নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি
এই বাজেট অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে
বাজেট মানেই আশঙ্কা, আতঙ্ক, পূর্বাভাস। না জানি কী হয়! বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির! এবারও তা-ই ছিল পরিস্থিতি। আরও বেশি করে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিস্থিতির কারণে। যেমন, বাংলাদেশিদের ব্যাপারে মার্কিন ভিসানীতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান সংস্থা ‘মুডি’স রেটিংয়ে বাংলাদেশের ঋণমাপে অবনমন, কয়েকটি ব্যাংকের রেটিংয়ে অবনমন। দেশে সামনে নির্বাচন, ছয় মাসের মতো বাকি। সমস্যা অনেক : মূল্যস্ফীতি উঁচুতে, ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে টান, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা, ব্যাংকিং-এ তারল্য সংকট।
রপ্তানিতে নতুন সমস্যা, রেমিট্যান্সে হুন্ডিওয়ালাদের থাবা, রাজস্ব সংকট, খরচ বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যায় অর্থনীতি দিশাহীন। এমন অবস্থায় সবারই নজর ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের দিকে, সরকার কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে। কত লেখা, কত মন্তব্য! কত পরামর্শ! কত ‘টক শো’! কত সুপারিশ! শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন তাদের কথা, সরকার করেছেন তার মতো করে।
‘যথাপূর্বং তথা পরং’। যথারীতি বিশাল খরচের বাজেট, সর্বোচ্চ খরচের বাজেট। যথারীতি বড় ঘাটতির (ডেফিসিট) বাজেট, যথারীতি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা, যথারীতি উন্নয়ন বাজেটে স্থবিরতা। সব পুরোনো রোগ, পুরোনো সমস্যা। অথচ এসব সমাধানে যে সৃজনশীলতার দরকার ছিল, তা অনুপস্থিত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) খবরদারি এবং বেশ বড় হস্তক্ষেপ ছিল। এ প্রেক্ষাপটেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে দেখা যায়।
বাজেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে-সরকার কাদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করবে। দ্বিতীয়ত, কার জন্য তা কীভাবে খচর করবে। এর থেকে বোঝা যাবে সরকার কতটা ব্যবসা-ব্যবসায়ীবান্ধব, যা সাধারণের বন্ধু। তৃতীয়ত, দেখতে হয় আয়-ব্যয়ের পর কত থাকে হাতে উন্নয়নের জন্য। শত হোক ‘উন্নয়নই’ প্রধান কথা। আয় করলাম, আর সব উড়িয়ে দিলাম-তাহলে তো হবে না।
চতুর্থত, দেখতে হয় খরচের টাকার যদি সংস্থান না হয়, তাহলে অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা কী? কোত্থেকে আসবে ওই টাকা? এর মধ্যে বিদেশি ঋণ কত, স্বদেশি ঋণ কোত্থেকে আসবে? দেখতে হবে, এবার বিশেষ করে, কীভাবে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং ‘আইএমএফের’ শর্ত পূরণ করে। ব্যাংকিং খাতে ‘লড়াদশা’ পরিস্থিতির কী হবে? ডলার সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার ইজ্জত (মান) কীভাবে মোকাবিলা করা যায়। এসবের নিরিখে বিচার করলে এবারের বাজেটকে একটি অতি সাধারণ বাজেট বলা যায়। বোধহয় সেই কারণেই বাজেটের নাড়ি-নক্ষত্র মিডিয়ায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এত বড় বাজেট বক্তৃতার কোনো দরকারই ছিল না।
বাজেটে খরচের পরিমাণ ধরা হয়েছে সর্বমোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। গত বাজেটের তুলনায় ১ লাখ কোটি টাকার মতো বেশি। মোট আয় কত? মোট আয় সর্বমোট ৫ লাখ কোটি টাকা মাত্র। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একাই আয় করবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ব্যতীত মোট ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল পরিমাণের ঘাটতি, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২২-২৩ অর্থবছরে তা ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
মুশকিল হচ্ছে, দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থ কী? অর্থ হচ্ছে, উন্নয়নের জন্য আমাদের রাজস্ব উদ্বৃত্ত নেই। উন্নয়নের পুরো টাকাটাই ঋণের। দেশি ও বিদেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। স্বাধীনতার ৫১-৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এখনো আমরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাবালক হতে পারলাম না।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট (রেভিনিউ ও ডেভেলপমেন্ট) : ২০২৩-২৪-এর মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বেশির ভাগই আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব কার্যক্রম থেকে (৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা)। রাজস্ব বোর্ডের কাঠামোগত পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে তার আয় আসে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, আয়কর, সম্পূরক কর এবং অন্যান্য কর থেকে। দেখা যাচ্ছে, আয়করের ক্ষেত্রে এর অবদান কিছুটা বাড়বে। কিন্তু মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাটের) অবদানে সবিশেষ কোনো নড়নচড়ন নেই। বরং অবদান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমেছে।
এটা কেন? ভ্যাট তো সোনার খনি। এই খাতে প্রচুর সম্ভাবনা-এ কথা সবাই জানে, যদিও এটি পরোক্ষ কর। এখানে সাধারণ মানুষ ভ্যাট দেয় ঠিকই, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা সরকারের কাছে জমা দেয় না। বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, আয়করের হিস্যা ২০২৩-২৪-এ বাড়বে। তা বাড়ুক। শত হোক এটা প্রত্যক্ষ কর। কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র। দেখা যাচ্ছে করপোরেট ট্যাক্স অপরিবর্তিত। তাদের কর বাড়বে না। আবার আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, সরকারের কতগুলো সেবা নিতে হলে রিটার্ন জমা দিয়ে সর্বনিু দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। কেন? যার আয় করযোগ্য নয়, তার কাছ থেকে কর আদায় করা কেন? এটা কোন যুক্তিতে?
আবার দেখা যাচ্ছে, সম্পদের ওপর সারচার্জের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন সীমা এক কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখানে প্রশ্ন, ‘সারচার্জ’ যতটুকু নয়, তার চেয়ে বেশি ‘সম্পদের’ হিসাবায়ন পদ্ধতি। গুলশান-বনানীর বাড়িওয়ালার কোনো সারচার্জ নেই, অথচ যার ফিন্যান্সিয়েল অ্যাসেট আছে, তাকে সারচার্জ দিতে হয়। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কিছুটা স্বস্তি পাবে মধ্যবিত্ত আয়করদাতারা। অনেক দিন ধরে দাবি ছিল করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো দরকার। কৃপণতা করে সাধারণের জন্য করমুক্ত আয়সীমা করা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা, যা ছিল ৩ লাখ টাকা। বলা বাহুল্য, এটা কোনো বৃদ্ধি নয়।
গত কয়েক বছরে যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তার তুলনায় এই বৃদ্ধি কিছুই নয়। শুধু সাধারণ করদাতা নয়, মহিলা ও বয়স্ক পুরুষ, মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি শ্রেণির বেলাতেও কিছুটা করে করমুক্ত সীমা বাড়ানো হয়েছে। সার্বিকভাবে দেখলে বোঝা যাবে, সরকার রাজস্ব আদায় করছে সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্ত থেকে। এমনকি যার কোনো করযোগ্য আয় নেই, তার সুদ আয় থেকেও উৎসে কর হিসাবে ১০-১৫ শতাংশ কর কেটে নেওয়া হচ্ছে। যেখানে এই সংকটকালে ধনীদের অবদান রাখার কথা বেশি, সেখানে সরকার তাদের ছাড় দিয়েই চলেছে। এক পয়সা করও ২৩-২৪-এ এদের বেলায় বাড়েনি।
আসা যাক খরচের ক্ষেত্রে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে, তার প্রায় ৩৯ শতাংশই খরচ হবে তিন খাতে : সুদ বাবদ, প্রশাসন বাবদ এবং জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে। এর মধ্যে সুদ বাবদ এবং জনপ্রশাসন খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শতকরা হিসাবে খরচ বাড়বে। সুদের যাবে ১১ দশমিক ৯ শতাংশের স্থলে ১২ দশমিক চার শতাংশ। জনপ্রশাসনে সবচেয়ে বেশি। ১৯ দশমিক নয় শতাংশের স্থলে ২২ শতাংশ। এটা কি বেতন বৃদ্ধির জন্য নয়? যদি বেতন বৃদ্ধির জন্য হয়, তাহলে বাজারে অতিরিক্ত ‘মানি’ কি মূল্যস্ফীতি উসকে দেবে না? এর সঙ্গে যোগ হবে সুদ ব্যয়। সুদে ব্যয় বাড়বে। তার মানে ঋণ বাড়ছে, সুদ ব্যয়ও বাড়ছে।
ব্যাংক ঋণ কোত্থেকে আসবে? ব্যাংকে তারল্য কোথায়, আমানত কোথায়? তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া আরও বাড়বে আগামী অর্থবছরে। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নেওয়া হয়েছে। এটা তো ভালো লক্ষণ নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিক সরকার। সরকার যদি মালিক হিসাবে যখন-তখন সেখান থেকে ঋণ নেয়, তাহলে পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াবে? যদি ডলারের মূল্য আরও বাড়ে, তাহলে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাহলে তো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আরও বাড়তে পারে। মজার ঘটনা হচ্ছে, শতকরা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি খাতে সরকারি বরাদ্দ হ্রাস পাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এই খাত তিনটি হচ্ছে : শিক্ষা ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং কৃষি। প্রথমটির ক্ষেত্রে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশের স্থলে নতুন বরাদ্দ হচ্ছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ৪ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ এবং কৃষিতে ৬ দশমিক ২ শতাংশের স্থলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
এই খাত তিনটিতে বরাদ্দ কমার যুক্তি কী তা আমার বোধগম্য নয়। বরাদ্দ কমবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ’ খাতে। ২০২২-২৩-এর ৫ দশমিক ৫ শতাংশের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে খচর ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ দেশে দুর্দশাগ্রস্ত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরে দারিদ্র্য বাড়ছে। শহরে নতুন করে মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। তার পরও বাজেটে শতকরা হিসাবে এ খাতে বরাদ্দ কমার কারণ কী জানা গেল না। মজার ঘটনা হচ্ছে, পেনশনের টাকা, ছাত্রদের বৃত্তির টাকা যোগ করার পরেও বরাদ্দ কম দেখানো হচ্ছে। এসব তো গেল, আসল খবরটা কী? মূল্যস্ফীতি রোধের ব্যবস্থা কী, সে কথা তো জানা গেল না। বাজেট বক্তৃতায় কতগুলো পদক্ষেপের কথা শোনানো হয়েছে।
বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কম সুদে ঋণ প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে নাকি মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে নামানো হবে। অবশ্যই রয়েছে বাজেটের বাইরের পদক্ষেপ। এ বছরের মাঝখানে তেলের দাম, গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতির কী হবে? এছাড়া রয়েছে অনেক ইস্যু, যেমন-বাজেটের গুণগত মান বৃদ্ধি, ডলার সংকটের সমাধান, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ধরে রাখা, ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রশ্ন ইত্যাদি। এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাজেটে কথাবার্তা কম। মনে হয় অর্থ মন্ত্রণালয় এক কাজেই ব্যস্ত ছিল। কী করে আইএমএফকে সন্তুষ্ট করা যায়। এর পথ না পেয়ে সব টিআইএনধারীদের ওপর সর্বনিু কর বসানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাজারের অবস্থা কী? চোখ বুজে বলা যায়, বরাবর যা হয়েছে, এবারও তা-ই হবে। যে পণ্যের দাম কমার কথা তা কমবে না, যে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে কয়েকটি পদক্ষেপ বাজেটে ভালো আছে। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা প্রদান করা হবে, করপোরেটগুলোর উইদহোল্ডিং ট্যাক্স রিটার্নের সংখ্যা কমানো হবে, গরিবদের ভাতা সামান্য বৃদ্ধি, সর্বজনীন পেনশন চালু ইত্যাদি।
সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ দশমিক ৩ শতাংশের স্থলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার হবে ৬ শতাংশ, যা এখন আছে ৯ শতাংশের উপরে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার হবে চলতি বছরের ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশের স্থলে ২৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এসব কি বাস্তবায়নযোগ্য? খুবই সন্দেহজনক বিষয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে এর লক্ষণ কোথায়? বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ স্থবির। বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে? মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ৫০ শতাংশ কম। তাহলে কীভাবে তা সম্ভব? রয়েছে রাজস্বের প্রশ্ন।
২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার স্থলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কোত্থেকে আসবে এ টাকা? নানা প্রশ্নে জর্জরিত নির্বাচনি বাজেট নিয়ে মানুষের মধ্যে হইচই কম। যা হচ্ছে তা অর্থনীতিবিদ ও কলাম লেখকদের মধ্যে। সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করছে বাজারে এর প্রতিক্রিয়া কী হয় তা দেখতে। চাল, আটা, ময়দা, শাকসবজি, মাছ-মাংস, পেঁয়াজ-রসুন ইত্যাদির দাম কি কমবে? গ্যাস, তেল, বিদ্যুতের বিল কি বাড়বে? দুশ্চিন্তা জনমনে।
ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এই বাজেট অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে
নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি
ড. আর এম দেবনাথ
০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাজেট মানেই আশঙ্কা, আতঙ্ক, পূর্বাভাস। না জানি কী হয়! বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির! এবারও তা-ই ছিল পরিস্থিতি। আরও বেশি করে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিস্থিতির কারণে। যেমন, বাংলাদেশিদের ব্যাপারে মার্কিন ভিসানীতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান সংস্থা ‘মুডি’স রেটিংয়ে বাংলাদেশের ঋণমাপে অবনমন, কয়েকটি ব্যাংকের রেটিংয়ে অবনমন। দেশে সামনে নির্বাচন, ছয় মাসের মতো বাকি। সমস্যা অনেক : মূল্যস্ফীতি উঁচুতে, ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে টান, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা, ব্যাংকিং-এ তারল্য সংকট।
রপ্তানিতে নতুন সমস্যা, রেমিট্যান্সে হুন্ডিওয়ালাদের থাবা, রাজস্ব সংকট, খরচ বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যায় অর্থনীতি দিশাহীন। এমন অবস্থায় সবারই নজর ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের দিকে, সরকার কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে। কত লেখা, কত মন্তব্য! কত পরামর্শ! কত ‘টক শো’! কত সুপারিশ! শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন তাদের কথা, সরকার করেছেন তার মতো করে।
‘যথাপূর্বং তথা পরং’। যথারীতি বিশাল খরচের বাজেট, সর্বোচ্চ খরচের বাজেট। যথারীতি বড় ঘাটতির (ডেফিসিট) বাজেট, যথারীতি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা, যথারীতি উন্নয়ন বাজেটে স্থবিরতা। সব পুরোনো রোগ, পুরোনো সমস্যা। অথচ এসব সমাধানে যে সৃজনশীলতার দরকার ছিল, তা অনুপস্থিত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) খবরদারি এবং বেশ বড় হস্তক্ষেপ ছিল। এ প্রেক্ষাপটেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে দেখা যায়।
বাজেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে-সরকার কাদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করবে। দ্বিতীয়ত, কার জন্য তা কীভাবে খচর করবে। এর থেকে বোঝা যাবে সরকার কতটা ব্যবসা-ব্যবসায়ীবান্ধব, যা সাধারণের বন্ধু। তৃতীয়ত, দেখতে হয় আয়-ব্যয়ের পর কত থাকে হাতে উন্নয়নের জন্য। শত হোক ‘উন্নয়নই’ প্রধান কথা। আয় করলাম, আর সব উড়িয়ে দিলাম-তাহলে তো হবে না।
চতুর্থত, দেখতে হয় খরচের টাকার যদি সংস্থান না হয়, তাহলে অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা কী? কোত্থেকে আসবে ওই টাকা? এর মধ্যে বিদেশি ঋণ কত, স্বদেশি ঋণ কোত্থেকে আসবে? দেখতে হবে, এবার বিশেষ করে, কীভাবে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং ‘আইএমএফের’ শর্ত পূরণ করে। ব্যাংকিং খাতে ‘লড়াদশা’ পরিস্থিতির কী হবে? ডলার সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার ইজ্জত (মান) কীভাবে মোকাবিলা করা যায়। এসবের নিরিখে বিচার করলে এবারের বাজেটকে একটি অতি সাধারণ বাজেট বলা যায়। বোধহয় সেই কারণেই বাজেটের নাড়ি-নক্ষত্র মিডিয়ায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এত বড় বাজেট বক্তৃতার কোনো দরকারই ছিল না।
বাজেটে খরচের পরিমাণ ধরা হয়েছে সর্বমোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। গত বাজেটের তুলনায় ১ লাখ কোটি টাকার মতো বেশি। মোট আয় কত? মোট আয় সর্বমোট ৫ লাখ কোটি টাকা মাত্র। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একাই আয় করবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ব্যতীত মোট ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল পরিমাণের ঘাটতি, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২২-২৩ অর্থবছরে তা ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
মুশকিল হচ্ছে, দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থ কী? অর্থ হচ্ছে, উন্নয়নের জন্য আমাদের রাজস্ব উদ্বৃত্ত নেই। উন্নয়নের পুরো টাকাটাই ঋণের। দেশি ও বিদেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। স্বাধীনতার ৫১-৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এখনো আমরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাবালক হতে পারলাম না।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট (রেভিনিউ ও ডেভেলপমেন্ট) : ২০২৩-২৪-এর মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বেশির ভাগই আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব কার্যক্রম থেকে (৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা)। রাজস্ব বোর্ডের কাঠামোগত পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে তার আয় আসে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, আয়কর, সম্পূরক কর এবং অন্যান্য কর থেকে। দেখা যাচ্ছে, আয়করের ক্ষেত্রে এর অবদান কিছুটা বাড়বে। কিন্তু মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাটের) অবদানে সবিশেষ কোনো নড়নচড়ন নেই। বরং অবদান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমেছে।
এটা কেন? ভ্যাট তো সোনার খনি। এই খাতে প্রচুর সম্ভাবনা-এ কথা সবাই জানে, যদিও এটি পরোক্ষ কর। এখানে সাধারণ মানুষ ভ্যাট দেয় ঠিকই, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা সরকারের কাছে জমা দেয় না। বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, আয়করের হিস্যা ২০২৩-২৪-এ বাড়বে। তা বাড়ুক। শত হোক এটা প্রত্যক্ষ কর। কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র। দেখা যাচ্ছে করপোরেট ট্যাক্স অপরিবর্তিত। তাদের কর বাড়বে না। আবার আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, সরকারের কতগুলো সেবা নিতে হলে রিটার্ন জমা দিয়ে সর্বনিু দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। কেন? যার আয় করযোগ্য নয়, তার কাছ থেকে কর আদায় করা কেন? এটা কোন যুক্তিতে?
আবার দেখা যাচ্ছে, সম্পদের ওপর সারচার্জের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন সীমা এক কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখানে প্রশ্ন, ‘সারচার্জ’ যতটুকু নয়, তার চেয়ে বেশি ‘সম্পদের’ হিসাবায়ন পদ্ধতি। গুলশান-বনানীর বাড়িওয়ালার কোনো সারচার্জ নেই, অথচ যার ফিন্যান্সিয়েল অ্যাসেট আছে, তাকে সারচার্জ দিতে হয়। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কিছুটা স্বস্তি পাবে মধ্যবিত্ত আয়করদাতারা। অনেক দিন ধরে দাবি ছিল করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো দরকার। কৃপণতা করে সাধারণের জন্য করমুক্ত আয়সীমা করা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা, যা ছিল ৩ লাখ টাকা। বলা বাহুল্য, এটা কোনো বৃদ্ধি নয়।
গত কয়েক বছরে যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তার তুলনায় এই বৃদ্ধি কিছুই নয়। শুধু সাধারণ করদাতা নয়, মহিলা ও বয়স্ক পুরুষ, মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি শ্রেণির বেলাতেও কিছুটা করে করমুক্ত সীমা বাড়ানো হয়েছে। সার্বিকভাবে দেখলে বোঝা যাবে, সরকার রাজস্ব আদায় করছে সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্ত থেকে। এমনকি যার কোনো করযোগ্য আয় নেই, তার সুদ আয় থেকেও উৎসে কর হিসাবে ১০-১৫ শতাংশ কর কেটে নেওয়া হচ্ছে। যেখানে এই সংকটকালে ধনীদের অবদান রাখার কথা বেশি, সেখানে সরকার তাদের ছাড় দিয়েই চলেছে। এক পয়সা করও ২৩-২৪-এ এদের বেলায় বাড়েনি।
আসা যাক খরচের ক্ষেত্রে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে, তার প্রায় ৩৯ শতাংশই খরচ হবে তিন খাতে : সুদ বাবদ, প্রশাসন বাবদ এবং জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে। এর মধ্যে সুদ বাবদ এবং জনপ্রশাসন খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শতকরা হিসাবে খরচ বাড়বে। সুদের যাবে ১১ দশমিক ৯ শতাংশের স্থলে ১২ দশমিক চার শতাংশ। জনপ্রশাসনে সবচেয়ে বেশি। ১৯ দশমিক নয় শতাংশের স্থলে ২২ শতাংশ। এটা কি বেতন বৃদ্ধির জন্য নয়? যদি বেতন বৃদ্ধির জন্য হয়, তাহলে বাজারে অতিরিক্ত ‘মানি’ কি মূল্যস্ফীতি উসকে দেবে না? এর সঙ্গে যোগ হবে সুদ ব্যয়। সুদে ব্যয় বাড়বে। তার মানে ঋণ বাড়ছে, সুদ ব্যয়ও বাড়ছে।
ব্যাংক ঋণ কোত্থেকে আসবে? ব্যাংকে তারল্য কোথায়, আমানত কোথায়? তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া আরও বাড়বে আগামী অর্থবছরে। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নেওয়া হয়েছে। এটা তো ভালো লক্ষণ নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিক সরকার। সরকার যদি মালিক হিসাবে যখন-তখন সেখান থেকে ঋণ নেয়, তাহলে পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াবে? যদি ডলারের মূল্য আরও বাড়ে, তাহলে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাহলে তো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আরও বাড়তে পারে। মজার ঘটনা হচ্ছে, শতকরা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি খাতে সরকারি বরাদ্দ হ্রাস পাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এই খাত তিনটি হচ্ছে : শিক্ষা ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং কৃষি। প্রথমটির ক্ষেত্রে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশের স্থলে নতুন বরাদ্দ হচ্ছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ৪ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ এবং কৃষিতে ৬ দশমিক ২ শতাংশের স্থলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
এই খাত তিনটিতে বরাদ্দ কমার যুক্তি কী তা আমার বোধগম্য নয়। বরাদ্দ কমবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ’ খাতে। ২০২২-২৩-এর ৫ দশমিক ৫ শতাংশের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে খচর ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ দেশে দুর্দশাগ্রস্ত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরে দারিদ্র্য বাড়ছে। শহরে নতুন করে মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। তার পরও বাজেটে শতকরা হিসাবে এ খাতে বরাদ্দ কমার কারণ কী জানা গেল না। মজার ঘটনা হচ্ছে, পেনশনের টাকা, ছাত্রদের বৃত্তির টাকা যোগ করার পরেও বরাদ্দ কম দেখানো হচ্ছে। এসব তো গেল, আসল খবরটা কী? মূল্যস্ফীতি রোধের ব্যবস্থা কী, সে কথা তো জানা গেল না। বাজেট বক্তৃতায় কতগুলো পদক্ষেপের কথা শোনানো হয়েছে।
বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কম সুদে ঋণ প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে নাকি মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে নামানো হবে। অবশ্যই রয়েছে বাজেটের বাইরের পদক্ষেপ। এ বছরের মাঝখানে তেলের দাম, গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতির কী হবে? এছাড়া রয়েছে অনেক ইস্যু, যেমন-বাজেটের গুণগত মান বৃদ্ধি, ডলার সংকটের সমাধান, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ধরে রাখা, ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রশ্ন ইত্যাদি। এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাজেটে কথাবার্তা কম। মনে হয় অর্থ মন্ত্রণালয় এক কাজেই ব্যস্ত ছিল। কী করে আইএমএফকে সন্তুষ্ট করা যায়। এর পথ না পেয়ে সব টিআইএনধারীদের ওপর সর্বনিু কর বসানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাজারের অবস্থা কী? চোখ বুজে বলা যায়, বরাবর যা হয়েছে, এবারও তা-ই হবে। যে পণ্যের দাম কমার কথা তা কমবে না, যে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে কয়েকটি পদক্ষেপ বাজেটে ভালো আছে। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা প্রদান করা হবে, করপোরেটগুলোর উইদহোল্ডিং ট্যাক্স রিটার্নের সংখ্যা কমানো হবে, গরিবদের ভাতা সামান্য বৃদ্ধি, সর্বজনীন পেনশন চালু ইত্যাদি।
সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ দশমিক ৩ শতাংশের স্থলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার হবে ৬ শতাংশ, যা এখন আছে ৯ শতাংশের উপরে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার হবে চলতি বছরের ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশের স্থলে ২৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এসব কি বাস্তবায়নযোগ্য? খুবই সন্দেহজনক বিষয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে এর লক্ষণ কোথায়? বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ স্থবির। বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে? মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ৫০ শতাংশ কম। তাহলে কীভাবে তা সম্ভব? রয়েছে রাজস্বের প্রশ্ন।
২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার স্থলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কোত্থেকে আসবে এ টাকা? নানা প্রশ্নে জর্জরিত নির্বাচনি বাজেট নিয়ে মানুষের মধ্যে হইচই কম। যা হচ্ছে তা অর্থনীতিবিদ ও কলাম লেখকদের মধ্যে। সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করছে বাজারে এর প্রতিক্রিয়া কী হয় তা দেখতে। চাল, আটা, ময়দা, শাকসবজি, মাছ-মাংস, পেঁয়াজ-রসুন ইত্যাদির দাম কি কমবে? গ্যাস, তেল, বিদ্যুতের বিল কি বাড়বে? দুশ্চিন্তা জনমনে।
ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023