রিজিকের জিম্মাদার মহান আল্লাহতায়ালা

খালিদ হাসান বিন শহীদ
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফলো করুন |
|
---|---|
পৃথিবীর সব কিছুই আল্লাহ রব্বুল আলামিন সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য। প্রকৃতি, নদী, সাগর, ফুল-ফল, মাছ, পশুপাখি সবকিছুই করে দিয়েছেন মানুষের অধীন। কিন্তু মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। তার দাসত্ব ও গোলামি করার জন্য। সুতরাং বান্দার রিজিকের ব্যবস্থা করা আল্লাহরই দায়িত্ব। আর রিজিক বলা হয় এমন বস্তুকে যা কোনো প্রাণী আহাররূপে গ্রহণ করে। যা তার দৈহিক শক্তি সঞ্চার করে এবং জীবন রক্ষা করে। এ প্রাণীকুলের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ন্যস্ত। এ দায়িত্ব আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি বরং আল্লাহকে কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনো সত্তা বা শক্তি মহাবিশ্বে নেই। জমিনেও নেই আসমানেও নেই। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে প্রাণীকুলকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের রিজিকের জিম্মাদারিও স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন।
আল্লাহতায়ালা যতটুকু সময়ের জন্য যাকে সৃষ্টি করেছেন তার আয়ুষ্কাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাকে অবশ্যই রিজিক দেবেন। এটা তার ওয়াদা। এরশাদ হচ্ছে-‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী-অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত। সুস্পষ্ট কিতাবে সবকিছুই আছে।’ (সূরা হুদ, আয়াত-৬)। ইমাম কুরতুবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলোচ্য আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) ও আবু মালিক (রা.) প্রমুখ আশআরি গোত্রের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। একবার হজরত আবু মুসা আশআরি ও আবু মালিক আশআরির নেতৃত্বে একদল মুসলমান ইয়ামান হতে হিজরত করে মদিনায় পৌঁছলেন। তাদের সঙ্গে পাথেয় স্বরূপ আহার-পানীয় যা ছিল তা নিঃশেষ হয়ে গেলে, তারা নিজেদের পক্ষ হতে একজন মুখপাত্র রাসূলের সমীপে প্রেরণ করলেন; যেন রাসূল তাদের জন্য খাবারের সুব্যবস্থা করেন। ওই প্রতিনিধি যখন রাসূলের গৃহদারে হাজির হলো তখন গৃহাভ্যন্তর হতে রাসূল (সা.)-এর কুরআন তেলওয়াতের সুমধুর আওয়াজ ভেসে এলো।
‘পৃথিবীতে বিচরণ করে এমন কোনো প্রাণী নেই যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেননি’-সাহাবি এ আয়াত শ্রবণ করে মনে করলেন যে, আল্লাহতায়ালা স্বয়ং যখন যাবতীয় প্রাণীকুলের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং আমরা আশআরি গোত্রের লোকেরা আল্লাহতায়ালার কাছে অন্যান্য জন্তু জানোয়ারের চেয়ে নিকৃষ্ট নই; অতএব, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। এ ধারণা করে তিনি রাসূলকে নিজেদের অসুবিধার কথা না বলেই সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং ফিরে গিয়ে স্বীয় সঙ্গীদের বললেন-‘শুভ সংবাদ! তোমাদের জন্যে আল্লাহর সাহায্য আসছে।’ তারা এ কথার অর্থ বুঝলেন যে, তাদের মুখপাত্র নিজেদের দুরাবস্থার কথা রাসূলকে অবহিত করার পর তিনি তাদের আহার ও পানির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই তারা নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকলেন। তারা উপবিষ্টই ছিলেন, এমন সময় দুই ব্যক্তি গোশত-রুটিপূর্ণ একটি বড় খাঞ্চা নিয়ে উপস্থিত হলো। আশআরি গোত্রেরে লোকেরা সানন্দে তা গ্রহণ করে আহার করার পর প্রচুর গোশত ও রুটি রয়ে গেল। তারা অবশিষ্ট খাবার নবীজি-এর সমীপে প্রেরণ করা বাঞ্ছনীয় মনে করলেন; যেন তিনি প্রয়োজন অনুসারে সেই খাবার অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিতে পারেন। তারা দুই ব্যক্তির মাধ্যমে অবশিষ্ট খাবার রাসূল-এর খেদমতে পাঠিয়ে দিলেন। তারা খাঞ্চা নিয়ে রাসূল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার প্রেরিত গোশত অত্যন্ত সুস্বাদু এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত হয়েছে!’ এ কথা শুনে প্রিয়নবী (সা.) বললেন-‘আমি তো কোনো খাদ্য প্রেরণ করিনি!’ তখন তারা পুরো ঘটনা বর্ণনা করে বললেন যে, ‘আমাদের অসুবিধার কথা আপনার কাছে ব্যক্ত করার জন্য অমুক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেছিলাম, তিনি ফিরে গিয়ে এ কথা বলেছিলেন যে, ‘আমাদের আতিথিয়েতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ ফলে আমরা মনে করেছি যে, ‘আপনি আমাদের জন্যে খানা-দানা প্রেরণ করেছেন।’ এ কথা শুনে রাসূল (সা.)বললেন, ‘আমি নই বরং ওই পবিত্র সত্তা প্রেরণ করেছেন যিনি সকল প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ! এভাবে আল্লাহতায়ালা আকাশ থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করে প্রমাণ করেছেন যে, তিনিই একমাত্র রিজিকের মালিক। যে কোনো ধরনের উপকরণ ছাড়াই তিনি রিজিক দিতে পারেন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী