Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

অচলায়তন

কর্মজীবী নারীর সন্তান ও সামাজিক বাস্তবতা

Icon

এনামুল হক বশির

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নারীকে চাকরি দেব কিন্তু সে মা হতে পারবে না। মা হবে এটা মেনে নিলেও মাতৃত্বকালীন ছুটি দিলেও সন্তান সঙ্গে আনা যাবে না। এমন একটা পরিবেশ প্রায় সব কর্মক্ষেত্রে বিরাজ করছে। কিন্তু কোনো নারী তা স্পষ্ট করে, চিৎকার করে বলতে পারবে না। যদি চাকরিটা চলে যায়।

কর্মক্ষেত্রে রাষ্ট্র নারী নিয়োগ দিলেও সে একদিন মা হবে এটা কি অজানা? নারী ডাক্তার হলে চিকিৎসা নেবেন, নার্স হলে সেবা নেবেন, শিক্ষক হলে শিক্ষা নেবেন, পাইলট হলে বিমান চালাবেন, ব্যাংকার হলে টাকার হিসাব কষবেন শুধু থাকবে না তার সন্তান।

সবার জেগে ওঠা দরকার। জানতে চাওয়া দরকার বাচ্চাটা থাকবে কোথায়, প্রতিষ্ঠান কেন তার নাগরিকের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। মাতৃত্বকে অবজ্ঞা করবেন না, তাহলে নিজের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। যেখানে ভিনদেশি নারীরা সন্তান কাঁধে নিয়ে সংসদে, সেখানে আমাদের কর্মস্থলে সন্তান থাকলে কর্মক্ষেত্রে কাজে ব্যাঘাত ঘটে। রাষ্ট্রের উচিত অনতিবিলম্বে সব প্রতিষ্ঠানে নারীর সন্তানের লালন-পালনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা। কাজের বুয়ার কাছে আলমারির চাবি রাখতে পারব না অথচ নিজের সন্তানকে রাখতে বাধ্য হচ্ছে সব নারী। অনেক কর্মজীবী নারীর ক্ষেত্রে সন্তান দেখাশোনার জন্য পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা বা নির্ভরযোগ্য বিকল্প না থাকায়, তারা কর্মক্ষেত্রে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, কারণ তারা সহায়তা পান না; যার ফলে তাদের ক্যারিয়ারের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

আমরা ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হিসাব রাখি, কর্মস্থলে নারীদের সংখ্যা কত বাড়ছে, সে হিসাব রাখি, কিন্তু কতজন মা বাচ্চা দেখাশোনার জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, তার হিসাব রাখি না। অনেক নারীকর্মী চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, এর সংখ্যা হয়তো উল্লেখ করার মতো নয়, সমাজে এর প্রভাব আসলে কতটুকু তাও আমরা জানি না। কিন্তু একজন নারীর কাছে এটা তিল তিল করে নিজের স্বপ্নের ওপর নিজেকে দাঁড় করিয়ে নিজেকে নিজে ছুড়ে ফেলে দেওয়া। এর জন্য দায়ী কে বা কারা? এ যে নারীবান্ধব নীতি, নারীবান্ধব কর্মস্থল, নারী স্বাধীনতা, আরও কতশত নারীর সুবিধার চটকদার খবর দেখতে পাই। প্রকৃত নারীবান্ধব হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, একজন মাকে সন্তানের দেখাশোনার জন্য দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার ছেড়ে দিতে হয়, যখন চাকরিজীবী মা হয়ে যায়, তখন আসলে বোঝা যায় এসব সুবিধা বাস্তবে কতটুকু কার্যকর। আমরা সুযোগকে সুবিধা বলছি, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। একটা উদাহরণ দিই-নারীর যাতায়াত-ভোগান্তি কমানোর জন্য বাসে নারীর জন্য আলাদা করে বসার জায়গা নিয়ে কত ধরনের ট্রল আর ঘৃণাভরা কথা, আপনি যতটা শুনতে পান, তা সমাজের মধ্যে থাকা অনুভবের সিকি ভাগও নয়। নারীকে কাজের মূল স্রোতে আনতে রাষ্ট্র যখন বসার এ আলাদা জায়গা করেছে, তখন পুরুষতান্ত্রিক মনগুলো সেটাও যেন মানতে পারছে না। বলতে থাকে সমান অধিকার চাইলে বসার ব্যবস্থা আলাদা হতে হবে কেন? বিভিন্ন বেসরকারি প্রজেক্টে মাতৃত্বকালীন ছুটি মাত্র ২ মাস। Project-এ ছুটি ৬ মাস ভোগ করতে পারে না। যার ফলে মা বাচ্চাকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে সম্ভব হয় না। ফলে কৃত্রিম দুধের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে বাচ্চার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বাচ্চাকে বাসায় রেখে এলে কাজে শতভাগ মনোযোগ দেওয়া যায় না। সরকারের আইন করা উচিত যেখানে নারীকর্মী বেশি সেখানে অবশ্যই উন্নতমানের Day care সেন্টার বাধ্যতামূলক করতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম