গাজায় ‘আবাসন প্রকল্প’ যুক্তরাষ্ট্রের
২৫ হাজার মানুষের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে * শুধু ইসরাইল অনুমোদিত ফিলিস্তিনিরাই সেখানে থাকতে পারবে * যুদ্ধবিরতির পরেও ১৫০০ ভবন ধ্বংস * পশ্চিম তীরেও হামলা অব্যাহত, ৩ ফিলিস্তিনি নিহত * যুদ্ধবিরতির মাঝেই বেইত লাহিয়ায় বিমান হামলা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গভীর রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটে জর্জরিত গাজা নিয়ে একের পর এক পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কখনো ‘নতুন গাজা’ নির্মাণের প্রস্তাব, কখনো সীমান্তে ঘাঁটি নির্মাণ-এ নিয়েই তৈরি করা হচ্ছে নকশা। এবার গাজার একাংশে ফিলিস্তিনিদের জন্য বাড়িঘর (আবাসন প্রকল্প) তৈরির পরিকল্পনা করছে দেশটি। নতুন প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘অলটারনেট সেফ কমিউনিটিজ’। তবে ফিলিস্তিনিদের জন্য নির্মাণ হলেও সব ফিলিস্তিনিরাও আবার থাকতে পারেন না সেখানে। এসব বাড়িঘরে শুধু বাছাই করা ফিলিস্তিনিদেরই আশ্রয় দেওয়া হবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে প্রবেশের আগে ফিলিস্তিনিদের ‘হামাসবিরোধী’ মনোভাব প্রমাণের পরীক্ষাও দিতে হবে। মানবিক সহায়তার আড়ালে এ পরিকল্পনা ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্নও। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এ পরিকল্পনা গাজার বিভাজনকে আরও গভীর করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে ইসরাইল যে হলুদ রেখায় পিছিয়ে গেছে তার বাইরের উন্মুক্ত এলাকায় এসব ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হবে। গাজায় যুদ্ধবিরতির তত্ত্বাবধানে থাকা বেসামরিক-সামরিক সমন্বয় কেন্দ্রের প্রধান ও মার্কিন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্যাট্রিক ফ্র্যাঙ্কের এক ই-মেইলে এই প্রস্তাবটি উঠে আসে। ফ্র্যাঙ্ক তার ই-মেইলে লিখেছেন, প্রতিটি বসতিতে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, একটি স্কুল, একটি প্রশাসনিক ভবন এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। শুধুমাত্র ইসরাইলি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার অনুমোদিত ফিলিস্তিনিরাই সেখানে থাকতে পারবে। কারা অনুমোদন পাবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা বা না থাকা হবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। দ্য আটলান্টিকের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ‘বিকল্প নিরাপদ শহর’ গাজার দক্ষিণে রাফাহ অঞ্চলে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। এটি মিসর সীমান্তের কাছে। এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্টিভ উইটকফ এবং ইসরাইলি সরকার। তবে দ্য আটলান্টিক জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা প্রায় প্রতিদিনই বদলাচ্ছে। বসতিগুলোর নির্ধারিত জনসংখ্যাও ক্রমে পরিবর্তন হচ্ছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অনেক কর্মকর্তা, বিদেশি সরকার ও মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এতে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের মূল উদ্বেগ, এই কমিউনিটিগুলোতে যারা থাকবে, তারা হয়তো গাজার অন্য অংশে (হামাস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায়) যেতে পারবে না।
এদিকে যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে যাচ্ছে ইসরাইল। বুধবার গাজা উপত্যকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বেইত লাহিয়ায় তিনটি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। একই সঙ্গে, মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের পূর্ব দিকেও গুলির শব্দ শোনা গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, সেনাদের হামলায় বুধবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, এ পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী অন্তত ২৪৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এরই মধ্যে একই দিনে উত্তর গাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং খুলে দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সামাজিক বিষয়ক সংস্থা কোগ্যাট জানিয়েছে, জিকিম ক্রসিংটি মানবিক সহায়তা ট্রাক প্রবেশের জন্য খোলা হয়েছে। কোগ্যাটের মুখপাত্র জানিয়েছেন, দক্ষিণ গাজার কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের মতো এই ক্রসিংও স্থায়ীভাবে খোলা থাকবে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই ক্রসিং দিয়েই সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে, বিবিসি ভেরিফাইয়ের পর্যালোচনা করা স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, গত ১০ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার যেসব এলাকায় ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ ছিল সেখানে দেড় হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস করেছে ইসরাইল। সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ছবি তোলা হয়েছে গত ৮ নভেম্বর। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, এই ধ্বংস যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী লঙ্ঘন করতে পারে। তবে আইডিএফের মুখপাত্র দাবি করেছেন, তারা যুদ্ধবিরতি কাঠামো অনুযায়ী কাজ করছে।
