্ত্য সেন ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে অর্থনীতি পড়ার জন্য মুম্বাই থেকে জাহাজে চড়েন। ১৯৫৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি লন্ডনে পৌঁছান। পড়াশোনার পরিবেশ অতি উচ্চমাত্রায় হলেও সামাজিকভাবে একটি বিভাজিত আচরণের মুখোমুখি হন তিনি। ক্যামব্রিজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে বাড়িতে থাকার সুযোগ পান, সেই বাড়ির মালিক ছিলেন একজন অশেতাঙ্গবিরোধী মহিলা। বাড়িওয়ালি অমর্ত্য সেনকে দেখে প্রথমেই প্রশ্ন করেন, বাথরুমে গোসল করার সময় তোমার গায়ের রং মেঝেতে ছোপ পড়ে নোংরা করবে না তো? বর্ণবিরোধী অমর্ত্য সেন খানিকটা অপ্রস্তুত হলেও সাবলীলভাবে জবাব দিয়েছিলেন-আমার গায়ের রং খুবই পাকা, খসে পড়ার কোনো কারণ নেই। তবে অমর্ত্য সেন তার প্রজ্ঞা দিয়ে বাড়িওয়ালিকে শেষ পর্যন্ত বোঝাতে এবং বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, ‘সব মানুষ সমান’।
ক্যামব্রিজের শিক্ষার্থীরা চেতনাগতভাবে দুই ধারায় বিভক্ত ছিল, তার মধ্যে সোশ্যালিস্ট ক্লাবের সদস্য ছিলেন অমর্ত্য সেন। কিন্তু সেটা কোনো চরম বিরোধিতার সংস্কৃতি ছিল না। মতবিনিময় করার পরিবেশ ছিল আকর্ষণীয়। পরবর্তী সময়ে লেকচারার হিসাবে যোগদানের অভিজ্ঞতায় অমর্ত্য সেন লিখেছেন, ‘একজন তরুণ লেকচারার হিসাবে ট্রিনিটিতে ডেনিস রবার্টসন, মরিস ডব এবং পিয়েরে স্রাফার মতো দিকপালদের সঙ্গে পড়ানো আমার কাছে খুবই উত্তেজনার ব্যাপার ছিল। আগে, ওরা যখন আমার শিক্ষক, সেই সময় আমি ওদের সম্পর্কে খুব কমই জানতাম। কিন্তু যখন সহকর্মী হলাম, তখনই ভালো করে জানলাম ওদের।’ তাছাড়া জন রবিনসনের সান্নিধ্য তাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। উল্লেখ্য, এই ট্রিনিটি কলেজেরই মাস্টার (প্রধান নির্বাহী) হয়ে অমর্ত্য সেন যোগদান করেন ১৯৯৮ সালে। এর সবই বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে বইটির চতুর্থ পর্বে।
‘জগৎ কুটির’র পঞ্চম ও শেষ পর্বটিতে দুটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথমটি হলো : সহমতি ও সহযোগিতা; দ্বিতীয়টি হলো : নিকটে ও দূরে। প্রথম অধ্যায়ে মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি বাসযোগ্য রাষ্ট্র তৈরির কথা বলা হয়েছে। অমর্ত্য সেনের ভাষায়-‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার যেমন সুফল রয়েছে, তেমনি প্রত্যেক দেশের ভেতরেও প্রতিটি মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার কার্যকারিতা রয়েছে। একদিক থেকে দেখলে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে জোরালো বিকাশটি-কল্যাণ রাষ্ট্রের উদ্ভব-স্পষ্টতই যুদ্ধ পরিস্থিতির ধারাবাহিকতার সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে সম্মিলিত উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে লোকে যে একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বটা অনেক ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারল, কল্যাণ রাষ্ট্র হলো, সেই প্রভাবের ফল।’
বইটির সমাপ্তিতে তিনি রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি দিয়েই নিজের ভাব প্রকাশ করেছেন : মানুষের মাঝে যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা সংকীর্ণভাবে কোনো জাতির মধ্যে বদ্ধ হতে পারে না, তা কৃপণের অবরুদ্ধ ভাণ্ডারের সম্পদ নয়।
অমর্ত্য সেনের অন্য বইগুলোকে গুরুত্বের বিচারে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও ‘জগৎ কুটির’ একটি ভিন্ন মাত্রা নিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে। এ বইটি পাঠ করার মধ্য দিয়ে অমর্ত্য সেনকে পরিপূর্ণভাবে চেনার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করি।
মুঈদ রহমান : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023