মাদ্রাসায় সম্ভাবনার নতুন অধ্যায়
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষা একটি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ধারা। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মানবিকতার পাঠ এখানেই শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি পেয়ে থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার গতি বদলেছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে এখন ধর্মীয় জ্ঞানের সঙ্গে প্রয়োজন দক্ষতা, প্রযুক্তি ও বাস্তবজ্ঞান। এই চাহিদা থেকেই শুরু হয়েছে মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষার যাত্রা-যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কর্মমুখী, আত্মনির্ভর ও প্রযুক্তির পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
শিক্ষার নতুন দিগন্ত : দেশে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী মাদ্রাসা শিক্ষার আওতায় রয়েছে। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ১৭ লাখ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী ডিগ্রি শেষ করেও বেকার থেকে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসা শিক্ষায় কারিগরি শিক্ষা যুক্ত হওয়া সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। বর্তমানে প্রায় ১২০০ মাদ্রাসায় সীমিত আকারে কারিগরি শিক্ষা চালু আছে এবং আগামী বছর আরও ৫০০ মাদ্রাসায় নতুন কোর্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা শিখবে আইসিটি, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, কৃষি, গার্মেন্টস, ফুড প্রসেসিং, ওয়েল্ডিংসহ নানা ট্রেডে হাতে-কলমে কাজ।
ঝরে পড়াদের জন্য আশার আলো : এক জরিপে দেখা গেছে, দাখিল পর্যায় শেষে প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। এর বড় কারণ তাদের জন্য পেশাভিত্তিক শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা চালুর ফলে সেই প্রবণতা কমতে শুরু করেছে। এখন দাখিল বা আলিমের শিক্ষার্থীরাও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে পারছে। কেউ আইটি প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করছে, কেউ মোটর মেকানিক বা ওয়েল্ডিং কাজে দক্ষ হয়ে নিজে উপার্জন করছে। ফলে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী জীবনধারাও তৈরি হচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে নতুন সুযোগের দ্বার : কারিগরি শিক্ষাসম্পন্ন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা এখন শুধু দেশে নয়, বিদেশেও কাজের সুযোগ পাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও কোরিয়ার শ্রমবাজারে আইসিটি, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইলস ও কৃষি খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ব্যাপক। এছাড়া দেশে বিভিন্ন শিল্পকারখানা, এসএমই সেক্টর, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, টেলিকম কোম্পানি ও আইটি পার্কে তাদের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মক্ষেত্র। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ এই শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রেও হয়ে উঠছে সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল কর্মী-যা নিয়োগদাতাদের আস্থা বাড়াচ্ছে।
