থ্রেড টু জাস্টিস মনে করি না : প্রসিকিউটর
বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে আ.লীগ
বিচার নিয়ে কথা বলতে হলে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হবে-শেখ হাসিনা-কামাল প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর * চানখাঁরপুলে ৬ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘিরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার অংশ হিসাবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে এটিকে থ্রেড টু জাস্টিস মনে করি না। বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা এমনটা করছে। বুধবার দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, আইনানুগভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, দৃঢ়তার সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রুখে দেবে। বিদেশি গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রশ্নে তিনি বলেন, বিদেশি কোনো গণমাধ্যমের উচিত এই প্রশ্ন করা যে, এই গণহত্যা সংঘটিত বা হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; যেটা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করেছে এবং অ্যানালাইসিস করেছে, এটা তারই কণ্ঠস্বর। তাই যারা এই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাদের এই জবাবটা দেওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের পক্ষে লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ও জাতিসংঘে অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি।
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা হচ্ছে না; জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের অভিযোগ প্রসঙ্গে মিজানুল ইসলাম বলেন, কেন ঠিকভাবে পরিচালনা হচ্ছে না, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। কারণ, এ আইন তৈরি করেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পার্লামেন্ট। ওই সময় বিখ্যাত তিনজন আইনজীবী এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তাদের একজন ড. কামাল হোসেন, আরেকজন মনোরঞ্জন। পরবর্তীকালে শফিক আহমেদ যখন আইনমন্ত্রী এবং আরেকজন আইনজীবী ছিলেন সরকারদলীয় আনিসুল হক। তারা এ আইনটা অ্যামেন্ডমেন্ট (সংশোধন) করেছিলেন এবং ২০১০ সালে এই ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেছিলেন। যদিও আইনটা ১৯৭৩ সালের।
প্রসিকিউটর বলেন, স্টেট ডিফেন্সের কোনো অযোগ্যতা নেই। এরপরও যদি আইনজীবীর ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তাহলে যিনি প্রশ্ন উত্থাপন করবেন, তাকে এ মামলার লোকাল স্ট্যান্ডে থাকতে হবে। পলাতক আসামিদেরও ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে। আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল-২-এ দুটি মামলার দিন ধার্য ছিল। এর মধ্যে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে আমরা দুজন সাক্ষীর হাজিরা দিয়েছি। একজন সাক্ষী আশরাফুল ইসলামের জবানবন্দি শেষ হয়েছে। তার জেরা চলমান। আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলাও ছিল। সেই মামলায় আজ সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আমরা বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সাক্ষী আনতে পারিনি বা আসেনি। এ কারণে সময় চেয়েছি। তবে এ মামলায় যে একজন ভুক্তভোগী, যাকে আমরা প্রথমে শনাক্ত করতে পারিনি। তার নাম আবুল হোসেন। তার ডিএনএ টেস্ট করার পর পরিবারের সঙ্গে মিল পাওয়ায় লাশ উত্তোলন করে ফেরত দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, শুনানিতে তা মঞ্জুর হবে।
এদিকে জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছেন মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। বুধবার বেলা পৌনে ১টার পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর একক বেঞ্চে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সবমিলিয়ে এ মামলায় ২৬ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য-জেরা শেষ হলেই বাকি থাকবে যুক্তিতর্কের ধাপ। পরে রায়ের তারিখ নির্ধারণ হবে। এ মামলার গ্রেফতার চার আসামি হলেন-শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। পলাতক আসামিরা হলেন-সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।
এদিকে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য ১২ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।
