শুরুর আগেই শেষ
প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা অগ্রহণযোগ্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে গৃহীত সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালু করা গেলে নিশ্চিত সুফল পেত সেখানকার মানুষ। কিন্তু অসমাপ্ত এ প্রকল্পটি এখন গভীর ওয়ারেন্টি জটিলতা এবং অনিশ্চয়তার মুখে। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-২০১৯ সালে শুরু হওয়া ১৮ মাস মেয়াদি এ প্রকল্পটি এখনো শেষ তো হয়নিই, উলটো প্রকল্পের মূল যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে সিমেন্স জার্মানির সরবরাহ করা গ্যাস টারবাইন জেনারেটর সেটের ওয়ারেন্টির মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বলা বাহুল্য, এ পরিস্থিতি কেবল প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতাকেই প্রকট করছে না, বরং দেশের বিদ্যুৎ খাতের ব্যবস্থাপনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
জানা যায়, প্রকল্পটিতে চীনের ডংফেং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (ডিএফআইসি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী বড় যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি প্রাথমিক বাণিজ্যিক অপারেশন শুরুর পর থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা। কিন্তু ডিএফআইসি এখন বলছে, সিমেন্সের ওয়ারেন্টি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে এবং নতুন ওয়ারেন্টির জন্য যে বিপুল অর্থ প্রয়োজন, তার দায়ভার বিপিডিবিকেই নিতে হবে। অন্যদিকে বিপিডিবি তাদের চুক্তির শর্তে অটল। এ নিয়ে এখন দুই পক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে, ফলে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এটি পরিষ্কারভাবেই পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবকে নির্দেশ করে বলে মনে করি আমরা। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রকল্প সমাপ্তির আগেই যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি শেষ হওয়ার দায়ভার তাহলে কে নেবে? পরিতাপের বিষয়, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিডিবিকে, অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত দেশের জনগণকেই। এমতাবস্থায় দেশের স্বার্থে বিপিডিবিকে অবশ্যই চুক্তির শর্তাবলি কঠোরভাবে অনুসরণ করে ডিএফআইসির ওপর চুক্তিগত বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা উচিত। পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোনোভাবেই প্রভিশনাল অ্যাকসেপ্টেন্স সার্টিফিকেট এবং সংশ্লিষ্ট ১০ শতাংশ অর্থ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না, যতক্ষণ না তারা চুক্তিমতো ওয়ারেন্টি এবং মানসম্মত কাজ নিশ্চিত করছে।
মনে রাখতে হবে, এ ধরনের পরিস্থিতি কেবল সময় ও অর্থের অপচয় নয়, এটি বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ পূরণেও বিলম্ব ঘটায়। কাজেই বিপিডিবি ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের উচিত এ ধরনের বড় প্রকল্পে সময়মতো কাজ শেষ করা এবং চুক্তির শর্তাবলি কঠোরভাবে পালনে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা। দ্রুত এই অচলাবস্থা নিরসন করে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে উৎপাদনে নিয়ে আসতে সচেষ্ট হবে সরকার, এটাই প্রত্যাশা।
