খাগড়াছড়ির বনে দুর্লভ এশীয় দাগি প্যাঁচা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তখন বিকাল। ধূসর পাহাড়। মিশ্রবনে অনেক বৃক্ষের পাতা ঝরে গেছে। তবে চিরসবুজ গাছজুড়ে পত্রপল্লব। পাহাড়ের চূড়ায় মাঝ বয়সি ডেউয়া গাছ।
অদূরে ফাইশ্যা উদাল, বান্দরহোলাসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। একটি মরা গাছের ডালে এক জোড়া পাহাড়ি ময়নার ছবি তুলতে সে দিকটায় যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে উড়ে এলো লালবুক টিয়া, বড় কাবাসি। তখনো পশ্চিম আকাশে তাপ ছড়াচ্ছে সূর্য।
বিহারের দেখাশোনায় থাকা ১৪ বছরের বালক ইশারা দিল গাছের ডালে প্যাঁচা বসে আছে। একেবারে চুপচাপ। বনের নিজস্ব শব্দ ছাড়া কোথাও কেউ নেই। ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়া পাখিটির নাম ‘এশীয় দাগি প্যাঁচা।’ পাখিটির শরীরে আড়াআড়ি দাগে ভরা থাকে বলে একে দাগি প্যাঁচা বলা হয়।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের এক বনে দেখা মিলেছে দুর্লভ এই প্যাঁচার। বাংলাদেশের পাহাড়ি বনে এদের দেখা যায়। প্যাঁচার শরীরজুড়ে বিকালের কমলা রোদের আলোকছটা। এর মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট সময় কেটে গেল। আড়াল থেকে তাকে অনেক সময় ধরে দেখার সুযোগ হলো।
এশীয় দাগি প্যাঁচা বাংলাদেশের আবাসিক পাখি। খাগড়াছড়ির পাশাপাশি রাঙামাটি, হবিগঞ্জের সাতছড়িসহ দেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এদের অবস্থান।
বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটির সংগঠক ও আলোকচিত্রী সাথোয়াই মারমা জানান, খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন পাহাড়ি বনে এশীয় দাগি প্যাঁচা মাঝে মাঝে দেখা যায়। এটা সহজলভ্য পাখি নয়। পাহাড়ি এলাকায় শিকারিদের উৎপাতের কারণে প্যাঁচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। এই প্যাঁচা আকারে ছোট।
হরিয়ালের চেয়ে ছোট। এরা লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গায়ের রং বাদামি-কালচে। এদের ঠোঁট হালকা সবুজাভ। চোখ লেবু হলুদ। দাগি প্যাঁচার শরীরে আড়াআড়ি মেটে দাগ থাকে। বুক বাদামি আর পেট সাদাটে। দেখতে বেশ সুন্দর। শরীরের তুলনায় প্যাঁচার মাথা বড়।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা বলেন, আমাদের দেশে এশীয় দাগি প্যাঁচাসহ রয়েছে ১৯টি প্রজাতি এবং এর মধ্যে দুটি পরিযায়ী পাখি। প্যাঁচা নিশাচর প্রাণী হলেও এশীয় দাগি প্যাঁচা দিনের বেলায়ও শিকার করে। এরা সাধারণত বনের বড় গাছের কোঠরে বাসা বাঁধে।
বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে এই প্যাঁচা বসবাস করে। এটি উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে দেখা যায়। এপ্রিল ও মে মাসে এই প্যাঁচার প্রজনন মৌসুম। গাছের গুঁড়িতে কাঠঠোকরার তৈরি গর্ত দখল করে এরা বাসা বানায়। সাধারণত এই প্যাঁচা চারটি ডিম পাড়ে।