অচলায়তন
বাল্যবিয়ে কি ফিরে আসবে
আনিকা তাহসিন
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের প্রথা এখনো ব্যাপকভাবে প্রচলিত, যা আমাদের শিক্ষিত সমাজের জন্যও ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করে। সম্প্রতি দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাংশ এমন ধারণা পোষণ করছেন যে, ১৫-১৬ বছরের মেয়েদের বিয়ে করা উচিত। এ ধরনের চিন্তাভাবনার পেছনে প্রথাগত ধারণা এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা কাজ করছে বলে মনে করেন অনেকে। কম বয়সে বিয়ে করলে ভার্জিন মেয়ে পাওয়া যায় এবং পারিবারিক সম্মান রক্ষা হয়-এমন ভাবনার লোকও সমাজে কম নয়। UNICEF-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মেয়েদের প্রায় ৫০-৫৫ শতাংশ ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়, যা ১৯৭০ সালের প্রায় ৯০ শতাংশ হারের তুলনায় কম হলেও এখনো এ সংখ্যা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ প্রথা এখনো প্রচলিত, যেখানে মেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয় এবং অনেকেই স্কুল জীবন শেষ করতেই পারে না।
বাল্যবিয়ে মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। কম বয়সে গর্ভধারণ ও প্রসবের সময় শারীরিক জটিলতা হয়, অনেক কিশোরী প্রসবের সময় মারাও যায়! মানসিকভাবে অপরিপক্ব মেয়েরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারা স্বামীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে নারী ক্রমে ঘরকুনো হয়ে যায়, যেখানে তার পড়াশোনা, কর্মসংস্থান বা নিজস্ব পরিচয়ের কোনো সুযোগ থাকে না।
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ‘নারীর মুক্তি তার শিক্ষা ও আত্মনির্ভরশীলতার মধ্যে নিহিত।’ বাল্যবিয়ে নারীর স্বাধীনতা কেড়ে নেয় এবং তাকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপে আটকে রাখে-এটি এক প্রকার নতুন ধরনের শাসন এবং দমন। বাল্যবিয়ে শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়, এটি নারীর অধিকার ও মানবিক মর্যাদা হরণের সরাসরি চিহ্ন। নারীরা এখন প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করছে। শিক্ষা, রাজনীতি, কর্মসংস্থান, সামাজিক সচেতনতায়-সবক্ষেত্রে আমরা যখন নারীদের বিজয় দেখতে পাই তখন বাল্যবিয়ের প্রচলন একটি দমনমূলক কৌশল হিসাবে প্রতীয়মান হচ্ছে, যা নারীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।
আমাদের আরও প্রতিবাদী হতে হবে। মেয়েরা যদি বাল্যবিয়ের শিকার হয়, আমাদের প্রতিটি স্তরে সোচ্চার হতে হবে। তাদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, আইনি সহায়তা ও সামাজিক সমর্থন দিতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোনো প্রথা ভেঙে দিতে হবে। নারীর অধিকার রক্ষা করা এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বেগম রোকেয়ার আদর্শকে অনুসরণ করে আমাদের বার্তা স্পষ্ট হতে হবে-নারী স্বাধীন হবে, শিক্ষিত হবে এবং তার জীবনকে নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ করবে। বাল্যবিয়ের নামে কারও ‘সম্মান’ বা পুরুষতান্ত্রিক স্বার্থ নারীর অধিকারকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
