Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নাম বললেই পাঠিয়ে দেন টাকা

জন্মান্ধ মিজানের দশ হাজার মোবাইল ফোন নম্বর মুখস্থ

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার জন্য একটি দোকানের দাবি তার

Icon

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জন্মান্ধ মিজানের দশ হাজার মোবাইল ফোন নম্বর মুখস্থ

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিজান। ছবি: যুগান্তর

নাম বললে অথবা ফোন নম্বরের শেষের দুটি সংখ্যা বললেই যে কোনো মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিজান। দরিদ্র সংসারের হাল ধরতে ফ্লেক্সিলোড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের টাঙ্গারিপাড়া গ্রামের যুবক মিজান। নামমাত্র সরকারি ভাতা পেলেও একটি দোকান ঘরের অভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। দিনমজুর মনতাজ আলী-মমিনা বেগম দম্পতির সন্তান মিজানুর রহমান সংসারের হাল ধরতে ২০১৭ সালে টাপুরচর বাজারে তাবু টানিয়ে শুরু করেন ফ্লেক্সিলোড ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা। জন্মান্ধ মিজান যে কোনো মোবাইল ফোন নম্বর একবার শুনেই মুখস্থ করে ফেলেন। আর ওই ব্যক্তির কণ্ঠ শুনে কিংবা ফোন নম্বরের শেষের দুটি ডিজিট শুনেই পুরো মোবাইল নম্বর বলে দিতে পারেন। আর ফ্লেক্সিলোড, মোবাইলে টাকা পাঠানো এবং বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়ে দেন অনায়াসে।

অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান মিজানের (৩০) দু’চোখই অন্ধ। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বড় বোন মরিয়মের বিয়ে হয়ে গেছে। মিজানও কিছু দিন আগে বিয়ে করেন। তিনি ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অন্ধত্বের কারণে পড়াশোনায় বেশি দূর যেতে পারেননি। এই ব্যবসার শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আর হয় না। তিনি গত আট বছরে লেনদেন করার জন্য প্রায় দশ হাজার মোবাইল নম্বর মুখস্থ করেছেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, মিজানের দোকানে কেউ একবার ফ্লেক্সিলোড অথবা টাকা লেনদেন করলেই সেই নম্বরটি মুখস্থ রাখতে পারেন। এলাকার পরিচিত মানুষের সব মোবাইল নম্বর এবং যারা একবার লেনদেন করেছেন তাদের ফোন নম্বর অনায়াসে বলতে পারেন মিজান। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও ব্যবসার সময় যে কোনো নোটের টাকা চিনতে ভুল হয় না তার। কেউ ছেঁড়া বা জাল টাকা দিলে বুঝতে পারেন। চোখে না দেখলেও কোন বাটনে কোন সংখ্যা এটা মোবাইল সেটের উপর হাত রেখে বলে দিতে পারেন।

মিজান বর্তমানে টাপুরচর বাজারে একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে কোনো রকমে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষজন দোকান থেকে মোবাইলে লেনদেন করে থাকেন। গ্রাহকদের সঙ্গে টাকা লেনদেনে কোনো ঝামেলার ঘটনা ঘটেনি। ফ্লেক্সিলোড করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে তার। অর্থ সংকটের কারণে ব্যবসার পুঁজি বাড়াতে পারছেন না। মিজান দাবি করেছেন, স্থানীয় এই বাজারে বিনামূল্যে দোকানঘর করার জন্য সরকারিভাবে হাটের খাস জমি বন্দোবস্ত করে দিলে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরত তার।

মিজানের বিষয়ে কথা বললে টাপুরচর হাট-বাজার ইজারাদার মোস্তফা মোর্শেদ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বাজারে একটি দোকান ঘরের জন্য সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিজানকে স্বাবলম্বী করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম