
সংগৃহীত ছবি
বছর ঘুরে জীবন গাঙে আবার নোঙর করল মুসলমানদের প্রিয়তম পবিত্র মাস রমজান। ত্যাগ ও সংযমের শাশ্বত বারতা নিয়ে জীবনচরে ফের তশরিফ আনল ধর্মভীরু মুসল্লিদের বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই ক্ষণ। যখনই রমজান আসে, তখনই ধরাধামে আসে জীবনের ব্যাপক রূপগত পরিবর্তন, পালটে যায় জীবনের গৎবাঁধা ছক। বদলে যায় জীবনের বৃত্তবন্দি অলিগলি। মনে মনে বয় ভিন্নানুভূতির স্রোত। তবে সেটা সব মনে নয়, কিছু মনে।
রূপগত পরিবর্তন নয়, প্রকৃতপক্ষে রমজান আমাদের জীবনের গুণগত পরিবর্তনের কথা বলে। বলে চিত্তশুদ্ধির কথা। গায় দৃষ্টি আর মনন শুদ্ধির গান। ছড়ায় ষড়রিপুর দাসত্বমুক্তির বাণী; কিন্তু সে কথায় আমাদের কতটুকু কর্ণপাত? সে বাণীতে আমাদের কতটাই বা মনপাত? সিংহভাগ ক্ষেত্রে উত্তরটা হবে ‘না’। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রমজান আমাদের কাছে আয়োজনেই সীমাবদ্ধ। সিংহভাগ ক্ষেত্রে রমজান আমাদের কাছে যেন কেবলি ‘পালনের বিষয়’, ‘লালনের বিষয়’ নয়।
রমজানে আমাদের কামতাড়িত বা জিঘাংসাতাড়িত পাপে (খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি প্রভৃতি) কিছুটা ভাটা পড়ে বটে, তবে ভাটা পড়ে না আচরণগত পাপে (গিবত, পরনিন্দা, মিথ্যা বলা, আমানতের খিয়ানত ইত্যাদি); ভাটা পড়ে না বুদ্ধিবৃত্তিক পাপে (অবৈধ মজুত, জালিয়াতি, পাইরেসি, জিনিসপত্রের অবৈধ মজুত, অতিরিক্ত দ্রব্যমূল্য আদায় ইত্যাদি)। এ সময় দান-খয়রাত, ফিতরা প্রদান প্রভৃতি চিত্র পরিবর্তনের শুভ ইঙ্গিত দিলেও, রমজানের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নেয় সব। বিদায় নেয় আমাদের মনে হঠাৎ জাগা ‘ডা. জেকিল’। সময় গড়াতেই সেখানে আবার ফিরে আসে আমাদের মজ্জাগত সত্ত্বা ‘মিস্টার হাইড’। ফের মোরা পরিণত হই, ম্যাকিয়াভেলীর সার্থক সন্তানে। আমার চোখে রমজানের সাফল্য এখানেই যে, মাসটা আমাদের কুপ্রবৃত্তিকে খুন করতে না পারলেও কিছু সময়ের জন্য তো গলা টিপে রাখে-অন্য ১১ মাসে যে তা অকল্পনীয়! এ ঘুণে ধরা সমাজে এতটুকুই বা কম কী?
প্রোপ্রাইটর, অনু’স রয়েল বিরিয়ানি হাউস, চট্টগ্রাম