Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

রাজনীতি হোক দেশ ও গণমানুষের স্বার্থে

Icon

আব্দুন নূর

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনীতি হোক দেশ ও গণমানুষের স্বার্থে

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি হোক দেশ ও গণমানুষের স্বার্থে

সংগৃহীত ছবি

’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান এ দেশের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে যদি উলটো হয়, তাহলে গণমানুষের মুক্তি স্বৈরাচারী শিকলেই আবদ্ধ থাকবে। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ছিল, তা অস্বীকার করার জো নেই। ১৬ বছরের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে দলটি ধ্বংসের পথে আছে। দেশের মানুষকে শোষণ করতে কী করেনি ক্ষমতায় থাকা স্বৈরাচারী এ দলটি। নিপীড়ন-নির্যাতন, গুম-খুনের শাসন কায়েম করে গণমানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছিল, যাতে তাদের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ ভিন্নমত উচ্চারণ করতে না পারে। মানুষের অধিকার শকুনের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে বিতাড়িত স্বৈরাচারী সরকারপ্রধান। গ্রামগঞ্জে, শহর-নগরে পতিত আওয়ামী সরকারের পালিত শেয়াল-কুকুরের উৎপাতে এ দেশের মানুষ তার নাগরিক অধিকারের কথা ভুলে গিয়েছিল। ইউনিয়ন অফিসটা পর্যন্ত ঘুস-দুর্নীতির মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছিল। ন্যূনতম নাগরিক অধিকার ‘জন্মনিবন্ধন’ করতেও ঘুস দিয়ে তা করতে হতো। যাহোক ’২৪-এর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে যেন বিগত ১৬ বছরের কোনো স্বৈরাচারী চিহ্ন ফিরে না আসে, তা এ দেশের গণমানুষের প্রত্যাশা।

জুলাই-আগস্টের ভয়াবহ গণহত্যার পরও যদি সাধারণ মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে থাকে এবং রাজনীতিবিদরা যদি মানুষের কল্যাণের বদলে ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে পড়েন, সরকারি অফিস-আদালতের কর্মচারীরা যদি সততার পথ ছেড়ে দুর্নীতির পথ বেছে নেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চেয়ে স্বার্থসিদ্ধিকে প্রাধান্য দেন, রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা যদি দেশপ্রেমের বদলে স্বার্থপরতায় মগ্ন হন, কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুররা যদি ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়-তাহলে সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রের ভিত্তি নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠবে।

৮ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের দিকে দেশকে যাওয়ার। কিন্তু দেশের বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি গণমানুষের সে প্রত্যাশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এমনকি ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের প্রত্যাশাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। পুনরায় অযাচিত হামলা-মামলা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের উৎপাত, চোর-ডাকাতের উৎপাত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথ থেকে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারের সাধারণ মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে তৎপর থাকার কথা। কিন্তু আমরা দেখছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠিকঠাক কাজ করছে না। এমন অবস্থায় দেশের শান্তিশৃঙ্খলা, মানুষের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যে কোনো কৌশলে হোক, তা কাজে লাগাতে হবে।

এ দেশের মানুষ বহুকাল ধরে শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন, অন্যায়-অত্যাচার, গুম-খুন, চাঁদাবাজি, লুটপাট, দুর্নীতির শিকার হয়েছে, আর কত? দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল বলেই ’২৪-এর জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারী সরকারের দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য দল-মত নির্বিশেষে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল। দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়, এটুকুই চাওয়া-পাওয়া। বিকল রাষ্ট্রযন্ত্র মেরামতের পাশাপাশি মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তৎপর হতেই হবে। আবারও বলছি, এ দেশের সহজ-সরল সাধারণ মানুষ একটু শান্তিতে বসবাস করতে চায়। এখন পবিত্র রমজান মাস চলছে। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট যাতে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে এ রমজান মাসে অসাধু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করত। ভবিষ্যতে কোনো ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট যেন আর গড়ে না উঠতে পারে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

৫ আগস্টের পর জনমানুষের প্রত্যাশা ছিল দেশের রাজনীতির অঙ্গনে পরিবর্তন আসবে। রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও মানুষের জন্য রাজনীতি করবে, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার ভাষায় কথা বলবে। আতঙ্কের বিষয় হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর পাতি নেতারা পর্যন্ত প্রকাশ্যে এখন চাঁদাবাজি, জবরদখলসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। মানুষ দেশের এ সন্ধিক্ষণে এমন চাঁদাবাজির রাজনীতি প্রত্যাশা করে না। মানুষ চায় সুষ্ঠু গণতন্ত্রের রাজনীতি-যে রাজনীতি তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকবে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের তরুণ ছাত্রনেতৃত্বের হাত ধরে রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ আত্মপ্রকাশ করেছে। দলটির আহ্বায়ক হলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক নাহিদ ইসলাম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। দেশের মানুষের সামনে নানা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে দলটি আত্মপ্রকাশ করেছে। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ, দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা, দাসত্বমুক্ত বাংলাদেশ গড়া, পরিবারতন্ত্রমুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনীতিচর্চা, চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত জনকল্যাণমুখী রাজনীতি করার কথা বলছে তরুণদের দলটি। তাদের প্রতিশ্রুতিতে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা ফুটে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশের কলুষিত রাজনৈতিক অঙ্গনে সেসব প্রতিশ্রুতি দলটি ধরে রাখতে পারে কিনা, তা দেখার বিষয়। তরুণদের নতুন এ রাজনৈতিক দলকে ঘিরে আমজনতার প্রত্যাশাও কম নয়। জুলাই আন্দোলনে যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, তাদের জীবনদানের প্রত্যাশা যেন পূরণ হয়, নতুন দলের কাছে এমনটাই আশা মানুষের।

এ নিবন্ধের সার কথা হচ্ছে-জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে পুরোনো রাজনৈতিক কলহ, বিভাজন, ক্ষমতা দখলের রাজনীতি, স্বৈরাচারী মনোভাব, দুর্নীতি, অপশাসন, অপরাজনীতি, গণহত্যা, জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড, আইনের অপপ্রয়োগ, ক্ষমতার অনধিকারচর্চা, রাতের ভোট, নাগরিক অধিকার হরণ-এ দেশের জনগণ আর দেখতে চায় না। জনগণ চায় রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে।

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম