Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

নাশকতার আশঙ্কা ও জটিলতা

কোনো কারণেই নির্বাচন পেছানো যাবে না

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নাশকতার আশঙ্কা ও জটিলতা

আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও দেশের রাজনীতি এমন এক জটিল আকার ধারণ করেছে যে, নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকের মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। একদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের দিনক্ষণ প্রশ্নে পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষ কঠোর অবস্থান নিয়েছে; অন্যদিকে নির্বাচনকে ঘিরে নানা নাশকতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের প্রায় সব তৃণমূলে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করলেও কেন্দ্রে যে জট বেঁধেছে, তা খুলছে না। অনুমিত নাশকতা ঠেকাতে সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন বৈঠক করেছে যদিও, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা দূর করার কোনো প্রয়াস এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত দেখা যায়নি।

বড় সমস্যাটা দেখা দিয়েছে জুলাই সনদের ওপর গণভোটের সময় নিয়ে। দীর্ঘ ৮-৯ মাস আলাপ-আলোচনার পর ঐকমত্য কমিশনে সংস্কারের যেসব সুপারিশ জমা হয়েছিল, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে জুলাই সনদ। এই সনদে বিএনপিসহ রাজনীতির বড় স্টেকহোল্ডাররা স্বাক্ষরও করেছে। কিন্তু গোল বেঁধেছে সনদের ওপর কখন গণভোট অনুষ্ঠান করা যাবে, তা নিয়ে। বিএনপি নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলছে, নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। এনসিপি অবশ্য বলছে, গণভোট আগেই হওয়া দরকার, তবে একইদিনে হলেও তাদের আপত্তি নেই। অবস্থাদৃষ্টে দ্বন্দ্বটা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই আবর্তিত। জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রস্তাবের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি মানা না হলে তারা বড় আন্দোলনে যাবে বলেও আগাম বার্তা দিয়ে রেখেছে। দ্বন্দ্বের সুরাহা না হলে আজ অর্থাৎ ১১ নভেম্বর তারা রাস্তায় নামবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। ওদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ৭ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে সরকার নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বের নিরসন করবে।

আমরা স্মরণ করতে পারি, গত স্বৈরাচারী সরকারকে হটানের জন্য কী পরিমাণ রক্ত দিতে হয়েছে! ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে যে বিশাল বিজয় অর্জিত হয়েছিল, সেই স্মৃতি আমাদের মনে এখনো জ্বলজ্বলে। বিজয়ের ওই মুহূর্তে সবারই প্রত্যাশা ছিল, এবার একটা চমৎকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করে যাচ্ছি, জুলাইয়ের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করা হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো বিবাদে লিপ্ত হয়েছে এবং ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী যে অভাবনীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যে ফাটল ধরছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরা মানে তা ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনাকেই নির্দেশ করে। ফলে জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করার কোনো বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, গত রেজিমে যেহেতু পরপর তিনটি সরকার গঠিত হয়েছিল অগণতান্ত্রিক পন্থায়, তাই আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাশকতার আশঙ্কা। আমাদের বক্তব্য হলো, পরিস্থিতি যে আকারই ধারণ করুক, নির্বাচন হতেই হবে এবং তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। কোনো কারণেই নির্বাচন স্থগিত করা অথবা পেছানো যাবে না। নির্বাচন সঠিক সময়ে করার লক্ষ্যে সরকারকে আন্তরিক হয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম