মেধাবী মুখ
রং-তুলির ছোঁয়ায় উজ্জ্বল আনুশা ও আলভীনা
শেখ আব্দুর রহিম
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেখতে হুবহু একই রকম! গায়ের রং বা কণ্ঠস্বর কিংবা চালচলনেও নেই কোনো ব্যতিক্রম। কিন্তু ক্ষুদ্র এ বয়সে হাতে রং-তুলি উঠলে যেন একেকটি তুলির আঁচড়ে প্রতিভার ঝড় তোলে ওরা। বলছিলাম মিরপুরের পল্লবীর যমজ দুই বোন আনুশা আমরীন খান ও আলভীনা তাবাসসুম খানের কথা। স্কুলপড়ুয়া এ দুই বোন ক্ষুদ্র বয়সেই হয়ে উঠেছে ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টার। দিনের পর দিন তাদের অর্জনের থলিতে বাড়ছে একের পর এক সম্মাননা।
আনুশা ও আলভীনা সহোদরার জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা একইসঙ্গে। পল্লবীর সরকারি চিকিৎসক দম্পতি ডা. শামশাদ জাহান সুমু ও ডা. মো. মোশফেকুর রহমান খানের যমজ মেয়ে ওরা। বর্তমানে ওরা পড়ছে ইংরেজি মাধ্যমের মাস্টার মাইন্ড স্কুলের নবম শ্রেণিতে। ওদের বয়সে যেখানে অনেক শিশু ডিভাইসে কার্টুন বা গেমে মত্ত, সেখানে পড়াশোনার অবসর পেলেই ওরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে অঙ্কনে। নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা ওদের প্রিয় শখ। শখের বাহানায় মাত্র ৬ বছর বয়স থেকে শুরু হয় ওদের অঙ্কনের হাতেখড়ি। কোনো রকম শিক্ষক ছাড়াই চিকিৎসক মায়ের অনুপ্রেরণায় শুরু ওদের যাত্রা। তবে কেউই জানত না ওদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভার কথা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ওদের অঙ্কিত ছবিতে ফুটে ওঠে পেশাদার শিল্পীদের ছাপ। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হয়েও ওরা বাংলার প্রকৃতির প্রতি বেশি আসক্ত। নিজেদের তুলির ছোঁয়ায় সেসবই ফুটিয়ে তোলে অকপটে। ওদের অঙ্কন শিল্পে স্থান পায় বাহারি পাতা, রঙিন ফুল, সবুজ গাছ, কালো পাহাড়, অকৃত্রিম ঝরনা, বয়ে চলা লেক, নীল আকাশ, আলোকোজ্জ্বল সূর্য, সুবিশাল সমুদ্রসহ প্রকৃতির নানা সৌন্দর্যের সমাহার। প্রকৃতির এসব বিষয়ে ছবি নৈসর্গিকভাবে ফুটিয়ে তোলার পেছনে আমেরিকার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া চাচাতো বোন সাকিরার দিকনির্দেশনা ওদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। ইতোমধ্যে ওদের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে নিজেদের স্কুল থেকে একাধিকবার পেয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার।
পেশাদার অঙ্কন শিল্পীদের ছবি প্রদর্শনীর (এক্সিবিশন) আয়োজনে পিছিয়ে নেই আনুশা ও আলভীনা। সবশেষ ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট ধানমণ্ডির শফিউদ্দিন শিল্পালয়ে দেশের অন্যতম বৃহত্তম ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পায় ওদের ২৫টি ছবি। সেসময় ওদের কিছু ছবি প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়।
নিজেদের বিষয়ে বলতে গিয়ে আনুশা ও আলভীনা জানায়, মায়ের ছাদবাগানের গাছপালা আামাদের ছবি আঁকার রস জোগায়। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান আমাদের অঙ্কনের রসদ। শখ থেকে আমাদের ছবি আঁকা শুরু। হৃদয়ের মাধুরী দিয়ে আঁকতে থাকি। আমাদের অঙ্কনে দর্শকদের প্রশংসা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
নিজেদের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ছোট্ট এ দুই শিল্পী আরও জানান, বড় হয়ে আমরা স্থপতি হতে চাই। আমরা যেন আমাদের স্থাপত্য দিয়ে দেশ ও দশের উপকার করতে পারি এটাই আমাদের লক্ষ্য।
ওদের মা ডা. শামশাদ জাহান সুমু বলেন, ওরা ছবি না আঁকলে হয়তোবা জানতামই না ওরা এত ভালো ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী। আমার এতই ভালো লাগে যে, বাসায় ওদের সেরা ছবিগুলোকে সযত্নে বাঁধাই করে রেখেছি। স্বীয় প্রচেষ্টা আর স্ব-প্রণোদিতভাবে প্রকৃতি নিয়ে আঁকা ওদের প্রতিটি ছবি যেন আমাকে মুগ্ধ করে। অবাক দৃষ্টিতে সেসব প্রাকৃতিক আলপনার দিকে তাকিয়ে থাকি অপলকে।
