ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী প্রিয়ন্তী দাস
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পুরো নাম প্রিয়ন্তী দাস। বয়স মাত্র ১৪ বছর। বর্তমানে স্কলাস্টিকা, ঢাকার ক্লাস এইটে পড়ছে। বয়স যখন ১২, তখনই প্রথম রোবটিক্সে হাতেখড়ি হয় তার, তখন ক্লাস সিক্সে পড়ত। পরিবারের অন্য কেউ কখনো রোবটিক্স নিয়ে কাজ করেনি, একমাত্র প্রিয়ন্তীই এই পথে হাঁটা শুরু করে। প্রথম প্রজেক্ট ছিল এলইডি ব্লিংক করা। ছোট একটি এলইডি আর আরডুইনো ব্যবহার করে অন-অফ করা শিখে ফেলে। এরপর তৈরি করে একটি রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, যেটি মোবাইলের জয়স্টিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এখান থেকেই শুরু হয় তার রোবটিক্সের দীর্ঘ যাত্রা।
প্রিয়ন্তীর মা একদিন ফেসবুকে বিডিআরও-এর ওয়ার্কশপের তথ্য পান। সেখানে গিয়েই প্রথম রোবটিক্সের হাতেখড়ি। শুরুতে রোবটিক্স কী-এটাও জানত না। ওয়ার্কশপগুলোতে অংশ নিয়ে মিশাল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি বুঝতে পারেন প্রিয়ন্তীর মধ্যে অসাধারণ সম্ভাবনা আছে। এরপর থেকে তার মূল শিক্ষক হয়ে ওঠেন মিশাল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপিকা ড. লাফিফা জামাল এবং আগের বছরের স্বর্ণপদক জয়ী নাশীতাত যাইনাহ রহমান বিভিন্ন সময় তাকে গাইড করেন।
পড়াশোনা ও রোবটিক্স-দুটোই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছে প্রিয়ন্তী। রোবটিক্সের কাজ করতে গিয়ে পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হয়নি তার। নিয়মিত স্কুলের পড়া শেষ করে অবসর সময়ে কম্পিউটার আর রোবটিক্সের সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সপ্তাহে দুই-একদিন প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করে নতুন কিছু শেখা ও তৈরি করার কাজে। এ পর্যন্ত প্রিয়ন্তী ২০টির বেশি রোবট তৈরি করেছে। এর মধ্যে বন্দর থেকে মাল আনা-নেওয়ার রোবট, শিশুদের খেলার সঙ্গী রোবট, রান্না করতে পারা রোবট এবং নাচতে পারা রোবট উল্লেখযোগ্য। কিছু রোবটের নাম দিয়েছে ড্যান্সার বট, কোয়ার্কি পিক অ্যান্ড প্লেস ও লিফটিং বট। দেশি-বিদেশি প্রতিযোগিতায় তার সাফল্যও দৃষ্টিনন্দন। ২০২৪/২০২৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত ২৬তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ক্রিয়েটিভ ইন মুভি ক্যাটাগরিতে রৌপ্য পদক অর্জন করে। ২০২৫ সালে ইউসিএলএ গ্লোবাল মেডিকেল ব্রিগেডস সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে চ্যাম্পিয়ন এবং এশিয়া প্যাসিফিকে প্রথম রানার্সআপ হয়। একই বছর কর্নেল স্নাতক গবেষণা, ম্যাগাজিন গবেষণা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে চ্যাম্পিয়ন এবং এশিয়া প্যাসিফিকে দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়। এছাড়া ২০২১ সালে পিকাসো শিল্প প্রতিযোগিতায় ক্রিয়েটিভ ডায়মন্ড আর্টিস্ট পদক লাভ করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসাবে প্রিয়ন্তী মনে করে দক্ষিণ কোরিয়ার আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের পদক জয়কে। কারণ এখানে সরাসরি বিশ্বের সেরা প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে।
কাজের পথে হতাশার ঘটনাও এসেছে। কখনো কোনো প্রজেক্ট হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেছে, বড় প্রতিযোগিতার আগে সফটওয়্যার কাজ করেনি। তবে হতাশ না হয়ে নতুন করে চেষ্টা শুরু করেছে। বাড়িতে ছোট্ট একটি ল্যাবও আছে তার। সেখানে রোবট তৈরির অনেক ইকুইপমেন্ট রাখা আছে। এ ছাড়া অন্য শখের মধ্যে রয়েছে ডিবেট, মডেল জাতিসংঘ, এআই ও রোবটিক্স ক্লাব তৈরি, ছবি আঁকা এবং ভরতনাট্যম নাচ। তার বাবা-মা মনে করেন, যে কাজে মেয়ের আনন্দ, সেটাই করা উচিত। তাই শুরু থেকেই পূর্ণ সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাইকে আগ্রহের জায়গায় এগোতে দেওয়া উচিত।
