Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

যশোর শিক্ষাবোর্ডের ৩৩৯৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

অ্যাডহক কমিটির সভাপতি পদ বাগাতে রাজনৈতিক তদবির

১৮০১ আবেদনের বিপরীতে ৫৪২ কমিটি অনুমোদন

ইন্দ্রজিৎ রায়

ইন্দ্রজিৎ রায়

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অ্যাডহক কমিটির সভাপতি পদ বাগাতে রাজনৈতিক তদবির

যশোর শিক্ষাবোর্ডের তিন হাজার ৩৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কমিটির সভাপতি পদ বাগিয়ে নিতে তদবিরে নেমেছে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। নিজ দলের নেতাকর্মীকে সভাপতি পদে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠছেন অনেকেই। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অনেক শীর্ষ নেতা দলীয় প্যাডে সুপারিশের পাশাপাশি সরাসরি হাজির হচ্ছেন কর্মকর্তার দপ্তরে। রাজনৈতিক তদবির ও সুপারিশের কারণে বিলম্বিত হচ্ছে কমিটির আবেদন ও অনুমোদন প্রক্রিয়া। প্রস্তাবিত কমিটির তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের পছন্দের রাজনৈতিক বিবেচনা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের পছন্দের প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে খুলনা বিভাগের ৩ হাজার ৩৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে নিুমাধ্যমিক ৩৩৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুই হাজার ৪৫৯টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২৩টি ও মহাবিদ্যালয় ৪৭৬টি রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজার ৮০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে বিদ্যালয় এক হাজার ৬৬২টি ও মহাবিদ্যালয় ১৩৯টি। ইতোমধ্যে ৪৭৬টি বিদ্যালয় ও ৬৬টি মহাবিদ্যালয়সহ ৫৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, জেলা প্রশাসক মনোনীত সভাপতি পদে তিনজন প্রার্থীর নাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা/জেলা প্রশাসক মনোনীত অভিভাবক সদস্য একজন ও জেলা শিক্ষা অফিসার মনোনীত শিক্ষক প্রতিনিধির নাম সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষাবোর্ডে অনলাইনে আবেদন করছেন। অনলাইন আবেদনের ভিত্তিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন। সভাপতির নাম প্রস্তাব ও মনোনয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নাম আসছে। তাদের অনুসারীদের সভাপতি পদে বসাতে সংগঠনের প্যাডে সুপারিশের পাশাপাশি সরাসরি কিংবা মোবাইল ফোনে তদবির করছেন শীর্ষ নেতারা। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানকে চাপ প্রয়োগ করে একাধিক সভাপতি প্রার্থী হিসাবে নাম প্রস্তাব করতে বাধ্য করারও অভিযোগ রয়েছে। আবার কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বিবেচনা ও পছন্দের লোককে অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। যা নিয়ে বঞ্চিত অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন।

এ বিষয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, ছয় মাস মেয়াদি অ্যাডহক কমিটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে নামের তালিকা সংগ্রহ করে অনলাইনে আবেদন করছি। রাজনৈতিক দলের স্থানীয় ও প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের চাপে খুবই বিপাকে আছি। সভাপতি পদে ৩ জনের বেশি নাম দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রার্থী কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি নাম আসছে। অনলাইনে তিনজনের নাম প্রস্তাব করলেও চাপে পড়ে আলাদাভাবে তাদের তালিকা বোর্ডে পাঠাতে হচ্ছে। তালিকায় নাম না থাকলে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে হয়রানি করছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা পড়েছেন উভয় সংকটে। কুষ্টিয়ার একটি স্কুলের সভাপতি প্রার্থী বলেন, তালিকায় তার নাম এক নম্বরে ছিল, তাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয়জনকে সভাপতি মনোনীত করেছে বোর্ড। এটা কর্মকর্তার পছন্দের রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে বলে ধারণা করছি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, দলীয় বিবেচনায় অ্যাডহক কমিটির প্রস্তাব আসছে। কোন রাজনৈতিক দলের কতজন নেতাকর্মী সভাপতি হবেন, সেই প্রতিযোগিতা চলছে। তদবির সুপারিশের চাপে ঠিকমতো কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

উপ-পরিদর্শক (কলেজ) মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সংগৃহীত নামের তালিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান আবেদন করছেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে সিরিয়াল অনুযায়ী কমিটি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক তদবির থাকলে বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই সুপারিশ করছেন। সভাপতি পদে তিনজনের যে কোনো একজনকে মনোনীত করার এখতিয়ার নীতিমালায় বোর্ড চেয়ারম্যানের আছে। যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোসাম্মৎ আসমা বেগম কথোপকথনের একপর্যায়ে পত্রিকায় বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তার বক্তব্য নিতে হলে লিখিতভাবে তাকে জানাতে হবে বলে বলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম