প্রাথমিক শিক্ষার যন্ত্রণা
দায়িত্ব পালনে আত্মতৃপ্তির পাশাপাশি মনঃকষ্টেও ভুগতেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমি তাদের উন্নয়নে এবং কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি।’ নিজের অতৃপ্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী এমপিদের ৫১ শতাংশই ছিলেন অ্যাডভোকেট। এরপরই অবস্থান ছিল কলেজ-হাইস্কুলের শিক্ষক ও সার্বক্ষণিক রাজনীতিকদের। ব্যবসায়ী ছিলেন শতকরা ২ থেকে ৩ শতাংশ, আর এখন? ৬২ শতাংশই ব্যবসায়ী। এ পরিসংখ্যান অবশ্যই যন্ত্রণা দেয়।’
জাতীয় সংসদে তার সর্বশেষ ভাষণের প্রসঙ্গ তুলে মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার নেতা। বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে আমি সংসদে কথা বলেছি। আমি কী চাই-সেটা বলার চেষ্টা করেছি। সংসদে এমপিদের পেশাগত পরিচয়ের পরিসংখ্যান যন্ত্রণা দেয় আমাকে।’ এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা রাজনীতি করেন, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। পরিচ্ছন্ন ও ভালো মানুষকে রাজনীতিতে আনতে হবে। তারাই এমপি হবেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার, এখন সবাই এমপি হতে চান। সচিব ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা অবসরে গিয়ে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাদের কেন এমপি হতে হবে? আর তারাই যদি এমপি হন, তাহলে যারা মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করেন, তারা পাবেনটা কী?’
মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ক্ষমতায় যেতেই হবে’-এ মানসিকতা বর্জন করতে হবে সব রাজনৈতিক দলকে। ভালো মানুষ নিয়ে রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি ও নির্বাচন করতে হবে। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, না হলে যাবে না; এটা সব রাজনৈতিক দলের বিশ্বাসে থাকলে রাজনীতি সমান গতিতে চলবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ চেতনা সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই থাকতে হবে।’ এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সব রাজনীতিককে পরামর্শ দিয়েছেন সদ্য বিদায়ি রাষ্ট্রপতি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের, বিশেষ করে তৃণমূলের শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে স্বাধীনতার ঊষালগ্নে তৃণমূলের মেহনতি মানুষের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতের মাধ্যমে। চরম অভাব ও হাহাকারের মাঝে তিনি ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তার বিশাল হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা আজ প্রাথমিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুধাবন করা প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয়ে ছিল নির্যাতিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষের প্রতি নিবিড় প্রেম। তারই প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হচ্ছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তৃণমূলের হাওড়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার চিত্রের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু একবার তার শিক্ষককে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে সবাইকে ডেকে বলেন, ‘তোরা দেখে যা আমার শিক্ষককে।’ কী অপূর্ব হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন!
তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝেও শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা কানায় কানায় পরিপূর্ণ। শুধু শিক্ষক নয়, শিশুদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা তার মাঝে বিদ্যমান। অথচ অনুরূপ ভালোবাসা সরকারের উচ্চপদে অনেকের মাঝে দৃশ্যমান নয়। তাদের ভালোবাসা তলানিতে গিয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক। এ প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের কার্যক্রমের কথা মনে এলো। তিনি যোগদান করেই তার পরিচিতি দ্রুত জানান দেওয়ার জন্য, স্বল্পসময়ে বিধি লঙ্গন করে বহু শিক্ষক, কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। পরে আবার দ্রুত সেই আদেশ প্রত্যাহার করেন।
অবসর গ্রহণের আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ কেলেঙ্কারির বোঝা নিয়ে চাকরি থেকে বিদায় হন। তার মুখে সর্বদাই জপতে দেখা যেত সরকারের প্রতি তোষামোদপূর্ণ বক্তব্য। সরকারি বিধি মোতাবেক যাচাই বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এ ধরনের সাময়িক বরখাস্ত বা কোনোরকম শাস্তি কাম্য নয়। ইদানীং শিক্ষক কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ফেসবুকের ওপর সরকারের সুদৃষ্টির বিষয়টি নজরে এসেছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব নাগরিকের ফেসবুকের ওপর সর্বদা নজর রাখা সরকার ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে অপরিহার্য। ফেসবুক ব্যবহারেও রাষ্ট্রবিরোধী, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, সরকারের কার্যক্রম ব্যাহত বা কারও মনে আঘাত আসে বা সাম্প্রদায়িক উসকানির কাজ করে, এসব ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা উচিত। এধরনের কর্মকাণ্ড আইনের দৃষ্টিতেও অপরাধের শামিল। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের বিরূপ সমালোচনা কাম্য নয়। ফেসবুকে দেওয়া বক্তব্য বা সমালোচনাও মার্জিত ও গঠনমূলক হওয়া প্রয়োজন। তবে বৈষম্যমূলক আচরণসহ মুসলমান শিক্ষার্থীদের কায়দা, আমপারা, কুরআন শরিফ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা ধর্মীয় অধিকার নষ্ট করার পর্যায়ে পড়ে। এ জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মার্জিতভাবে ফেসবুকে লেখার অধিকার কেন বিধিবহির্ভূত হবে?
ইউআরসি ১৬তম স্কেলের কম্পিউটার অপারেটরকে ১০তম স্কেলে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষক হিসাবে পদায়ন করবেন আর ফেসবুকের ভয় দেখাবেন। এটাইবা কতটুকু বিধিসম্মত? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য লেখার বিষয়ে দায়ী প্রথমত এসব ঘটনায় জড়িত সংশ্লিষ্টরা। নাগরিকের সঙ্গে কোনো কর্মচারীর বৈষম্যমূলক আচরণের জবাবদিহিতা সর্বাগ্রে কাম্য। বিশেষ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না, যাতে অধীনস্থদের হাইকোর্টে রিট করার জন্য দ্বারস্থ হতে হয়।
এ মন্ত্রণালয় বৈষম্যের পাহাড় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যার অন্যতম কারণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষার মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মকর্তারা অনেকে দক্ষ, অভিজ্ঞ হলেও শিশু শিক্ষায় খুব বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা আসেননি। দুই যুগ ধরে প্রাথমিকের ক্যাডার সার্ভিস থমকে আছে। দক্ষ-অভিজ্ঞ মন্ত্রী, সচিবদের পদচারণা এ মন্ত্রণালয়ে থাকলেও কারও খেয়াল নেই যে, সব মন্ত্রণালয়ে ক্যাডার সার্ভিস আছে, অথচ প্রাথমিকের মতো বড় মন্ত্রণালয় ক্যাডারবিহীন।
ফলে সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মতো তৃণমূলের রাজনীতি করতে করতে বেড়ে ওঠা মানুষদের সংসদ-সদস্য হতে হবে। আর প্রাথমিক শিক্ষায় অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধদের নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মহাপরিচালকের দপ্তরে নীতিনির্ধারণ পর্যায় সমৃদ্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রাথমিকের সব পর্যায়ে নিয়োগের মহড়া বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক এন্ট্রি পদ ধরে সর্বোচ্চ পদে শতভাগ পদায়ন করা উচিত। পদোন্নতির সুযোগ নিশ্চিত হলে মেধাবী ও চৌকস তরুণ-তরুণী ঝাঁকে ঝাঁকে প্রাথমিকে আসবে। ক্যাডার সার্ভিসের মাধ্যমে অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ জনবল নিয়ে গড়ে উঠবে আগামী প্রজন্মের স্মার্ট বাংলাদেশ।
মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ
প্রাথমিক শিক্ষার যন্ত্রণা
মো. সিদ্দিকুর রহমান
১০ জুন ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দায়িত্ব পালনে আত্মতৃপ্তির পাশাপাশি মনঃকষ্টেও ভুগতেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমি তাদের উন্নয়নে এবং কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি।’ নিজের অতৃপ্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী এমপিদের ৫১ শতাংশই ছিলেন অ্যাডভোকেট। এরপরই অবস্থান ছিল কলেজ-হাইস্কুলের শিক্ষক ও সার্বক্ষণিক রাজনীতিকদের। ব্যবসায়ী ছিলেন শতকরা ২ থেকে ৩ শতাংশ, আর এখন? ৬২ শতাংশই ব্যবসায়ী। এ পরিসংখ্যান অবশ্যই যন্ত্রণা দেয়।’
জাতীয় সংসদে তার সর্বশেষ ভাষণের প্রসঙ্গ তুলে মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার নেতা। বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে আমি সংসদে কথা বলেছি। আমি কী চাই-সেটা বলার চেষ্টা করেছি। সংসদে এমপিদের পেশাগত পরিচয়ের পরিসংখ্যান যন্ত্রণা দেয় আমাকে।’ এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা রাজনীতি করেন, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। পরিচ্ছন্ন ও ভালো মানুষকে রাজনীতিতে আনতে হবে। তারাই এমপি হবেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার, এখন সবাই এমপি হতে চান। সচিব ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা অবসরে গিয়ে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাদের কেন এমপি হতে হবে? আর তারাই যদি এমপি হন, তাহলে যারা মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করেন, তারা পাবেনটা কী?’
মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ক্ষমতায় যেতেই হবে’-এ মানসিকতা বর্জন করতে হবে সব রাজনৈতিক দলকে। ভালো মানুষ নিয়ে রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি ও নির্বাচন করতে হবে। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, না হলে যাবে না; এটা সব রাজনৈতিক দলের বিশ্বাসে থাকলে রাজনীতি সমান গতিতে চলবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ চেতনা সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই থাকতে হবে।’ এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সব রাজনীতিককে পরামর্শ দিয়েছেন সদ্য বিদায়ি রাষ্ট্রপতি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের, বিশেষ করে তৃণমূলের শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে স্বাধীনতার ঊষালগ্নে তৃণমূলের মেহনতি মানুষের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতের মাধ্যমে। চরম অভাব ও হাহাকারের মাঝে তিনি ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তার বিশাল হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা আজ প্রাথমিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুধাবন করা প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয়ে ছিল নির্যাতিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষের প্রতি নিবিড় প্রেম। তারই প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হচ্ছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তৃণমূলের হাওড়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার চিত্রের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু একবার তার শিক্ষককে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে সবাইকে ডেকে বলেন, ‘তোরা দেখে যা আমার শিক্ষককে।’ কী অপূর্ব হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন!
তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝেও শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা কানায় কানায় পরিপূর্ণ। শুধু শিক্ষক নয়, শিশুদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা তার মাঝে বিদ্যমান। অথচ অনুরূপ ভালোবাসা সরকারের উচ্চপদে অনেকের মাঝে দৃশ্যমান নয়। তাদের ভালোবাসা তলানিতে গিয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক। এ প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের কার্যক্রমের কথা মনে এলো। তিনি যোগদান করেই তার পরিচিতি দ্রুত জানান দেওয়ার জন্য, স্বল্পসময়ে বিধি লঙ্গন করে বহু শিক্ষক, কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। পরে আবার দ্রুত সেই আদেশ প্রত্যাহার করেন।
অবসর গ্রহণের আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ কেলেঙ্কারির বোঝা নিয়ে চাকরি থেকে বিদায় হন। তার মুখে সর্বদাই জপতে দেখা যেত সরকারের প্রতি তোষামোদপূর্ণ বক্তব্য। সরকারি বিধি মোতাবেক যাচাই বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এ ধরনের সাময়িক বরখাস্ত বা কোনোরকম শাস্তি কাম্য নয়। ইদানীং শিক্ষক কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ফেসবুকের ওপর সরকারের সুদৃষ্টির বিষয়টি নজরে এসেছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব নাগরিকের ফেসবুকের ওপর সর্বদা নজর রাখা সরকার ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে অপরিহার্য। ফেসবুক ব্যবহারেও রাষ্ট্রবিরোধী, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, সরকারের কার্যক্রম ব্যাহত বা কারও মনে আঘাত আসে বা সাম্প্রদায়িক উসকানির কাজ করে, এসব ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা উচিত। এধরনের কর্মকাণ্ড আইনের দৃষ্টিতেও অপরাধের শামিল। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের বিরূপ সমালোচনা কাম্য নয়। ফেসবুকে দেওয়া বক্তব্য বা সমালোচনাও মার্জিত ও গঠনমূলক হওয়া প্রয়োজন। তবে বৈষম্যমূলক আচরণসহ মুসলমান শিক্ষার্থীদের কায়দা, আমপারা, কুরআন শরিফ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা ধর্মীয় অধিকার নষ্ট করার পর্যায়ে পড়ে। এ জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মার্জিতভাবে ফেসবুকে লেখার অধিকার কেন বিধিবহির্ভূত হবে?
ইউআরসি ১৬তম স্কেলের কম্পিউটার অপারেটরকে ১০তম স্কেলে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষক হিসাবে পদায়ন করবেন আর ফেসবুকের ভয় দেখাবেন। এটাইবা কতটুকু বিধিসম্মত? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য লেখার বিষয়ে দায়ী প্রথমত এসব ঘটনায় জড়িত সংশ্লিষ্টরা। নাগরিকের সঙ্গে কোনো কর্মচারীর বৈষম্যমূলক আচরণের জবাবদিহিতা সর্বাগ্রে কাম্য। বিশেষ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না, যাতে অধীনস্থদের হাইকোর্টে রিট করার জন্য দ্বারস্থ হতে হয়।
এ মন্ত্রণালয় বৈষম্যের পাহাড় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যার অন্যতম কারণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষার মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মকর্তারা অনেকে দক্ষ, অভিজ্ঞ হলেও শিশু শিক্ষায় খুব বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা আসেননি। দুই যুগ ধরে প্রাথমিকের ক্যাডার সার্ভিস থমকে আছে। দক্ষ-অভিজ্ঞ মন্ত্রী, সচিবদের পদচারণা এ মন্ত্রণালয়ে থাকলেও কারও খেয়াল নেই যে, সব মন্ত্রণালয়ে ক্যাডার সার্ভিস আছে, অথচ প্রাথমিকের মতো বড় মন্ত্রণালয় ক্যাডারবিহীন।
ফলে সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মতো তৃণমূলের রাজনীতি করতে করতে বেড়ে ওঠা মানুষদের সংসদ-সদস্য হতে হবে। আর প্রাথমিক শিক্ষায় অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধদের নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মহাপরিচালকের দপ্তরে নীতিনির্ধারণ পর্যায় সমৃদ্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রাথমিকের সব পর্যায়ে নিয়োগের মহড়া বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক এন্ট্রি পদ ধরে সর্বোচ্চ পদে শতভাগ পদায়ন করা উচিত। পদোন্নতির সুযোগ নিশ্চিত হলে মেধাবী ও চৌকস তরুণ-তরুণী ঝাঁকে ঝাঁকে প্রাথমিকে আসবে। ক্যাডার সার্ভিসের মাধ্যমে অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ জনবল নিয়ে গড়ে উঠবে আগামী প্রজন্মের স্মার্ট বাংলাদেশ।
মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023