Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিশেষজ্ঞ মতামত

ভারত হাসিনাকে ‘ট্রাম্পকার্ড’ হিসাবে ব্যবহার করছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভারত হাসিনাকে ‘ট্রাম্পকার্ড’ হিসাবে ব্যবহার করছে

শেখ হাসিনা।

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বলার সুযোগ বন্ধ করতে ঢাকায় ভারতীয় উপহাইকমিশনার পবন পবন ব কে ইতোমধ্যে তলব করা হয়েছে। এ ধরনের সুযোগ যেন শেখ হাসিনা আর না পান সে বিষয়েও পবনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে না। অন্তরায় হিসাবে বিষয়গুলো থেকেই যাবে। এসব বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিরও কারণ। ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘ট্রাম্পকার্ড’ হিসাবে ব্যবহার করছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ধরনের সাক্ষাৎকার অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তি তৈরি করে। তাই বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় ভারতীয় উপহাইকমিশনার পবন ভাদেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে সেই অস্বস্তির কথা জানিয়েছে। তাকে অনুরোধ করা হয়েছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেন আর না ঘটে তার জন্য ভারত সরকার যেন সক্রিয় হয়। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া যে ভালো হয় না সেটিও হয়তো তারা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আশা করে ভারত যেন বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব বুঝতে পারে। সে অনুযায়ী এই ধরনের কর্মকাণ্ড দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক নয়, এটি তারা উপলব্ধি করবেন এটাই প্রত্যাশা। হুমায়ুন কবির আরও বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড যদি চলতে থাকে তাহলে এটি একটি অন্তরায় হিসাবে কাজ করবে দুই দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের সম্মুখীন। তার বিষয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল বলেছেন, দুর্বল শাসন ব্যবস্থাই তার পতনের জন্য দায়ী। দোভাল আরও বলেছেন, দুর্বল শাসন ব্যবস্থা অনেক সময় সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে অনানুষ্ঠানিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের পেছনে এই প্রশাসনিক দুর্বলতাই বড় ভূমিকা রেখেছে।

এম শফিউল্লাহ বলেন, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সরকারকে ভারত সমর্থন দিয়ে এসেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমনও বলেছেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে এবং এটি অন্যান্য প্রতিবেশীদেরও অনুকরণীয়। তাহলে এখন যদি বলা হয়, হাসিনার দুর্বল সরকারের জন্য তার পতন হয়েছে, তাহলে এটি আসলে হাসিনা সরকারের প্রতি ভারতের অনাস্থার প্রকাশ। তার থেকে ভারত দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। তিনি অজনপ্রিয়। শেখ হাসিনার ওপর দোষারোপ করে তিনি যত অপকর্ম করেছেন তা থেকেও সরে আসতে চাইছে ভারত। দোভালের বিবৃতি সেটিই প্রমাণ করে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ আরও বলেন, হাসিনা এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের ট্রাম্পকার্ড। এখন আবার ভারত তার মানসম্মান রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছে। ভারতের সবচেয়ে তিনটি বড় গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার লিখিত সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেছে। হাসিনা নজরবন্দি অবস্থায় আছেন। তার পক্ষে এসব গণমাধ্যমকে সরাসরি সাক্ষাৎকার দেওয়া সম্ভব নয়। ভারতের সক্রিয় ভূমিকায় এটি হয়েছে। যেসব প্রশ্ন তাকে পাঠানো হয়েছে সেগুলো ভারত সরকার দেখে দিয়েছে।

এমনকি কী কী প্রশ্ন করা দরকার সেটাও গণমাধ্যমকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা যেসব উত্তর দিয়েছেন সেটিও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিভিউ করে দেখেছে কোনটা যাওয়া উচিত, কোনটা যাওয়া উচিত নয়। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সক্রিয় ভূমিকায় এটি হয়েছে বলে বিশ্বাস করি।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কার্যকলাপ দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাবে বলে মনে করি। বাংলাদেশ চাইছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে। অন্যদিকে ভারত একটার পর একটা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছে। এসব বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিকর। বাংলাদেশের সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশকে হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করার। বাংলাদেশ সে প্রক্রিয়ায় আছে। সেখানে হাসিনার মাধ্যমে ভারতের এ ধরনের বক্তব্য আসা আমাদের নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচন নষ্টের চেষ্টা বলে মনে করি।

এম শফিউল্লাহ বলেন, ভারতের উচিত হবে শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া। কারণ শেখ হাসিনাই বলেছেন কোনো ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাহলে তিনি কেন আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন। ভারত শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠালে সঠিক বিচার যেমন হবে তেমনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেরও উন্নতি হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম