
সংগৃহীত ছবি
ঢাকা মহানগরীতে যত্রতত্র যেভাবে অবৈধ নির্মাণ ছাড়পত্র পাচ্ছে, তাতে কোনটা কার ওপর হেলে পড়বে, তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় থাকছে। ডেভেলপাররা প্রকল্পের খরচ কমিয়ে বাড়তি লাভের আশায় মাটি পরীক্ষা ছাড়াই বিপন্ন করে তুলছে কাঠামোর ভবিষ্যৎ।
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকা শহরের মাটি এমনিতেই নরম, ভার বহনের ক্ষমতা তুলনায় কম, তার ওপর বিল-ঝিল, জলাজমি বুঝিয়ে ঘটে চলেছে একের পর এক অবৈধ নির্মাণ। অগভীর ভিতের বাড়ি অথবা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহারে তৈরি কাঠামোগুলো তাই হেলে পড়ছে অথবা ভেঙে পড়ছে তৈরি হওয়ার দশ-পনেরো বছরের মধ্যেই। একদিকে শহর অভিমুখী মানুষের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা শহর ফুলেফেঁপে শহরতলির মাঠ-ঘাট, জলাজমি বুঝিয়ে উন্নয়নের ফোয়ারা ছোটাচ্ছে যে যার মতো করে।
অন্যদিকে, শহরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য প্রকৃতি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে চলেছে। বড় বড় জলাশয় বুজিয়ে বহুতল ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে দিনদুপুরে। কয়েকশ বছর পেরিয়ে যাওয়া ঢাকার মানুষের ভয়াবহ জনঘনত্ব এবং বাড়ির সংখ্যাবৃদ্ধি উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে। তা সত্ত্বেও শহরের ধারণক্ষমতা ছাপিয়ে অবৈধ নির্মাণ হয়ে চলেছে সর্বত্র। একটাই প্রশ্ন, ঢাকা শহরের কোন এলাকায় কেমন ধরনের আবাসন ঝুঁকিহীনভাবে নির্মাণ করা সম্ভব, তার জন্য কোনো সমীক্ষা হয়েছে কি? তা তো আমাদের জানার কথা নয়।
তবে একটা কথাই স্পষ্ট যে, কঠোরভাবে অবৈধ নির্মাণে কিছুতেই লাগাম পরানো যাচ্ছে না বা পরাতে চাওয়া হচ্ছে না। কারণ একটাই, অবৈধ নির্মাণের বাস্তুতন্ত্রে প্রভাবশালীরাও জড়িয়ে আছেন। তা ছাড়া ঢাকা শহরের বহু এলাকা ভূমিকম্পের নিরিখে ঝুঁকিপ্রবণ। সতর্ক না হলে, আগামী দিনই বলে দেবে কী হবে, কী হবে না।
ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে বহুতল ফ্ল্যাট বা আবাসন তৈরি হওয়ার সময় নিম্নমানের মালমসলা ব্যবহারের কথা মাঝেমধ্যে শোনা যায়। ঢাকার মাটির নিচে থাকা পলিমাটির ভারবহন ক্ষমতা কম। এ ছাড়া ঢাকা শহরের বহু অংশে জলাজমি, নিচু জমি, মজে যাওয়া পুকুর, খাল বুজিয়ে নির্মিত হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। যে কোনো বাড়ি নির্মাণের সময় প্ল্যান অনুযায়ী বাড়ি হচ্ছে কিনা, তা দেখা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ যথাযথ হচ্ছে কিনা, তাও খুঁটিয়ে দেখা তাদের দায়িত্ব।
তা ছাড়া প্ল্যানবহির্ভূত কাজ ও ভালো মানের মালমসলা ব্যবহার করা না হলে তারা বাধা দেবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে গাফিলতির সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ডেভেলপার ঢাকা ও শহরতলিজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে কোথায় কোথায় বেআইনি বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তা খুঁজে বের করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
সাধারণ মানুষেরও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত। যখন কোনো অবৈধ নির্মাণ দিনের পর দিন চলতে থাকে, তখন কেউই প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন না। অথচ নির্মাণ হেলে বা ভেঙে পড়লে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে বহু নামিদামিদের কণ্ঠে, যেন এ দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলেন তারা। যে কোনো অবৈধ নির্মাণের দায় কমবেশি সবার।
অবৈধ নির্মাণের বাস্তুতন্ত্রে যুক্ত বাস্তুঘুঘুদের লালসার শিকার থেকে এখন উন্নয়নের চুন-সুরকিও বাদ যায় না। হায়রে কত না ফ্ল্যাট ভবন! আর এ ফ্ল্যাটগুলো বহু মানুষ বহু টাকা ব্যয় করে কিনছেন! ঢাকা শহরের বহুতল ফ্ল্যাটের ভবিষ্যৎ যে কি হবে, তা কেউ বলতে পারে না!
প্রাবন্ধিক, রূপনগর, ঢাকা