মুসলিম দুনিয়ার লৌহমানব আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি

আদনান রাফি
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি
ফলো করুন |
|
---|---|
লৌহমানব আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। মুসলিম দুনিয়ার সাহসের প্রতীক। একজন সাধারণ মানুষ থেকে মাত্র সাড়ে চার দশকের মাথায় ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে জায়গা করে নেন। তিনি ১৯৩৯ সালের ১৯ এপ্রিল ইরানের মাশহাদে জন্ম নেন। বাবা ছিলেন অতিগরিব একজন ধর্মতাত্ত্বিক। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে তার শৈশব ও জীবনের বিনির্মাণ হয়। খামেনি ছোট থেকেই ধর্মচিন্তায় প্রবৃত্ত হন এবং পরে কুম ও নাজাফের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের থেকে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেন ।
১৯৬০-৭০-এর দশকে শাহের শাসনের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ান। তিনি ৬ বার গ্রেফতার ও ১০ বছরেরও বেশি সময় নির্বাসন জীবন কাটান। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব তাকে প্রথম সারির নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেয়। বিপ্লবের পর তিনি ‘আইআরজিসি’ এবং ইসলামিক রেভল্যুশনারি কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন; সেই বছরই এক বোমা বিস্ফোরণে ডান বাহু পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। ১৯৮৯ সালের ৪ জুন রুহুল্লাহ খোমেইনির মৃত্যুর পর তিনি সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে তার ক্ষমতা সামরিক বাহিনী, বিচার ব্যবস্থাসহ দেশের জননেতৃত্ব ও ভূ-রাজনীতিতে অনিবার্য হয়ে পড়ে। সেই থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ান।
২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর হিজাব ইস্যুতে ইরানে বিশাল আন্দোলন হয়। এ বিক্ষোভে বহু মানুষ নিহত হন এবং খামেনির পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেওয়া হয়। তবে এ বিক্ষোভকে তিনি ‘বাইরের ষড়যন্ত্র’ হিসাবে আখ্যা দেন। ২০১৩ সালে হাসান রুহানি প্রেসিডেন্ট হলে খামেনি কিছুটা নমনীয় অবস্থান নেন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির আলোচনায় অনুমতি দেন। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় বহুল আলোচিত যৌথ কর্মপরিকল্পনা বা ছয় পরাশক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি। যদিও ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিলে খামেনি এটিকে ‘আমেরিকার প্রতারণার প্রমাণ’ হিসাবে তুলে ধরেন। খামেনির অন্যতম কৌশলগত অর্জন প্রতিরোধ অক্ষ গড়ে তোলা। এর আওতায় তিনি সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনে প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সামরিক ও আদর্শিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কাসেম সোলাইমানির নেতৃত্বে কুদস বাহিনী এ কৌশলের মূল চালিকাশক্তি ছিল। এ অক্ষকে সামনে রেখে খামেনি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ‘কৌশলগত গভীরতা’ বাড়ান এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করেন। খামেনির দৃষ্টিতে ইসরাইল একটি ‘অবৈধ রাষ্ট্র’। তিনি রমজানের শেষ শুক্রবারকে ‘কুদস দিবস’ হিসাবে ঘোষণা দেন।