ধারাবাহিক নাটকে দর্শকের আগ্রহ বাড়ছে
একটা সময় ধারাবাহিক নাটকের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। এসব নাটকে অভিনয়ের জন্য তারকাশিল্পীদেরও আগ্রহ দেখা গেছে, আবার অনেকেই ধারাবাহিক থেকেই পেয়েছেন পরিচিতি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা ও নির্মাণ। কমেছে শিল্পীদেরও আগ্রহ। এখন সীমিত সংখ্যক ধারাবাহিক নির্মাণ হলেও, সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই খুব একটা আলোচনায় আসতে পারছে না। কারণ, পারিবারিক গল্পের অভাব। বেশির ভাগ নাটকেই দেখা যায় কমেডির নামে ভাঁড়ামি। যা দর্শকবিমুখতার কারণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবারও ধারাবাহিক নাটকের প্রতি দর্শকের আগ্রহ বাড়ছে।
আনন্দনগর প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গল্পের ধারাবাহিকতা না থাকা, পারিবারিক কিংবা বন্ধুত্বের গল্পের অভাব, অতিরিক্ত ভাঁড়ামিসহ নানাবিধ কারণে ধারাবাহিক নাটকের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ অনেকটা তলানিতে ছিল দীর্ঘ সময়। নির্মাতারাও ধারাবাহিক নির্মাণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে আশার কথা, ইদানীং আবারও ধারাবাহিক নাটকের নির্মাণ বাড়ছে। গল্পে ফিরছে পারিবারিক টানাপোড়েন ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এসব নাটকের প্রতি দর্শকেরও আগ্রহ বাড়ছে। সদ্য শুরু হওয়া ধারাবাহিকগুলোর দিকে নজর দিলেই তা টের পাওয়া যায়। এ ছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে আরও কিছু নাটক।
গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে নির্মিত হচ্ছে ‘ঘুরিতেছে পাঙ্খা’ নামে একটি নতুন ধারাবাহিক নাটক। এটি তিন বন্ধু বাবুল, মোহন ও পাঙ্খার মজার সব কাণ্ড, প্রেম, ঝগড়া আর স্যাটেলাইট ক্যাবল ব্যবসা ঘিরে নির্মিত হচ্ছে। রচনা ও পরিচালনা করেছেন হিমু আকরাম। নাটকটি আজ থেকে আরটিভিতি প্রচার শুরু হচ্ছে বলে জানান নির্মাতা। নাটকে দেখা যাবে, তিন বন্ধু মিলে চালায় পাঙ্খা স্যাটেলাইট নামের ডিস কোম্পানি। এ ব্যবসার পাশাপাশি তাদের ভিন্ন ভিন্ন শখ রয়েছে। গ্রাম্য বিজ্ঞানী পাঙ্খার হাতির পিঠে বিয়ের স্বপ্ন, কুংফু ওস্তাদ বাবুলের সোনার দাঁতের খায়েশ, আর সুদের কারবার করা মোহনের প্রেমের বহুদিক রয়েছে। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন আ খ ম হাসান, আরফান আহমেদ, ফারুক আহমেদ, ডা. এজাজুল ইসলাম, রাশেদ সীমান্ত, জিল্লু, রোজী সিদ্দিকী, মৌসুমী হামিদ, আমিন আজাদসহ অনেকে।
এ নাটক প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘নাটকটি শুধু একটি কৌতুকধর্মী ধারাবাহিক নয়, এখানে গ্রামীণ জীবনের স্বপ্ন, হাসি-কান্না আর সম্পর্কের নানা রং উঠে আসবে। আমি চাই দর্শক নিজেদের গল্পও এই নাটকের ভেতরে খুঁজে পাক।’
পারিবারিক আবেগকে কেন্দ্র করে নতুন একটি ধারাবাহিক নির্মাণ করছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। নাম ‘এটা আমাদেরই গল্প’। বর্তমানে রাজধানীর উত্তরায় চলছে এর শুটিং। নির্মাতা জানান, দুই নভেম্বর থেকে নাটকটি চ্যানেল আই ও ‘সিনেমাওয়ালা’ ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হবে। তাদের লক্ষ্য ‘গ্লোবাল অডিয়েন্স’কে সংযুক্ত করা।
নির্মাতা বলেন, ‘একটি পরিবারে যা যা থাকে ও যা যা ঘটে সেসবই তুলে ধরার চেষ্টা করছি এ নাটকে। একটি পরিবারে যত সম্পর্ক থাকে, আমাদের ধারাবাহিকে সব কিছুই আছে। আমার বিশ্বাস, এসবের সঙ্গে প্রত্যেক দর্শক নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন। সেইসঙ্গে থাকছে রোমান্স, সাসপেন্স। দর্শক একটি পর্ব দেখলে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করবেন।’ এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরফান সাজ্জাদ, কেয়া পায়েল, খায়রুল বাসার, শিল্পী সরকার অপু, মনিরা মিঠু, নাদের চৌধুরী, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু, ইন্তেখাব দিনার, দীপা খন্দকার, সুনেরাহ প্রমুখ।
পুরান ঢাকার বাহ্যিক আবরণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে থাকলেও এখনো পুরোনো ঐতিহ্য স্পষ্ট এর প্রতিটা পরতে পরতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আধিক্য থাকলেও বিভিন্ন কর্মসূত্রে বহিরাগতদের দীর্ঘদিন ধরে উপস্থিতি একদিকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে পুরান ঢাকাকে, ঠিক একইভাবে অস্তিত্ব সংকটেও ফেলেছে। সেসব গল্পই পর্দায় তুলে আনছেন নাট্যনির্মাতা ফরিদুল হাসান। তিনি নির্মাণ করছেন ‘মহল্লা’ নামে একটি ধারাবাহিক। এরই মধ্যে পুরান ঢাকা, সদরঘাট, উত্তরা ও ফার্মগেটের বিভিন্ন লোকেশনে ধারাবাহিকটির দৃশ্যধারণ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ রায়ের রচনায় এ ধারাবাহিকটি পহেলা নভেম্বর থেকে বৈশাখী টিভিতে প্রচার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘এটি মহল্লার ভালো ও মন্দের গল্প। ব্যস্ত এ শহরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মহল্লায় সমসাময়িক যেসব ঘটনা ঘটে তা হাস্যরসের মাধ্যমে পর্দায় তুলে ধরা হচ্ছে। এতে অনেক জনপ্রিয় শিল্পীরা অভিনয় করছেন। পরিবার নিয়ে দেখার মতো একটি গল্প। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি পরিবারের গল্প হয় না। তা অনেকটাই ভুল। কারণ, পরিবারের গল্প হয় তবে তুলনামূলক কম। তবে আমি বরাবরই পারিবারিক গল্পকে গুরুত্ব দেই। বর্তমান সময়ের দর্শকদের চাহিদা মাথায় রেখেই নাটকটি নির্মাণ করছি।’ নাটকটির বিশেষ একটি চরিত্রে রয়েছেন ঢালিউড সিনেমার নায়িকা আইরিন সুলতানা। এতে তিনি নায়িকা চরিত্রেই অভিনয় করছেন। ধারাবাহিকটি নিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘এতে আমি একজন চিত্রনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছি, যার নাম মধু। তাকে পুরান ঢাকার একটি মহল্লায় ঘুড়ি উৎসবে পারফর্ম করার জন্য নেওয়া হয়। এরপর ঘটতে থাকে নানা নাটকীয় ঘটনা।’ গল্পের প্রয়োজনে এ ধারাবাহিকে ‘তানপুরা’ শিরোনামের একটি আইটেম গান রয়েছে। এটি গেয়েছেন সংগীতশিল্পী মুহিন, পাশাপাশি গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন এ গায়ক। আইটেম গানটিতেও পারফর্ম করেছেন চিত্রনায়িকা আইরিন। ধারাবাহিকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন ইফফাত আরা তিথি, আবদুল্লাহ রানা, সহীদ উন নবী, তন্ময় সোহেল, সিয়াম মৃধা, সিয়াম নাসির, সাবা সুস্মিতা, উপমা আহমেদ, অনুভব মাহবুবসহ আরও অনেকে।
এদিকে ১০ অক্টোবর থেকে আরটিভিতে প্রচার শুরু হয়েছে ‘সুখ পাখি’ নামে আরও একটি ধারাবাহিকের। আবেগ, দ্বন্দ্ব, অপরাধবোধ ও ভালোবাসার টানাপোড়েনের গল্প নিয়ে এটি নির্মিত হয়েছে। রচনা ও পরিচালনায় রয়েছেন বিপ্লব হায়দার। নাটকের চিত্রনাট্যে দেখানো হয়েছে, ছয় বছর ধরে নিখোঁজ প্রবাসী স্বামী জাহিদের অপেক্ষা করছে মিলি। পরিবারের সবাই ভেবে নিয়েছে জাহিদ আর বেঁচে নেই, বেঁচে থাকলে অন্তত একবার হলেও যোগাযোগ করত। কিন্তু মিলির দৃঢ় বিশ্বাস জাহিদ একদিন না একদিন ফিরে আসবেই। তাদের ছোট একটি মেয়ে রয়েছে, নাম টিয়া। জন্মের আগেই বাবাকে হারানো টিয়া জানেই না জাহিদের কথা। ছোট চাচা শুভকেই সে বাবা বলে জানে, আর শুভও পিতৃস্নেহ দিয়ে বড় করছে টিয়াকে। শেষ পর্যন্ত টিয়ার ভবিষ্যতের কথা ভেবে মিলিও শুভ বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ের দুদিন পরই ফিরে আসে জাহিদ। ছয় বছর পর পরিবারের দরজায় দাঁড়ানো জাহিদকে দেখে সবাই স্তব্ধ। এভাবেই এগিয়ে যাবে নাটকের গল্প। এ প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘এমন অনেক ঘটনা মানুষের জীবনে ঘটে যায়। যা অপ্রত্যাশিত, পাশাপাশি আবেগের। আশা করছি নাটকটি সবার ভালো লাগবে।’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ্যালেন শুভ্র, মুনতাহা, নাদিয়া আহমেদ, মুকিত জাকারিয়া, মীম চৌধুরী, মাসুম বাশার, মিলি বাশার, ফারুক আহমেদ, শারমিন শর্মী প্রমুখ।
এ ছাড়া পারিবারিক গল্পের আরও একাধিক নাটক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার চলছে। এর মধ্যে রয়েছে বিটিভিতে প্রচারিত ‘ধূসর প্রজাপতি’, দীপ্ত টিভিতে ‘রূপনগর’ ও ‘খুশবু’, মাছরাঙায় ‘শাদী মোবারক’, এনটিভিতে ‘৭ কিলো ১ গ্রাম’, বৈশাখী টিভির ‘হাবুর স্কলারশিপ’ প্রভৃতি। এদিকে ‘পালকী’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটক নতুন করে আবারও দীপ্ত টিভিতে প্রচার শুরু হয়েছে।
