Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সহিংসতা ও নাশকতা

সব ধরনের অপতৎপরতা রুখতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সহিংসতা ও নাশকতা

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় সোমবার সংঘটিত কয়েকটি সহিংস ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ, সাত স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং দিনদুপুরে হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনা ঘটেছে, তা রাজধানীবাসীর মনে অজানা আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে, অপরাধীরা এখন আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তোয়াক্কা করছে না। বাসে আগুন দেওয়া বা ককটেল বিস্ফোরণের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো রাজনৈতিক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে দেখা যায়। পতিত স্বৈরাচারের সমর্থকরাও এ নাশকতা চালিয়ে থাকতে পারে। যারাই এ জঘন্য কাজগুলো করুক না কেন, এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে। তারা এখন শঙ্কিত মনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। তারা জানেন না, কর্মস্থলে যাওয়ার পথে অথবা কাজ শেষে ঘরে ফেরার সময় কোনো সহিংসতার শিকার হবেন কি না। এই আতঙ্ক তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অস্বস্তিকর করে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে অধিকতর মনোযোগী হওয়া।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, প্রতিটি সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কেবল বিবৃতি নয়, শক্ত হাতে নৈরাজ্য দমন করতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সংস্কৃতি গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। নিজেদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সহিংস পথ পরিহার করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা উচিত সব পক্ষকে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সবার প্রত্যাশা ছিল, এবার একটা চমৎকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, জুলাইয়ের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করা হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধে লিপ্ত হয়েছে এবং ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী যে অভাবনীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যে ফাটল ধরছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনীতি যদি জনগণের কল্যাণের বদলে তাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে, তাহলে সেই রাজনীতির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সাধারণ মানুষ কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নন, তারা শুধুই নাগরিক। কিন্তু তারাই বারবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি।

নির্বাচন সামনে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ অপরিহার্য। কেবল নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসন একা নয়, সামগ্রিকভাবে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি ভয়ভীতিমুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সরকারকেই এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এ সময় সর্বোচ্চ পেশাদারি, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম