তরমুজ চাষে লাখপতি মাধবপুরের আলম
রোকন উদ্দিন লস্কর, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মাধবপুরের প্রান্তিক কৃষক আলম মিয়া একসময় শুধু ধান চাষ করতেন। অল্প জমিতে চাষাবাদের আয়ে তাকে পরিবারের ভরণপোষণ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হতো। তবে আগাম জাতের সুইট ব্ল্যাক-টু তরমুজ চাষ দুবছরে তার ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছে। সংসারের খরচ চালিয়ে এখন কয়েক লাখ টাকা আলম মিয়ার সঞ্চয় হয়। এখন তিনি হজ করার স্বপ্ন দেখছেন।
চৌমুহনী ইউনিয়নের হরিণখোলা গ্রামের আলম মিয়াকে মঙ্গলবার তরমুজ খেতে গিয়েই পাওয়া যায়। আর কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি দ্বিতীয় দফা তরমুজ বিক্রি শুরু করবেন। প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে খেত থেকে কিনে নিয়ে যান পাইকাররা। তার জমিতে লাগানো সুইট ব্ল্যাক-টু তরমুজ রসালো ও সুমিষ্টি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি।
মালচিং ও অর্গানিক পদ্ধতিতে আগাম জাতের তরমুজ চাষে সহযোগিতা করছেন জাতীয়ভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক বধু মিয়া। তিনি মাধবপুরে কৃষির ডাক্তার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এলাকার কৃষক কৃষি জমিতে কোনো ধরনের সমস্যা রোগ বালাই দেখা দিলে ডাক পড়ে বধু মিয়ার। আলম মিয়া বলেন, জমিতে ধান চাষ করে লাভবান হতে পারছিলাম না। সংসার টানতে গিয়ে কিছুটা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। হতাশ হয়ে প্রায় দুই বছর আগে একদিন পাশের গুপিনাথপুর গ্রামের বধু মিয়ার শরণাপন্ন হই। কৃষিতে কীভাবে সফল হতে পারি-এ ব্যাপারে তার কাছে পরামর্শ চাই। তিনি আমাকে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি ও তরমুজ চাষের পরামর্শ দেন। গেল বছর বধু মিয়ার কাছ থেকে সুইট ব্ল্যাক-টু তরমুজের বীজ সংগ্রহ করি। ১৬০ শতাংশ জমিতে আগাম জাতের তরমুজ মালচিং পদ্ধতিতে আবাদ করি। অর্গানিকভাবে তরমুজ চাষ করে ৬০ দিনে তরমুজ পরিপক্ব হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রতিটি তরমুজ দেড় থেকে ২ কেজি হয়। ১৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজ আবাদ করতে গিয়ে দুই ছেলে ও স্ত্রীর সহযোগিতায় প্রথমবারেই সফলতার মুখ দেখি। খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা। বিক্রি করে পাই সাড়ে তিন লাখ টাকা। বছরে দুইবার একই জমিতে তরমুজ চাষ করে পরে ধান চাষও করা যায়। অল্প জমিতে অধিক লাভবান হওয়া যায় তরমুজ চাষে। তাই এবারও ১৬০ শতাংশ জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছি। এবার খরচ হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এবার ফলন হয়েছে ভালো। বিক্রি হবে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।
আলম মিয়া বলেন, তরমুজ চাষে আমার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে। এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলায় চৌমুহনী ইউনিয়নে কয়েক বছর আগে পরীক্ষামূলক বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ শুরু করেন কৃষক বধু মিয়া ও আমজাদ খান। এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষে উপযোগী হওয়ায় তারা সফল হন এবং সরকারিভাবে পুরস্কৃত হন। এখন উনাদের অনুসরণ করে এ অঞ্চলে তরমুজ চাষের কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আগাম জাতের তরমুজ আবাদ করে হয়েছেন অনেকেই স্বাবলম্বী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব সরকার বলেন, উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। চলতি বছরে উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক একর জমিতে আগাম জাতের তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
