Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

গুজব উত্তেজনা আতঙ্ক : সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গুজব উত্তেজনা আতঙ্ক : সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১৩ নভেম্বর ঘিরে জনমনে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এদিন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ের দিন ঘোষণা করার কথা রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। দিনটি ঘিরেই এ উত্তেজনা। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনলাইন ও অফলাইনে ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়ে উসকানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে সেই প্রচারণাকে জোরদার করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা ধরনের গুজব ও অপপ্রচার। এ পরিস্থিতিতে সবারই সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। তবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। কাজেই নাশকতা ও সহিংস কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।

অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি আর কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কোনো ধরনের নাশকতা ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও সাড়ে তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। তবু জনমনে শঙ্কা কাটছে না।

মনে রাখতে হবে, গুজবের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনমনে ভীতি ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করা দুর্বৃত্তদের একটি পুরোনো কৌশল, যার মূল লক্ষ্য থাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করা এবং সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল করা। বর্তমান সময়ে গুজব ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হলো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো, যেখানে যাচাইবিহীন তথ্য দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। একটি মিথ্যা খবর বা অতিরঞ্জিত পোস্ট অল্প সময়ের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, যা সমাজে আতঙ্ক ও অস্থিরতা তৈরি করে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বা সামাজিক অস্থিরতার সময়ে এ ধরনের গুজব সহিংসতা উসকে দিতে, সাম্প্রদায়িক বিভেদ বাড়াতে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করতে সক্ষম। ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা তেমনই একটি পরিকল্পিত অপচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা এমন হওয়া উচিত, যাতে দুর্বৃত্তরা কোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংস ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, গুজব সৃষ্টিকারী এবং প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গুজব ছড়ানোর উৎসগুলো চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট বার্তা প্রদান করা জরুরি। জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।

১৩ নভেম্বরকে ঘিরে সৃষ্ট গুজব ও উত্তেজনা সরকারের জন্য একটি নৈতিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে তা কেবল একটি দিনের অস্থিরতার অবসান ঘটাবে না, বরং গুজব মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম